২০ অক্টোবর, ২০২০ ১০:৫৭

আগ্রহ হারাচ্ছে কেন ভোটাররা

গোলাম রাব্বানী

আগ্রহ হারাচ্ছে কেন ভোটাররা

মানুষ দিন দিন ভোটের প্রতি আগ্রহ হারাচ্ছে। সংসদের উপনির্বাচন, সিটি করপোরেশন, উপজেলা, ইউনিয়ন পরিষদসহ বিভিন্ন নির্বাচনে শূন্য থাকছে ভোট কেন্দ্র। ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে যাচ্ছেন না। কেন ভোটার ভোট দিতে যাচ্ছেন না? এমন প্রশ্ন এখন সবার মুখে মুখে। বিশেষ করে গত ১৭ অক্টোবর ঢাকা-৫ আসনের উপনির্বাচনে মাত্র ১০ দশমিক ৪৩ শতাংশ ভোট পড়ায় এমন প্রশ্ন সৃষ্টি হয়েছে। তবে শুধু ঢাকা-৫ আসনেই ভোট কম পড়েছে বিষয়টা এমন নয়!

নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলছেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলছেন ভোটাররা। নির্বাচন কমিশন এবং ভোটদান প্রক্রিয়ার ওপরেও ভোটারদের আস্থা নেই। এছাড়া নির্বাচনে যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকার কারণেই বিভিন্ন নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কম। এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, মানুষের নির্বাচন প্রক্রিয়ার ওপর আস্থাহীনতার সৃষ্টি হয়েছে। এ জন্যই মানুষ ভোট দিতে ভোট কেন্দ্রে যাচ্ছে না।

নির্বাচন বিশ্লেষক ও ব্রতীর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন মুরশিদ বলেছেন, নির্বাচন প্রক্রিয়া ধসে গেছে। মানুষ বিশ্বাস করে না, ‘নির্বাচন কমিশন একটি অবাধ-নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে পারবে। ভোটাররা নিরাপদে ভোট দিতে পারবেন।’ এসব কারণেই মানুষ ভোট দিতে যাচ্ছে না।

গত ১৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত নওগাঁ-৬ আসনের ভোটের হার কিছুটা সন্তোষজনক হলেও ঢাকা-৫ আসনের ভোটের হার কম। ঢাকা-৫ আসনে চার লাখ ৭১ হাজার ৭১ ভোটের মধ্যে ৪৯ হাজার ১৪১ ভোট পড়েছে। ভোট প্রদান মাত্র ১০ দশমিক ৪৩ শতাংশ। এদিকে নওগাঁ-৬ আসনে তিন লাখ ছয় হাজার ৭২৫ ভোটের মধ্যে ৩৬ দশমিক ৪ শতাংশ। ভোটের হারের দিক থেকে নওগাঁ-৬ আসনে কিছুটা সন্তোষজনক হলেও করোনাকালে ব্যালট পেপারে অনুষ্ঠিত যে কোনো আসনের তুলনায় এর হার অনেক কম। করোনাকালে ব্যালটে অনুষ্ঠিত ভোটের মধ্যে সবচেয়ে কম ভোট পড়েছে বগুড়া-১ আসনে, ৪৫ দশমিক ৬ শতাংশ। করোনা সংক্রমণের পাশাপাশি নির্বাচনের সময় সেখানে প্রবল বন্যাও ছিল। 

ঢাকায় তুলনামূলকভাবে কম ভোট পড়ার বিষয় নির্বাচন কমিশন বলছে, করোনাকালে ফিঙ্গারপ্রিন্টে বেশি স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে এমন তথ্য প্রচারের ফলে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক কাজ করেছে। সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক করেছে। সে বৈঠকেও এ বিষয়টি আলোচনা হয়। ওই বৈঠকে অভিযোগ করা হয়, স্বাস্থ্যঝুঁকি থাকার করার কারণে ঢাকা-১০ আসনে ভোটাররা ভোট দিতে আসেননি। এ জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কেও দায়ী করা হয়। অপরদিকে নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, জালভোটসহ কারচুপির বেশি সুযোগ থাকার কারণে ব্যালটে বেশি ভোট পড়েছে। সেই তুলনায় ইভিএমে এই সুযোগ কম থাকায় কাস্ট কম হয়েছে। দেশে করোনা সংক্রমণের শুরুর দিকে ২১ মার্চ ঢাকা-১০ আসনের উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই আসনের ভোটসংখ্যা ৩ লাখ ২১ হাজার ২৭৫। ভোট পড়ে মাত্র ৫ দশমিক ২৮ শতাংশ। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন ১৫ হাজার ৯৯৫ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। বিএনপির প্রার্থী শেখ রবিউল আলম ধানের শীষ প্রতীকে পান ৮১৭ ভোট এবং জাতীয় প্রার্থীর হাজী মো. শাহজাহান ৯৭ ভোট পান।

করোনা সংক্রমণের আগে এ বছর ১৩ জানুয়ারি চট্টগ্রাম-৮ উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ইভিএমে অনুষ্ঠিত ওই ভোটে ৪ লাখ ৭৪ হাজার ৪৮৫ ভোটের মধ্যে ২২ দশমিক ৯৪ শতাংশ  কাস্ট হয়। এর আগে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে মেয়র পদের উপনির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো কম ছিল।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর