চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) নতুন দিনের শুভ সূচনা ঘটেছে। কৌশলগত বিনিয়োগকারী (স্ট্র্যাটেজিক পার্টনার) হিসেবে সিএসইর সঙ্গে এবিজি লিমিটেডের চুক্তি সইয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়েছে। সিএসইর পক্ষে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. গোলাম ফারুক এবং এবিজি লিমিটেডের পক্ষে ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীর চুক্তিতে সই করেন। এ উপলক্ষে ২০ নভেম্বর সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের পাঁচতারা হোটেল র্যাডিসন ব্লু বে ভিউয়ে বসেছিল তারার মেলা।
এবিজি লিমিটেড দেশের শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান। সিএসইর ২৫ শতাংশ শেয়ার কেনার মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি এই পুঁজিবাজারের মালিকানায় কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হলো। পুঁজিবাজারে সার্বিক উন্নয়ন ও কার্যকর সমৃদ্ধির লক্ষ্যে এবিজি লিমিটেড বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে, যা পুঁজিবাজারকে আরো সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী করতে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখবে। এদিন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সরকারের মন্ত্রী, উপমন্ত্রী, মেয়র, শীর্ষ ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা, সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিশিষ্টজনেরা। তাঁরা এই চুক্তিকে ঐতিহাসিক ঘটনা আখ্যা দিয়ে এর মধ্য দিয়ে দেশের অর্থনীতিতে বিপ্লব ঘটে যাবে বলে মত প্রকাশ করেছেন। সেখানে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য দেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান।
আমরা আজকে যে চুক্তিটি সই করতে যাচ্ছি, সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনের সম্মতি না থাকলে এমন একটি চুক্তি করা সত্যিই দুরূহ ব্যাপার ছিল। বসুন্ধরা গ্রুপের ইতিহাস যদি ঘাঁটতে যান, সব সময়ই কিছু না কিছু দুঃসাহসিক কাজ আমরা করেছি। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সঙ্গে যুক্ত হওয়া তেমনই এক দুঃসাহসিক পদক্ষেপ। এর মধ্য দিয়ে দেশের অর্থনীতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। সময়ের আগে হোক বা পরে, আমাদের দুঃসাহসিক অভিযান সব সময় চলছে। এ দেশের উন্নয়নে আমরা সব সময় সবার আগে থাকব।
এ মুহূর্তে আমাদের স্মরণ করতে হয় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে, যিনি না হলে এ দেশ কখনোই স্বাধীন হতো না, যিনি না হলে স্বাধীনতার স্বপ্নও কেউ দেখত না। স্বাধীনতা লাভের পর তিনি যে সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখেছিলেন, তা বাস্তবে রূপ দিতে পারেননি। পঁচাত্তরের কালরাতে ঘাতকের বুলেটে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নৃশংসভাবে খুন হলে বাঙালি জাতি দিশা হারিয়েছিল। আল্লাহর অশেষ রহমত, বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য উত্তরসূরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদেশে থাকায় বেঁচে গিয়েছিলেন। তিনিই বঙ্গবন্ধুর সব স্বপ্ন এক এক করে পূরণ করে যাচ্ছেন।
আমাদের দুঃসাহসিক পদক্ষেপের কথা যদি বলতে হয়, আমরা গোল্ড রিফাইনারি করতে যাচ্ছি। যে দুঃসাহস স্বাধীনতার ৫০ বছরেও কেউ দেখাতে পারেনি। অনেক বাধা-বিপত্তির মুখেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উৎসাহিত করেছেন যে এ খাত থেকে পোশাকশিল্পের চেয়েও ১০ গুণ বেশি রপ্তানি সম্ভব। এখানে যদি স্বর্ণ পাওয়া যায় এবং অলংকার প্রস্তুত করে রপ্তানি করা যায়, গার্মেন্টশিল্পের চেয়ে অনেক অনেক বেশি রপ্তানি করা যাবে।
এবিজি লিমিটেড স্টক এক্সচেঞ্জের সঙ্গে যুক্ত হলো। আমার বিশ্বাস, দেশের অন্তত ১০০টি গ্রুপ চাইলে যেকোনো পদক্ষেপ নিতে পারে। তারাও যাতে এগিয়ে আসে। দুঃখের বিষয় হলো, অনেকে বিদেশে টাকা জমিয়ে রেখেছে। তাতে দেশের কোনো উন্নতি হয় না। অন্যদিকে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এলেও তারা সব কিছু নিয়ে যায়। তারা এ দেশকে স্বাবলম্বী করতে পারবে না। দেশের বিনিয়োগকারীরাই তা পারবে। তাদের দেশের প্রতি একটা মায়া আছে।
নতুন এ উদ্যোগ নিয়ে এবিজি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরের সঙ্গে আলাপ করেছি যে তোমার পরিকল্পনা কী? তার উত্তর, ‘আমরা সব কিছু ইউরোপ, আমেরিকা থেকে আনব। এটি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। ’
আমাদের অর্থনীতি এখন অনেক শক্তিশালী। ১৪ বছরে আমাদের ডলারের মূল্য বেড়েছে মাত্র ১০ টাকা। বর্তমানে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধসহ বৈশ্বিক সংকটের কারণে ডলার নিয়ে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। তবু আমি বলব, আজকের এই পরিস্থিতিতেও সঠিক নেতৃত্বের কারণে আমরা পথ হারাইনি। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশের চেহারাই বদলে গেছে। পর্যটন খাতে আমাদের অনেক কিছু করার আছে। এসব জায়গায় আমাদের বিনিয়োগ করা উচিত। সেখান থেকে বিপুলসংখ্যক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।
ব্যবসায়ীরাই হলেন সব শক্তির মূল। প্রধানমন্ত্রীও ব্যবসায়ীদের সম্মান করেন। তিনি সার্বক্ষণিক ব্যবসায়ীদের খোঁজখবর রাখেন। ফলে গত ১৪ বছরে ব্যবসায়ীরা কোনো রকম বাধা-বিপত্তিতে পড়েনি। প্রধানমন্ত্রীকে বুঝিয়ে বলার পর তিনি সব সময়ই এগিয়ে এসেছেন।
অথচ দেখেন, এর আগে বিএনপি-জামায়াতের জ্বালাও-পোড়াওয়ে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা প্রায় তলানিতে চলে গিয়েছিল। প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও আগুনের খবর পাওয়া যেত। আমরা গালে হাত দিয়ে বসে থাকতাম, কবে মেশিন চালাতে পারব, কবে কারখানা চালাব এ আশায়। সেই জামায়াত-শিবির ও দেশবিরোধী চক্র এখনো থেমে নেই। তারা সব সময় বিদেশে বসে বাংলাদেশবিরোধী অপপ্রচারে লিপ্ত। আজকের বৈদেশিক মুদ্রার অস্থিরতার পেছনেও তারা দায়ী। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচিত এগুলো কঠোরভাবে প্রতিরোধ করা।