রবিবার, ২ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা

ফরেনসিক দক্ষতা প্রাথমিক পর্যায়ের

শিরীন হক

ফরেনসিক দক্ষতা প্রাথমিক পর্যায়ের

‘সহিংসতার শিকার নারী এখন তাদের প্রতি হওয়া অবিচার মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে তৎপর। আবার অনেক ক্ষেত্রে নির্যাতনের শিকার নারী তার পরিবারের সমর্থনও পাচ্ছেন। থানা পর্যন্ত অভিযোগ দায়ের করার বিষয়টি হয়তো ভুক্তভোগী নারীরা অর্জন করতে পেরেছেন। কিন্তু তদন্ত থেকে শুরু করে বাকি যে প্রক্রিয়া যেমন অভিযোগ গঠন ও বিচারিক কাজের জন্য আদালতের অন্য প্রক্রিয়া এসব জায়গায় এখনো ফল আশানুরূপ নয়। কারণ এত কিছুর পরও আমাদের ফরেনসিক দক্ষতা খুবই প্রাথমিক পর্যায়ের।’ নারীপক্ষ-এর সদস্য ও প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক শিরীন হক গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এসব বলেন। শিরীন হক বলেন, ‘আমাদের পুলিশের ফরেনসিক দক্ষতা বৃদ্ধি পায়নি। আমরা অনেক লড়াই করে একটি ডিএনএ ল্যাব করিয়েছিলাম। এতে কিছুটা উপকার হয়েছে। কিন্তু ফরেনসিক দক্ষতা শুধু ডিএনএ ল্যাবের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, এর সঙ্গে আরও অনেক কিছু জড়িত।’ এই নারী আন্দোলন কর্মী বলেন, ‘নারীর ওপর যে সহিংসতা হয় এবং চলছে এর ভাষা এখন পর্যন্ত বদলাতে পারিনি। এখনো যৌন সহিংসতার ক্ষেত্রে নারীর ইজ্জত-সম্ভ্রম সব নিয়ে আসা হয়। সেটা ’৭১-এর বীরাঙ্গনাদের ক্ষেত্রেই হোক বা বর্তমানে কোনো নারীর যৌন সহিংসতার শিকারের ক্ষেত্রেই হোক। সবাইকেই একই পরিস্থিতির শিকার হতে হয়। প্রশ্ন হচ্ছে, ধর্ষণের শিকার হলে সেই নারীর ইজ্জত কেন যাবে! ভাষা প্রয়োগের ক্ষেত্রে এক ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়েই যাচ্ছে। আমাদের ভাষার ক্ষেত্রেও লড়াইটা করতে হবে। ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রে শুধু শব্দ নয়, এর সঙ্গে জড়িত গোটা মানসিকতা, দৃষ্টিভঙ্গি ও চিরাচরিত কতগুলো মূল্যবোধ। একজন নারী যে ধর্ষণের শিকার হন তিনিও মনে করেন যে তার বুঝি সব শেষ। এই শব্দের জায়গা থেকে নারীদের টেনে বের করতে হবে। তাদের এ ব্যাপারে স্পষ্ট হতে হবে- যে ধর্ষণ করেছে তার ইজ্জত বা সম্ভ্রম গিয়েছে, নাকি যে ধর্ষণের শিকার হয়েছে তার গিয়েছে। আর লড়াইটা যেহেতু ভাষার এজন্য নারীপক্ষ থেকে আমরা ২০২২ সালে এ নিয়ে ধারাবাহিকভাবে পোস্টার করছি, যেখানে ভাষা পরিবর্তনের বিষয়ে মনোযোগ আকর্ষণ করা হবে।’ তিনি বলেন, এখন নারী নির্যাতনসংক্রান্ত অনেক ইস্যুতেই মামলা হচ্ছে। লজ্জা পেয়ে চুপ করে থাকা কিংবা প্রতিবেশীরা কী বলল এসব চিন্তা করে পিছিয়ে যাওয়ার মানসিকতা বদলেছে। আবার ভুক্তভোগীর অভিভাবকরাও এখন আগের চেয়ে অনেক সচেতন। নারীদের নিরীহ ভিকটিম মনে করার চিন্তা-ভাবনার দিন শেষ। শিরীন হক বলেন, ‘আমরা মেয়েদের সাহস দিয়েছি যে কোনো কিছু মুখ বুজে সহ্য করবে না, তাদের অভিযোগ করতে শিখিয়েছি। তাই এখন তারা থানা পর্যন্ত যাচ্ছে এবং যাওয়া শুরু করেছে। কিন্তু থানায় যাওয়ার পরও নির্যাতনের শিকার নারী কাক্সিক্ষত ফল পাচ্ছে না, ন্যায়বিচার পাচ্ছে না। এসব জায়গায় এখনো অনেক চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে।’

সর্বশেষ খবর