বুকে তীব্র জ্বালা নিয়েই কাল মাঠে নেমেছিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। টেস্ট আঙ্গিনায় পা রাখার ১৩ বছর পর মর্যাদা হারানোর আশঙ্কা! পুঞ্জীভূত ক্ষোভটা যেন কাল ব্যাট দিয়েই দেখিয়ে দিতে চেয়েছিলেন টাইগাররা। তাই কিনা টেস্টের ম্যাজাজ হারিয়ে ওয়ানডে স্টাইলে ব্যাটিং শুরু করেন দুই ওপেনার। তবে টেস্টের আবহ না থাকলেও শুরুটা কিন্তু ভালো ছিল বাংলাদেশের। ৯ ওভারে বিনা উইকেটে ৩৫ রান। সকালের ময়েশ্চারকে উপেক্ষা করে হাসছিল টাইগারদের ইনিংস। এরপরই ধেয়ে আসে ঝড়। মুহূর্তেই বাংলাদেশের ইনিংসটা বিধ্বস্ত জনপদে রূপায়িত হয়।
৩৫ থেকে ৫৯, এই ২৪ রানের মধ্যেই পড়ে যায় টপ অর্ডারের চার উইকেট। গ্যালারিতে বসা দর্শকদের তখন কেবলই মনে হতে লাগলো সেই চিরপরিচিত প্রবাদটি 'বন্যেরা বনে সুন্দর শিশুরা মাতৃক্রোড়ে'। টেস্ট ম্যাচে ওয়ানডের আবহ যে খুব বেশি সময় স্থায়ী হয় না, তা হারে হারে টের পেল বাংলাদেশ।
তবে পঞ্চম উইকেট প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন সাকিব আল হাসান ও অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। দুই জনেই হাফ সেঞ্চুরি করেছেন। কিন্তু নিজেদের ইনিংসটাকে বেশি দূর নিয়ে যেতে পারেননি। সাকিব ৯১ বলে করেছেন ৫৫ রান, আর মুশফিক ১২২ বলে ৬১ রান। দুই জনেরই নয়টি করে বাউন্ডারি। তাদের ৮৬ রানের জুটি-ই মূলত বাংলাদেশের স্কোরকে খানিকটা সম্মানজনক অবস্থানে নিয়ে গেছে। কিন্তু দল যেখানে মাত্র ২৩২ রানে অলআউট সেখানে সাকিব-মুশফিকের মতো অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানের দুটি হাফ সেঞ্চুরির ইনিংসকে 'প্রতিরোধ' বলা কঠিন-ই! কেননা তাদের কাছে প্রত্যাশা ছিল অনেক বেশি! তাছাড়া টেস্টে এক জুটি-ই তো বদলে দিতে পারে ম্যাচের ভাগ্য।
সাকিব আল হাসানের একটি ভুল শট পাল্টে দিল ম্যাচের চিত্র। ইরাঙ্গার বলে সুইপ করতে গিয়ে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন তিনি। নিচু হয়ে আসা ধীর গতির বলের গতি বুঝতে না পেরে আগেই ব্যাট চালান সাকিব। ব্যাটে না লেগে বল গিয়ে আঘাত করে তার প্যাডে। স্ট্যাম্পের মধ্যে থাকায় আউট দিতে চিন্তা করতে হয়নি আম্পায়ারকে। নিজের বোকামির জন্য অবশ্য সাকিব নিজেই খানিকটা বিব্রত। সংবাদ সম্মেলনে সে কথা অকপটে স্বীকারও করলেন। সাকিব বলেন, 'আমি আউট হয়েছি একটা বাজে শট খেলে।'
মুশফিকের আউট নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে। দারুণ ছন্দে ছিলেন টাইগার দলপতি। কিন্তু ইংলিশ আম্পায়ার নাইজেল লং যেন অনেকটা জোর করেই থামিয়ে দিলেন তাকে! লাকমালের বল ব্যাটের কানায় লাগলেও মুশফিককে লেগ বিফোর হতে হয়েছে।
শুধু মুশফিক কেন, নাসির হোসেনের হাতে লাগার পরও তো তাকে 'কট বিহাইন্ড' হতে হয়েছে। মার্শাল আইয়ুব তো তার লেগ বিফোরটা মেনেই নিতে পারছিলেন না। সব মিলে কাল তিন তিনটি বির্তকিত সিদ্ধান্ত! তাই প্রথম দিনে মাত্র ২৩২ অলআউট হওয়ায় দর্শকের মনে আফসোস থাকলেও যত ক্ষোভ যেন আম্পায়ারদের ওপরই। এই টেস্টের দুই আম্পায়ার ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার, আর ম্যাচ রেফারি ভারতের এমন ম্যাচে সিদ্ধান্ত যে বাংলাদেশের বিপক্ষে যাবে সেটাই তো স্বাভাবিক!
বাংলাদেশের ইনিংসের পতনের শুরু হয়েছিল তামিমের বিলাসী শট দিয়ে। ইরাঙ্গার করা বলটি সহজেই ছেড়ে দিতে পারতেন। কিন্তু অযথাই পুল করতে গিয়ে ফাইন লেগে লাকমালের তালুবন্দি হন। অবশ্য এটি ছক্কাই হতে পারত। কিন্তু ঠিক বাউন্ডারি সীমানায় দাঁড়িয়ে অসাধারণ দক্ষতায় লাকমাল বলটি দ্বিতীয় দফায় ধরে ফেলেন। এরপর লঙ্কানদের পরীক্ষিত বোলিং ও আম্পায়ারদের বিরূপ আচরণে ম্যাচ চলে যায় সফরকারীদের মুঠোর মধ্যে। তবে অলআউট হওয়ার জন্য টাইগারদের বিলাসী ব্যাটিংও কিন্তু কম দায়ী নয়! কেন যে টেস্ট ম্যাচটা অযথাই ওয়ানডে মনে করে ব্যাটিং শুরু করেছিল মুশফিকরা, এর ব্যাখ্যা পাওয়া কঠিন। তবে এমন বাজে দিনে বাজে পরিস্থিতির পরও দুইশ'র কোটা পেরুনোর জন্য মুশফিক ও সাকিবকে কৃতিত্ব দিতেই হবে।