স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, শাহ আহমদ শফী সাহেবকে সারাদেশের আলেম সমাজ অত্যন্ত সম্মান করেন। তিনি অত্যন্ত জনপ্রিয়। আমি চট্টগ্রামে একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে হুজুরের অসুস্থ্যতার কথা শুনে তাকে দেখতে গিয়েছি। আমাদের প্রধানমন্ত্রী কওমি মাদ্রাসার সনদের স্বীকৃতি দিয়েছেন। কওমি মাদ্রাসার স্বীকৃতির দিন তিনি গণভবনে ছিলেন। তিনি কওমী মাদ্রাসা বোর্ডের চেয়ারপার্সন। আমরা তাকে গণভবনে ডেকে অফিসিয়ালি স্বীকৃতি দিয়েছি। কওমি মাদ্রাসার স্বীকৃতি দিয়েছি।
জাতীয় সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে রবিবারের প্রশ্নোত্তর পর্বে জাসদের সংসদ সদস্য নাজমুল হক প্রধানের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি। এর আগে জঙ্গীবাদের প্রতি ইঙ্গিত করে হেফাজতে ইসলামের আমির শাহ আহমদ শফীর সঙ্গে চট্টগ্রামে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাক্ষাৎ নিয়ে সংসদে প্রশ্ন তুলে জাসদ এমপি জানতে চান, এ সাক্ষাৎ কী শুধুই সাক্ষাৎ, নাকি ‘কী আশায় বাধি খেলাঘর বেদনার বালুচরে’!
জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, শাহ আহমদ শফী সাহেবকে সারাদেশের আলেম সমাজ অত্যন্ত সম্মান করেন। শুধু আলেম সমাজ না, যারা মসজিদ, মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেন কিংবা মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিন তাদের কাছেও অত্যন্ত সম্মানীত ব্যক্তি তিনি। সেদিন আমি পাশেই এক জায়গায় একটি অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম, তার অসুস্থতার সংবাদ শুনে ওই জায়গায় গিয়েছি। আসাদুজ্জামান আরও বলেন, আমি মনে করি কওমি মাদ্রাসার লাখ লাখ ছাত্র-শিক্ষক যারা ধর্মের জন্য পড়াশুনা করছেন, সময় দিচ্ছেন তাদের জন্য আমাদের কিছু করা উচিত। সেটা আমাদের প্রধানমন্ত্রী উপলব্ধি করেছেন। তিনি কওমী মাদ্রাসার স্বীকৃতি দিয়েছেন। এজন্য সারাদেশের মানুষ প্রানমন্ত্রীকে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।
এদিকে, সরকারি দলের আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইন এক সম্পূরক প্রশ্নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন বলেন, পুলিশ, সশস্ত্র বাহিনী বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পক্ষে হলে দেশ চলছে কীভাবে?
প্রশ্নকর্তা বলেন, খালেদা জিয়া শনিবার দলের সভায় বলেছিলেন, বিএনপির কোনো ভয় নেই। বিএনপির সঙ্গে প্রশাসন আছে, পুলিশ আছে, সশস্ত্র বাহিনী আছে। এ দেশের জনগণ আছে। দেশের বাইরে যারা আছেন, তারা আছেন। সামনে রায় এ বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে?
জাবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মামলায় রায়ের পর বিএনপি কোনো ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিচারক জানেন, কী রায় দেবেন। কিন্তু কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নিলে, অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বা ভাংচুর করলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। এসময় বিএনপি নেতা-কর্মীদের গণগ্রেপ্তারের অভিযোগও নাকচ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যারা পুলিশের ভ্যান ভাংচুর করেছিল, ভিডিও দেখে তাদের শনাক্ত করা হচ্ছে, গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
সরকার দলীয় মহিলা এমপি ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরার সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, গত ৩০ জানুয়ারি খালেদা জিয়ার গাড়ি বহরের সামনে থেকেই পুলিশের ওপর অতর্কিত হামলা করা হয়েছে। সেদিন তারা অতর্কিত হামলা করে পুলিশের প্রিজন ভ্যান ভাঙচুর করে। পুলিশের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে পুলিশের দুটি রাইফেল ভেঙেছে, পুলিশের প্রিজন ভ্যান ভাঙচুর করেছে। সেদিনের ভিডিও ফুটেজ দেখে হামলাকারীদের শনাক্ত করা হচ্ছে। শনাক্ত করে তাদের সবাইকে আইনের মুখোমুখি করা হবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, যখন ঘটনাটি ঘটে ঠিক তখনই বিএনপি চেয়ারপারসন সেই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। তার সামনের বহর থেকেই ঘটনাটি ঘটে। আমাদের পুলিশ অত্যন্ত ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছে। ভিডিও দেখে জড়িতদের শনাক্ত করা হচ্ছে।
এর আগে মামুনুর রশীদ কিরণে ( নোয়াখালী-৩) তারকা চিহ্নিত প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন বলেন, মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের ধারাবাহিক অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বাংলাদেশ মিয়ানমার সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দেয়ার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত দিয়ে অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধ, মাদকদ্রব্যসহ অন্যান্য চোরাচালান প্রতিরোধ, বিভিন্ন প্রকার সীমান্ত অপরাধ দমন এবং দেশের অভ্যন্তরীণ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার প্রাথমিক পর্যায়ে মিয়ানমারের সীমান্ত এলাকায় শাহপরী দ্বীপ হতে ২৭১ কি. মি. রিং রোডসহ কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে- যা পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হবে।
বিডি-প্রতিদিন/০৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮/মাহবুব