মঙ্গলবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

তরুণ সমাজকে সজাগ থাকতে হবে

ড. এ কে আজাদ চৌধুরী

তরুণ সমাজকে সজাগ থাকতে হবে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরী বলেছেন, সাম্প্রদায়িক সংঘাত, সংঘর্ষ ও ধর্ম অবমাননা- এসব কিছুই আমাদের সংস্কৃতির বাইরের অংশ। আমাদের সংস্কৃতির অন্তর্নিহিত সত্যের বিপরীতে। হঠাৎ কেন সহিংসতার জন্ম নিল সেটাই বোঝা যাচ্ছে না। আমার ধারণা, হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কেউ বা কারা সুকৌশলে এটা করে থাকতে পারে। দুর্গাপূজায় অনাকাক্সিক্ষত সাম্প্রদায়িক সহিংসতা শক্ত হাতে দমন করায় সরকারকে ধন্যবাদ। ভবিষ্যতে যাতে এমন ঘটনা ঘটতে না পারে এজন্য সরকারের পাশাপাশি সচেতন জনগণ ও তরুণ সমাজকে সজাগ থাকতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক এই চেয়ারম্যান গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে আরও বলেন, আমরা স্বাধীনতাযুদ্ধ করেছি অসাম্প্রদায়িক চেতনা থেকে। শতবর্ষেরও বেশি সময় ধরে এই ভূখন্ড অসাম্প্রদায়িক চেতনা লালন করছে। ১৯২১ সালে যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হয় তখন ব্রিটিশরা বলেছিল, বঙ্গভঙ্গ করার খেসারত হিসেবে মুসলমানদের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দেওয়া হলো। কিন্তু চালুর কয়েক বছরের মধ্যেই দেখা গেল ৮০ ভাগ ছাত্র-শিক্ষক হিন্দু ধর্মাবলম্বী। কারণ তারা একাডেমিক্যালি এগিয়ে ছিলেন, আর্থিক অবস্থাও ভালো ছিল। একটা উদার অসাম্প্রদায়িক চেতনায় চালু হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এই ভূখন্ডের প্রতিটি আন্দোলন অসাম্প্রদায়িক। ১৯২৬ সাল থেকে শুরু হওয়া বুদ্ধিমুক্তির আন্দোলনও ছিল ধর্মনিরপেক্ষ। ধর্মের ভিত্তিতে দেশ ভাগের পর ১৯৪৭ সালের শেষের দিকে ভাষার ওপর আক্রমণ শুরু হলে দেশের তরুণ সমাজ বাংলাভাষার জন্য ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। জীবন দিয়েছিল। ভাষার আন্দোলন, অসাম্প্রদায়িক চেতনা, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের আদর্শিক অবস্থান। সেই দেশে সাম্প্রদায়িক শক্তি মানুষের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টির চেষ্টা করে, এটা ধিক্কারজনক। কঠোর হাতে এটা দমন করা উচিত। তিনি বলেন, কারা এই সহিংসতার পেছনে আছে জানি না। তবে বাংলাদেশ ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র নয়। এটা বাঙালি জাতীয়তাবাদের চেতনার রাষ্ট্র। সবাই আমরা বাঙালি। যার যার ধর্ম সেই সে পালন করবে। কিন্তু সংস্কৃতি, আনন্দ, উৎসব সবার। আমাদের একটা স্লোগান আছে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও যেটা বলেন, ‘ধর্ম যার যার, আনন্দ-উৎসব সবার’। আমরা সেটাই তো চাচ্ছিলাম দুর্গাপূজায়। কিন্তু হঠাৎ কেন সহিংসতার জন্ম নিল সেটাই বোঝা যাচ্ছে না। তবে এ দেশের গণতান্ত্রিক চেতনার প্রগতিশীল ও অসাম্প্রদায়িক চিন্তা-চেতনার বাঙালিরা আবারও রুখে দাঁড়াবে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে। কেউ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ধর্মকে হেয় করতে নানা প্রপাগান্ডা, প্রচারণা বা ডিজিটাল মিডিয়া ব্যবহার করে আমাদের মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করতে পারে। এ ব্যাপারে আমাদের সজাগ থাকতে হবে।

অধ্যাপক আজাদ চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধু যে দেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন, তার ভিত্তি ছিল আমাদের অসাম্প্রদায়িক চিন্তা-চেতনা, ধর্মনিরপেক্ষতা, মানবতাবাদ, বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও সমাজতন্ত্র। এই সবগুলোর ভিত্তি উদার মানসিকতার। যেই দেশ বাঙালি হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করে স্বাধীন করল, সেই বাংলাদেশে এক ধর্মের মানুষ অন্য ধর্মের মানুষকে হনন করবে, সংঘর্ষ বাধাবে এটা মেনে নেওয়া যায় না। আমাদের জনপ্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে এগিয়ে নিতে তরুণ ও যুবসমাজকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। যে কোনো সাম্প্রদায়িক ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে। আমাদের সচেতন জনসমাজ ও খেটে খাওয়া মানুষেরা এই সাম্প্রদায়িক ঘটনাকে প্রত্যাখ্যান করেছে, ভবিষ্যতেও করবে। ছাত্র-ছাত্রী ও যুবসমাজ এটাকে ঘৃণা ও প্রত্যাখ্যান করে জাতিকে পথ দেখাবে। তারাই এগিয়ে নিতে পারবে অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশকে। আমরা সবাই মিলে এটাকে প্রতিরোধ করব।

সর্বশেষ খবর