মিরপুর নয়, কাল ক্রিকেট ভক্তদের দৃষ্টি ছিল দুবাইয়ে আইসিসি সভার দিকে। সিদ্ধান্ত কী হয় কে জানে? কিউইরা তো আগেই বলেছে জি হুজুর, শেষ অবধি প্রলোভনে বিক্রি হয়ে জিম্বাবুয়ে ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ 'বিগ থ্রি'কে সমর্থন দেওয়ায় বেড়ে গিয়েছিল উত্তেজনা। কিন্তু পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা ও শ্রীলঙ্কার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বাংলাদেশ প্রতিরোধ গড়ে তোলায় পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে তিন মোড়ল- ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড। কিন্তু মাঠের বাইরের খবর খানিকটা স্বস্তিদায়ক হলেও কাল মাঠের ক্রিকেট ছিল খুবই হতাশাজনক। উইকেট পতনের ছয়-ছয়টি সহজ সুযোগ নষ্ট করে টাইগাররা যেন দিনটি উপহার দিল সফরকারীদের। দিনশেষে তাই মুশফিকদের সঙ্গী আফসোস!
চার-চারবার নতুন জীবন পেয়েছেন এক কৌশল সিলভা-ই। উপহারস্বরূপ মাহেলা জয়াবর্ধনে ও দিনেশ চান্দিমালকেও পুরস্কৃত করেছে টাইগাররা। সঙ্গে আম্পায়ারদের দুটি বিতর্কিত সিদ্ধান্তও ছিল। সব মিলে কালকের দিনটি ছিল মুশফিকদের জন্য হতাশার দিন। ম্যাচ শেষে পেসার আল আমিনের কথা শুনেও তাই মনে হলো। 'দিনটি ছিল আমাদের জন্য আনলাকি।'
টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি পেয়েছেন কৌশল সিলভা। অবশ্য সেঞ্চুরি না করে উপায়ও ছিল না লঙ্কান ওপেনারের! চার-চারবার মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসেছেন তিনি। আল আমিনের বলে উইকেটের পেছনে মুশফিক ক্যাচ মিস না করলে ৩৮ রানের মাথায়ই থেমে যেতে হতো কৌশলকে। ৪০ রানের মাথায় তো আউট হয়ে প্যাভিলিয়নের দিকে ফিরেই যাচ্ছিলেন। কিন্তু আম্পায়ার তাকে থামিয়ে দিলেন। পরে রিপ্লেতে দেখা গেল, বোলার আল আমিনের পেছনের পা লেগে স্ট্যাম্পের বেল পড়ে গেছে। নো-বল। বেঁচে গেলেন কৌশল। এরপর নিজের স্কোরের সঙ্গে দুই রান যোগ করতেই আরেকবার পেলেন সৌভাগ্যের ছোঁয়া। দ্বিতীয় স্লিপে সহজ ক্যাচ ফেলে দেন শামসুর রহমান শুভ। বোলার সেই দুর্ভাগা আল আমিন। আরেকবার সাকিবের বলে মুশফিকের সহযোগিতায় রক্ষা পেয়েছেন কৌশল। অবশ্য ততক্ষণে সেঞ্চুরি হয়ে গেছে। ১২৯ রানের মাথায় চতুর্থ সুযোগ। তারপরও ১৩৯ রানের বেশি করতে পারেননি!
৬ রানের মাথায় নতুন জীবন পেয়েও ৪০ রানের বেশি করতে পারেননি দিনেশ চান্দিমাল। দিনশেষে ৪২ রানে অপরাজিত থাকা মাহেলা জয়াবর্ধনেও একবার সুযোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু স্ট্যাম্পিং করতে পারেননি মুশফিক। এবার বোলার ছিলেন সাকিব। কাল যেন একের পর এক মিসের মহড়া চলছিল। যেখানে একটি মিসই ম্যাচের ভাগ্য পাল্টে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট, সেখানে কিনা হাফ ডজন মিস!
কাল দিনের প্রথম দুই সেশনে একক আধিপত্য ছিল শ্রীলঙ্কান ব্যাটসম্যানদের। কিন্তু শেষ সেশনে ভালো করেছে টাইগাররা। এই সেশনে ১৩৮ রান হলেও পতন ঘটেছে চার-চারটি উইকেট। দ্বিতীয় দিনশেষে সফরকারীদের স্কোর পাঁচ উইকেটে ৩৭৫ রান। ১৪৩ রানে এগিয়ে তারা। এমন পরিস্থিতির পরও ম্যাচ বাঁচানোর স্বপ্ন দেখছেন পেসার আল আমিন। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, 'আমাদের লক্ষ্য থাকবে ওদের কাল (আজ) সাড়ে চারশ রানের মধ্যে অল আউট করা। এটা করতে পারলে ড্রর কথা ভাবা সম্ভব। কেননা আমাদের দলে অনেক ভালো ব্যাটসম্যান আছে। যদিও তারা প্রথম ইনিংসে ভালো করতে পারেননি। তাই বলে দুই ইনিংসেই খারাপ করবেন এমন তো নয়।'
নখদন্তহীন পেস বোলিং কাল লঙ্কান ব্যাটসম্যানদের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই তিন পেসার খেলার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে আরেকবার। যদিও আল আমিন কিছুটা ব্যতিক্রম। তিন তিনবার হতাশ হওয়ার পরও তিনি দিনের সবচেয়ে দামি উইকেটটাই শিকার করেছেন। ৭৫ রানে ফিরিয়ে দিয়েছেন ভয়ঙ্কর ব্যাটসম্যান কুমার সাঙ্গাকারাকে। এক্ষেত্রেও তো ভাগ্যের সহায়তা নিতে হয়েছে তাকে। দ্বিতীয় স্লিপে নাসির যেভাবে দুবার মিস করার পর তৃতীয় দফায় বলটি তালুবন্দী করলেন তা দেখে অবাক না হয়ে উপায় নেই। লঙ্কানদের দাপটের দিনে বাংলাদেশের একমাত্র সফলতা সাকিবের বোলিং। হাস্যকর ফিল্ডিংয়ের পরও কাল তিন উইকেট নিয়েছেন দেশসেরা এই অলরাউন্ডার। মিস না হলে তার উইকেট সংখ্যা বেড়ে যেত আরও তিনটি। এত মিসের পরও কিন্তু ম্যাচ এখনো হাত ছাড়া হয়ে যায়নি। আজ প্রথম সেশনে লঙ্কানদের অল আউট করতে পারলে ড্রর আশা তো জিইয়ে থাকবে!