২০১৩ সালে শুরু হওয়া এক রহস্যময় রোগে উত্তর আমেরিকার প্রশান্ত মহাসাগর উপকূলে প্রায় পাঁচ বিলিয়ন স্টারফিশ (সাগরের নীচে বসবাসকারী তারার মতো আকৃতির প্রাণী) মারা যায়। দশ বছরের গবেষণার পর অবশেষে বিজ্ঞানীরা জানাতে পেরেছেন, এই গণমৃত্যুর জন্য দায়ী একটি ব্যাকটেরিয়া, যার নাম ভিব্রিও পেকটেনিসিডা।
এই ব্যাকটেরিয়া স্টারফিশের শরীরে ক্ষত তৈরি করে, পরে তাদের বাহু (হাতের মতো অংশ) পড়ে যেতে থাকে। এমন পরিস্থিতিকে বিজ্ঞানীরা ‘ওয়েস্টিং ডিজিজ’ বা ক্ষয়জনিত রোগ নামে চিহ্নিত করেছেন। রোগটি সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে সানফ্লাওয়ার সি স্টার নামে এক প্রজাতির, যাদের ৯০ শতাংশই প্রথম পাঁচ বছরে মারা গেছে।
এই ব্যাকটেরিয়া আগেও শামুক বা ঝিনুকজাতীয় প্রাণীতে দেখা গেছে। কিন্তু স্টারফিশের ক্ষেত্রে এটি চিহ্নিত করতে এত সময় লেগেছে কারণ আগের গবেষণাগুলো মৃত প্রাণীর দেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছিল, যেখানে ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি আর থাকে না। তবে নতুন গবেষণায় বিজ্ঞানীরা স্টারফিশের দেহের ভিতরের তরল (কোইলমিক ফ্লুইড) বিশ্লেষণ করে সঠিক ব্যাকটেরিয়া শনাক্ত করতে পেরেছেন।
গবেষণায় যুক্ত বিজ্ঞানীরা এখন ভাবছেন, সুস্থ স্টারফিশগুলোকে সংরক্ষণ করে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলে পুনরায় ফিরিয়ে দেওয়ার উপায় খোঁজা যেতে পারে। এমনকি কোনো কোনো প্রজাতির মধ্যে প্রাকৃতিক প্রতিরোধ ক্ষমতা (ইমিউনিটি) রয়েছে কিনা, সেটিও পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। পাশাপাশি প্রোবায়োটিকস (উপকারী জীবাণু) ব্যবহার করে রোগ প্রতিরোধ বাড়ানোরও চেষ্টা হতে পারে।
স্টারফিশ শুধু নিজের অস্তিত্বের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয়, তারা সামুদ্রিক পরিবেশেও বড় ভূমিকা রাখে। যেমন সানফ্লাওয়ার সি স্টার অতিরিক্ত সি আরচিন খেয়ে সাগরের ভারসাম্য রক্ষা করে। কিন্তু স্টারফিশ কমে যাওয়ায় সি আরচিন দ্রুত বেড়ে যায় এবং তারা কেল্প ফরেস্ট (সমুদ্রের নিচের শৈবাল বন) ধ্বংস করতে শুরু করে। ফলে মাছ, সামুদ্রিক উটপাখি, সীল সহ নানা প্রাণীর খাদ্য ও বাসস্থান হারিয়ে যাচ্ছে।
গবেষকরা আশাবাদী, নতুন এই গবেষণার মাধ্যমে স্টারফিশ সংরক্ষণ এবং হারিয়ে যাওয়া কেল্প ফরেস্ট পুনরুদ্ধারের কাজ আরও কার্যকরভাবে এগিয়ে নেওয়া যাবে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল