টেস্ট ক্রিকেট যতটা বুদ্ধির খেলা, তার চেয়ে ঢের বেশি ধৈর্য্যের। অবশ্য একে অপরের পরিপূরকও বটে। শুধু বুদ্ধি দিয়ে যেমন ভালো করা কঠিন, তেমনি ধৈর্য্যের একক প্রদর্শনীতেও সাফল্যতার আশা করা বৃথা। তবে এই দুয়ের সমন্বয় ঘটলেই টেস্ট ক্রিকেটের প্রকৃত অবয়ব প্রস্ফুটিত হয়।
কিন্তু টাইগারদের টেস্টের ম্যাজাজেই তো ঘাটতি। নিয়মিত ওয়ানডে খেলা থাকায় মুশফিকদের কৌশল নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই, কিন্তু কাল মাঠে খেলোয়াড়দের শরীরী ভাষা বলে দিচ্ছিল তারা অধৈযর্্য হয়ে পড়েছেন। লঙ্কানদের বিরুদ্ধে তাই গুনতে হলো অনেক চড়া মাশুল। একের পর এক ক্যাচ মিস, তৃতীয় দিন শেষে ইনিংস হারের পথে বাংলাদেশ।
ছয় উইকেটে ৭৩০ রান করে কাল ইনিংস ঘোষণা করে শ্রীলঙ্কা। প্রথম ইনিংসেই তারা বাংলাদেশের চেয়ে ৪৯৮ রানে এগিয়ে যায়। শেষ বিকালে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ৩৫ রানেই এক উইকেট হারিয়েছে বাংলাদেশ। রানের চেয়ে এখন সময়ক্ষেপণই বড় বিষয়। কাল ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে সেকথাই বললেন সোহাগ। 'আমরা চেষ্টা করব পঞ্চম দিন পর্যন্ত খেলার। আমাদের লক্ষ্য এখন সময়ক্ষেপণ করা।'
কাল সারা দিন মিরপুরে চলেছে জয়াবর্ধনে শো। বাংলাদেশের বোলারদের যেন পাত্তাই দেননি এই লঙ্কান তারকা। ইনিংস ঘোষণার আগে তুলে নিয়েছেন ডাবল সেঞ্চুরি। তবে আগের দিন যেখানে শেষ করেছিলেন ঠিক সেখান থেকেই যেন কাল শুরু করেন জয়াবর্ধনে। অধিনায়ক অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজের সঙ্গে গড়েন ১৭৯ রানের জুটি। নিজের ৪২ রানের স্কোরটাকে টেনে নিয়ে গেলেন ২০৩-এ। অথচ মুশফিক ক্যাচ মিস না করলে মাত্র ৯ রানেই থামতে হতো তাকে। টেস্ট এটি জয়াবর্ধনের ৩৩তম সেঞ্চুরি। কুমার সাঙ্গাকারারও সেঞ্চুরি ৩৩টি। এখন লঙ্কান ব্যাটসম্যানদের মধ্যে তারা যৌথভাবে সর্বোচ্চ সেঞ্চুরির মালিক। শুধু তাই নয়, জয়াবর্ধনে টপকে গেছেন অ্যালান বোর্ডারকেও। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে তিনি এখন ৭ম সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ব্যাটসম্যান।
সেঞ্চুরি করেছেন আট নম্বরে ব্যাট করতে নামা কিথুরুয়ান ভিথানাগে। ওয়ানডে স্টাইলে ব্যাট করে ৯৯ বলে টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিটি আদায় করে নেন তিনি। এক ইনিংসে তিন তিনটি সেঞ্চুরি। তাছাড়া রান পেয়েছেন সবাই। একটা ভুল না করলে শতক পেয়ে যেতেন অধিনায়ক অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজও। দুর্ভাগ্যই বটে তার। দিনের ?একমাত্র উইকেট হিসেবে আউট হওয়ার আগে ম্যাথুজ খেলেছেন ৮৬ রানের দারুণ এক ইনিংস।
কাল বাংলাদেশি বোলারদের নিয়ে যেন রীতিমতো ছেলেখেলা খেলেছে শ্রীলঙ্কা। টাইগারদের ২৩২ রানের জবাবে ৬ উইকেটে ৭৩০ রান, যা মুশফিকদের বিরুদ্ধে টেস্ট খেলুড়ে কোনো দেশের সর্বোচ্চ স্কোর। বাংলাদেশের জন্য যে কালকের দিনটি চরম হতাশার ছিল আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে লঙ্কানদের স্কোরকে অনুপ্রেরণা হিসেবেও নিতে পারেন ব্যাটসম্যানরা। পিচ যে বোলারদের নূ্যনতম সহায়তাও করতে নারাজ তা তো পরিষ্কার। এমন কণ্ডিশনে উপহার না দিলে উইকেট পাওয়া বোলারের জন্য সোনার হরিণ। তাই ক্ষীণ হলেও ম্যাচ বাঁচানোর একটা সম্ভাবনা তো থেকেই যায়। লক্ষ্য অটুট থাকলে বিন্দু বিন্দু জলই হয়তো সিন্ধু বানিয়ে ফেলতে পারে!
সম্ভাবনা যতই কম থাকে টেস্ট ক্রিকেট নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী চলে না। এর পরতে পরতে লুকিয়ে থাকে রহস্য, অনিশ্চয়তা। তাই বলে এমন ম্যাচেও ড্র-র আশা কি বিলাসী ভাবনা নয়! কিন্তু এটা তো ঠিক যে, এই তক্তা মার্কা উইকেটে টিকে থাকতে খুব বেশি কৌশলী হওয়ারও দরকার নেই। মাটি কামড়ে উইকেটে পড়ে থাকাই যথেষ্ট। তবে আজ ব্যাটসম্যানদের ধৈর্য্যের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। তাছাড়া টাইগারদের সামথর্্য কেমন বা কতটুকু তারও একটা প্রমাণ হয়ে যাবে আজই! তারপরেও এমন ম্যাচ বাঁচাতে হলে শুধু ভালো পারফরম্যান্স প্রদর্শন করলেই হবে না পাশাপাশি দরকার একটা 'মিরাকল'।