শুক্রবার, ৩ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

শবেবরাতের মোনাজাত

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

শবেবরাতের মোনাজাত

পৃথিবীজুড়ে এমন সংকট এর আগে কখনো এসেছে বলে মনে হয় না। রোগবালাই-মহামারী এসব তো প্রকৃতির ভাঙাগড়া খেলারই অংশ। প্রকৃতির নিয়ম হলো একদিকে ভাঙে তো অন্য দিকে গড়ে। এক অঞ্চলে মৃত্যুর মড়ক, অন্য দিকে জীবনের উচ্ছ্বাস। এভাবেই বিশ্ব লয়ে খেলছেন প্রভু নিজ মনে। মানবসভ্যতা উন্নত হলো। বিশাল পৃথিবীকে তারা বানিয়ে ফেলল ক্ষুদ্র গ্রাম। পৃথিবীর এ প্রান্তের একজন মানুষ মুহূর্তেই ওই প্রান্তের আরেকজন মানুষের সঙ্গে ভাববিনিময় করছে। ক্লোন মানুষ বানিয়ে আধুনিক বিজ্ঞানের পা যেন মাটিতেই পড়ে না। অবিশ্বাসীরা ধরেই নিয়েছে, পৃথিবীতে বুঝি আল্লাহর কর্তৃত্ব-রাজত্ব কমে আসছে। আজ থেকে পাঁচ বছর আগে কোরআন গবেষক সুফি ছড়াকার হাফেজ আহমাদ উল্লাহ কথা প্রসঙ্গে বলেছিলেন, আজ তোমাদের বিজ্ঞান সাফল্যের স্বর্ণশিখরে অবস্থান করছে। আগামী পনের বছরের মধ্যে দেখবা, গর্ব করার মতো তাদের আর কিছুই থাকবে না। সব দম্ভ ভেঙে যাবে।’ কারণ হিসেবে তিনি কোরআনের একটি অমোঘ সূত্র উল্লেখ করেছেন। সূত্রটি হলো, কোনো কিছু যখন চূড়ান্ত উচ্চতায় পৌঁছে যায়, তখনই তাকে নিচে নামতে হয়।’ এ মুহূর্তে ঠিক মনে পড়ছে না আহমাদ উল্লাহ সাহেব কোন আয়াতটি বলেছিলেন। তবে সূরা ত্বিনে আল্লাহ বলেছেন, ‘লাকাদ খালাকনাল ইনসানা ফি আহসানি তাকউয়িম। ছুম্মা রাদাদ নাহু আসফালা সাফিলিন। অর্থাৎ, সবচেয়ে আশ্চর্য রহস্যময় সৃষ্টি মানুষকে আমি পরিপূর্ণ উৎকর্ষতায় পৌঁছে দিই। যখন সে সাফল্যের সর্বোচ্চ চূড়ায় ওঠে, তখনই তাকে আবার নিচে নামিয়ে আনি।’ একেবারে উপরের সিঁড়ির পর আর কোনো সিঁড়ি থাকে না বলেই তাকে আবার নামতে হয়। মানুষ যখন উপরে উঠে যায়, তখন সে অহঙ্কারে ফেটে পড়ে। অহঙ্কারের ডানা ভাঙার জন্যও নিচে নামাতে হয়।

অস্বীকারের উপায় নেই, বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষতার ফলে মানুষ স্রষ্টাকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে আসছে গত ১০০ বছর ধরে। তাই আল্লাহতায়ালা করোনা ভাইরাসের মাধ্যমে বুঝিয়ে দিলেন, হে মানুষ! তোরা এখনো এদো বিলের চুনোপুঁটিই হয়ে আছিস। আমার বিশ্বসমুদ্রের বেলাভূমি তো চোখেই দেখিসনি। মজার ব্যাপার হলো, মানুষ যেমন বিশ্বকে হাতের মুঠোয় নিয়ে এসেছে, আল্লাহও করোনাভাইরাসকে বিশ্বময় ছড়িয়ে দিয়েছেন। শুরুতেই যেটা বলছিলাম- আগে মহামারী হতো নির্দিষ্ট এলাকায়, আর এখন মহামারী ছড়িয়ে পড়েছে পুরো বিশ্বে। পৃথিবীতে বহু সভ্যতা, বহু জাতি, বহু প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে গেছে। আধুনিক মানবসভ্যতা অর্থাৎ আমরা যে বিলুপ্ত হব না তার গ্যারান্টি কোথায়? কোরআনে কিন্তু এমন হুঙ্কার স্পষ্টভাবেই বলা আছে। প্রসঙ্গত বলা জরুরি, বিলুপ্ত সভ্যতা আদ-সামুদের প্রযুক্তির ধারেকাছেও পৌঁছতে পারিনি আমরা। এটা তাদের ধ্বংসাবশেষ দেখেই স্বীকার করেছেন বিজ্ঞানীরা। তবে আমরা বোধহয় অহঙ্কার আর দাম্ভিকতায় আগের সব জাতিকে ছাড়িয়ে গেছি। যে কারণে আল্লাহতায়ালা সামান্য সর্দি-কাশি দিয়েই আমাদের অসহায়ত্ব চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন। বিশ্বসম্রাট নমরুদ যেমন সামান্য একটি লেংড়া মশার কামড়ে চির অপমানিত হয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছে, তেমনি আজকের আধুনিক সভ্যতার মানুষও ঠুনকো সর্দি-কাশি দেখে হাতপা ছেড়ে সাপের মতো গর্তে গিয়ে লুকিয়ে পড়েছে।

অবস্থা যখন এতটা নাজুক, তখন পৃথিবীবাসীর কাছে বরকতময় রজনী শবেবরাত এসেছে। শবেবরাতের এক অর্থ হলো সৌভাগ্য রজনী। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘এ রাতে আল্লাহতায়ালা কাছাকাছি আসমানে এসে কোমল মায়াবি স্বরে ডাকতে থাকেন, ক্ষমা চাওয়ার কে আছো? রোগমুক্তি কে চাইবে? পবিত্র রিজিক কার প্রয়োজন? আমার কাছে চাও। আমি দেবো।’ বিশ্ববাসীর জন্য এটি একটি সুবর্ণ সুযোগ। আমাদের বরাত ফেরানোর জন্য এ রাতে দুই ফোঁটা চোখের পানি ঝরিয়ে মুনাজাত করতে পারলে আশা করা যায় খোদাতায়ালার রহমতের ধারা নেমে আসবে পৃথিবী নামক এ গ্রহে। মনে রাখতে হবে, বহু জাতি ধ্বংস হয়ে গেছে, আমাদের ধ্বংসের আলামত কোরআনে বলা আলামতের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে। বহু প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে গেছে, মানুষ নামক প্রাণীর বিলুপ্তির হুমকিও কোরআনে স্পষ্ট বলা আছে। এখনো যদি আমরা অহঙ্কারের পোশাক খুলে প্রভুর কাছে আত্মসমর্পণ না করি, এখনো যদি আমরা বিনয়-প্রেমকে আমাদের অভ্যাসে পরিণত না করি, তাহলে অতীতের অহঙ্কারী জাতির সঙ্গে যা ঘটেছে, আমাদের সঙ্গেও তাই ঘটবে। হে আল্লাহ! এ বরকতময় রজনীতে আপনার কাছে আমরা ক্ষমা-মুক্তি এবং সৌভাগ্য প্রার্থনা করছি। আপনি আমাদের বাঁচান। এ গ্রহকে বাঁচান।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর