রবিবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

ভালোবাসার অমর জুটি

সম্রাট আকবরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন পুত্র সেলিম

তানভীর আহমেদ

ভালোবাসার অমর জুটি

সম্রাট আকবরের পুত্র ছিলেন শাহজাদা সেলিম। তিনি প্রেমে পড়েছিলেন অপরূপ সুন্দরী আনারকলির। আনারকলির প্রকৃত নাম নাদিরা বেগম। কেউ বলেন শরীফুন্নেছা। তিনি ছিলেন এক ইরানীয় সওদাগরের সুন্দরী কন্যা। আনারকলি একদিন তাঁর পিতার সঙ্গে আফ্রিকার উত্তর উপকূল থেকে সওদাগরি জাহাজে করে যাত্রা করেন, তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৫। জলদস্যুরা তাঁর বাবাকে হত্যা করে তাঁকে অপহরণ করে এবং ইস্তাম্বুলের ক্রীতদাস বাজারে বিক্রি করে দেয়। পরবর্তীতে মনোরঞ্জনের নানারকম তালিম নেওয়ার পর তাঁর অবস্থান হয় এক ধনাঢ্য পরিবারে। ওই পরিবারের ধনাঢ্য ব্যক্তি তাঁকে কিছু দিন পর তুরস্কের সুলতানের কাছে নজরানা পাঠান।

তুরস্কের সুলতান আনারকলিকে সম্রাট আকবরের কাছে পাঠান। সম্রাটের ভাষায় যার রূপ ছিল পাকা আনারের দানার ন্যায় রক্তিম। যৌবন রক্তজবার কলির ন্যায়। যাকে ভালোবেসে নাম দিয়েছেন আনারকলি।

শাহজাদা সেলিম প্রথম দেখাতেই আনারকলির রূপে মজে যান। আনারকলির গাঢ় নীল চোখ, ডিম্বাকৃতি মুখমন্ডল, খাড়া নাক যেন অপ্সরা প্রতিরূপ। রূপের আগুনে জ্বলে-পুড়ে মরলেন শাহজাদা সেলিম। আনারকলিকে পেতে সেলিম উৎকোচ দিয়ে হাত করেন সম্রাট আকবরের হেরেমের রক্ষী সারাকে। আকবর তিন সপ্তাহের জন্য শিকারে গেলে সারা অতি গোপনে আনারকলিকে শাহজাদা সেলিমের খেদমতে হাজির করেন। পরবর্তীতে স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, আনারকলিও তাঁর প্রেমে মজেছিলেন।

তাঁরা অভিসারে যেতেন। তবে তাঁদের মধ্যকার সাক্ষাৎ গোপন রাখা হতো। তাঁদের রোমান্টিক সম্পর্কের সময় আনারকলির বয়স ছিল চল্লিশের কোটায় আর শাহজাদা সেলিমের বয়স ছিল ত্রিশের কোটায়। এক নর্তকীর প্রেমে পুত্রের এই দশা মুঘল সম্রাট আকবরের কানে পৌঁছায়। সম্রাট আকবর এ সম্পর্ক কখনই মেনে নেননি। সম্রাট আনারকলিকে সেলিমের চোখে খারাপ প্রমাণ করতে নানা ধরনের চক্রান্ত করেন। পিতার এ কৌশলের কথা জানামাত্র সেলিম নিজ পিতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। কিন্তু শক্তিশালী আকবর বাহিনীর কাছে সেলিম খুব সহজেই পরাজিত হন।

নিজ সন্তানের মৃত্যুদন্ড ঘোষণা করেন আকবর। তখন প্রিয়তম সেলিমের জীবন বাঁচাতে আনারকলি নিজের জীবনের বিনিময়ে সেলিমের জীবন ভিক্ষা চান।

আকবর বন্দী করে আনারকলিকে হেরেমখানায় নিয়ে যান। সেখানে সেলিমের উপস্থিতিতে আনারকলিকে জ্যান্ত কবর দেওয়ার শাস্তি দেন যেন, আনারকলি তিলে তিলে মারা যায়। পরে জানা যায়, সেলিমের অনুরোধে তাঁর দাদি হামিদা অর্থাৎ সম্রাট আকবরের মা আনারকলিকে গোপনে বিষ সরবরাহ করেন, যেন কষ্ট পেয়ে মারা না গিয়ে একেবারে মারা যান। পাকিস্তানের লাহোরে রয়েছে আনারকলির সমাধি। পরবর্তীতে সেলিম আনারকলির স্মৃতির উদ্দেশ্যে এক সমাধিসৌধ নির্মাণ করেন লাহোর নগরীতে।  আজও সেটি আছে অমলিন।

 

প্রেমের আগুনে পুড়েছেন রোমিও জুলিয়েট

উইলিয়াম শেকসপিয়রের কালজয়ী ট্র্যাজেডি রোমিও-জুলিয়েট পাঠকের মনকে বিষাদে ঢেকে ফেলে। এ প্রেমিকযুগলের বিয়োগান্ত প্রেমের গল্প আর্থার ব্রুকের কবিতায় উঠে আসে ১৫৬২ সালে। এর আগে-পরে বহু কবি, সাহিত্যিক তাঁদের প্রেমের আখ্যান লিখেছেন। রোমিও আর জুলিয়েটের প্রেম কাহিনী ঐতিহাসিকভাবে সত্য। ১৫০০ সালের দিকে ইতালিয়ান শহর ভেরোনাতে বসবাস করতেন তাঁরা। দুজনের পরিবারের মধ্যে শত্রুতার সম্পর্ক ছিল। বংশীয় অহংকার ও ক্ষমতার দম্ভ দুই পরিবারের সদস্যদের মাঝে এ শত্রুতার দেয়াল উঠিয়ে দেয়। রোমিওর সঙ্গে জুলিয়েটের দেখা হয় এক সামাজিক উৎসবে। প্রথম দেখাতেই জুলিয়েটের প্রেমে পড়েন রোমিও। সে কথা আর গোপন থাকেনি। কিন্তু তাঁদের প্রেমের সম্পর্ক কোনোভাবেই মেনে নিতে পারেনি তাঁদের পরিবার। গোপন অভিসারে জুলিয়েটের কাছে বারবার ছুটে যেতেন রোমিও। পারিবারিক নিষেধ থাকলেও রোমিওর সঙ্গে দেখা করতে জুলিয়েট বারান্দায় এসে দাঁড়ান। শেকসপিয়রের নাটকে সেই অভিসারের দৃশ্য এখনো বিশ্বের সেরা রোমান্টিক দৃশ্য বলে পরিচিত। কোনো বাধাই তাঁদের প্রেমকে আটকে দিতে পারেনি। দুজনের পরিবার অমত থাকা সত্ত্বেও তাঁরা বিয়ে করেছিলেন। তবে এ ঘটনার বাস্তব সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। অবশ্য কবিতা ও নাটকে দেখা যায়, বিয়ের পরও দুই পরিবারের শত্রুতার জেরে এবং ভুল বোঝাবুঝির কারণে তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন বিষপানে আত্মহত্যা করার। প্রেমহীন বিচ্ছেদই যদি নিয়তি হয় তা মেনেই এ প্রেমিকযুগল  আত্মহত্যা করেন।

 

মমতাজের প্রেমে  গড়েছিলেন তাজমহল

প্রেমের প্রতীক তাজমহল। মুঘল সাম্রাজ্যের বাদশাহ শাহজাহান প্রিয়তমা স্ত্রী মমতাজের জন্য তাজমহল গড়েছিলেন। প্রচলিত গল্প বলে, আগ্রার এক বাজারে যাওয়ার সময় এক কিশোরীকে দেখে থমকে যান শাহজাহান। তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ২০ বছর। সেই কিশোরীর বয়স তখন মাত্র ১৪, নাম আরজুমান বেগম। তাঁকেই বিয়ে করেন শাহজাহান। বিয়ের পর স্ত্রীর নাম পাল্টে রাখেন মমতাজ মহল। মমতাজ মহল ১৬৩১ সালে ৩৯ বছর বয়সে বুরহানপরে ১৪তম সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারা যান। স্ত্রীর মৃত্যুর পর সাত দিন-সাত রাত শাহজাহান কিছু খাননি। ঘর থেকেও বের হননি। সাত দিন পর শাহজাহান বাইরে বের হলেন। তখন তাঁর চুলের রং ধূসর হয়ে গেছে, মুখ ফ্যাকাসে। স্ত্রী হারানোর শোকে মুহ্যমান শাহজাহান তাঁর প্রাণপ্রিয় স্ত্রীর স্মৃতির জন্য একটি স্থাপত্য নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত নেন। প্রায় ২০ বছর লেগেছিল সেই স্থাপত্য নির্মাণ শেষ হতে। যদিও সেই অনিন্দ্য সুন্দর মার্বেল পাথরের সৌন্দর্য তিনি সম্পূর্ণ দেখে যেতে পারেননি। শেষ বয়সে নিজ পুত্র দ্বারা লাল আগ্রা ফোর্টে তিনি বন্দী ছিলেন।  শাহজাহানের স্ত্রীর সমাধি ঘিরে গড়ে ওঠা তাজমহল ভালোবাসার অপূর্ব নিদর্শন।

 

সম্রাট নেপোলিয়ন ও জোসেফাইনের প্রেম

সম্রাট নেপোলিয়ন বোনাপার্ট। বীর যোদ্ধা। শতাব্দীর পর শতাব্দী তাঁর বীরত্বের গল্প মানুষকে আলোড়িত করেছে। নেপোলিয়নকে বলা হয়, সর্বকালের অন্যতম সেরা সেনাপতি। এই বীর যোদ্ধার জীবনেও এসেছিল প্রেম। তখন তাঁর বয়স সবে ২৬ বছর। তিনি প্রেমে পড়লেন দুই সন্তানের জননী ৩২ বছর বয়সী বিধবা রমণী জোসেফাইনের। রাজকীয় এক অনুষ্ঠানে প্রথমবারের মতো দেখা হয় তাঁদের। সেখানে জোসেফাইনকে খুব কাছ থেকে দেখেন তিনি। অন্যদিকে নেপোলিয়ন ইতিমধ্যে সবার কাছে সুপরিচিতি পেয়েছেন তাঁর বীরত্বের কারণে। নেপোলিয়ন তুখোড় সেনাপতি। শহরের গণমান্য রাজনৈতিক মানুষের ভিড়ে অপরিচিত সুন্দরী রমণীকে দেখে স্বাভাবিক কৌতূহল হয় নেপোলিয়নের। সেই কৌতূহল কখন ভালোলাগায় বদলে যায় তা কে জানে। সেই সম্পর্ক আরও দীর্ঘস্থায়ী রূপ দিয়েছিলেন তাঁরা।  বিয়ে করেন তাঁরা।

 

দুনিয়া বদলে দেওয়া এক প্রেমিকযুগল

মেরি অ্যান্ড পিয়েরি কুরি। এ জুটির ছিল না কোনো লোকদেখানো কাজকর্ম, ছিল না কোনো বাড়াবাড়ি রকমের আবেগ। ছিল না কোনো পৌরাণিক ট্র্যাজেডি, দেবদেবীর হস্তক্ষেপ কিংবা ছিল না কোনো অবৈধ কাহিনি। আধুনিক আর দশটা মানুষের মতোই ছিল তাঁদের প্রেমকাহিনি। কিন্তু ছিল একে অপরের প্রতি অগাধ অন্ধবিশ্বাস, তাঁরা ছিলেন একে অপরের অনুপ্রেরণা! মানবতার কল্যাণে আর কাজের মধ্যেই এগিয়েছে তাঁদের প্রেম। পোল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয় নারীদের রিসার্চে অনুমতি দেয়নি বলে ১৮৯১ সালে রিসার্চ করতে মেরি গিয়েছিলেন ফ্রান্সের সরবনে। মেধাবী মেরিকে লাইব্রেরি, ল্যাবরেটরি সবখানেই আবিষ্কার করেন আরেক মেধাবী, ল্যাবরেটরি ডিরেক্টর পিয়েরি কুরি। কয়েকবার বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার পর ১৮৯৫ সালে তারা বিয়ে করেন। ১৮৯৮ সালে এই বৈজ্ঞানিক যুগল আবিষ্কার করেন পলোনিয়াম আর রেডিয়াম। পদার্থবিদ্যায় এবং রেডিও-অ্যাক্টিভিটিতে অবদানের জন্য এই দম্পতি ১৯০৩ সালে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। ১৯০৪ সালে পিয়েরি কুরি মারা যাওয়ার পর মেরি নিজের স্বামীর দেশেই থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং কুরির অসমাপ্ত কাজ শেষ করার চেষ্টা করেন। মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত স্বামী পিয়েরি কুরির  বিভিন্ন রিসার্চ তিনি চালিয়ে যান।

 

লাইলির প্রেমে  পাগল মজনু

প্রেমিক জুটি লাইলি আর মজনুকে নিয়ে নানা দেশের মানুষের মুখে মুখে তৈরি হয়েছে গল্প। তাঁদের অনবদ্য প্রেম, একজনের জন্য অন্যজনের ত্যাগ আর পাগলামির আখ্যান ছড়িয়ে আছে বিভিন্ন লোকগাথায়। সময়ের বিবর্তনে লাইলি-মজনুর গল্প বিবর্তিত হয়েছে নানাভাবে। বেশির ভাগ কাহিনিতে দেখা যায়, মজনু ছিলেন রাজপুত্র। অনেকে মজনুর পরিচয় হিসেবে বলেন, তাঁর আসল নাম ছিল কায়েস ইবনে আল-মুল্লাওয়াহার। উমাইয়া শাসনামলে এ প্রেম কাহিনি সাহিত্যে স্থান পায়। ১২ শতকে মহাকবি নেজামির ‘লাইলি মজনু’ সাহিত্যকর্মে। স্কুলে পড়ার সময় লাইলি এবং কায়েস একে-অন্যের প্রেমে পড়েন। লাইলি দেখতে খুব আকর্ষণীয় না হলেও কায়েস তার প্রেমে পাগলপ্রায় ছিলেন। তাদের প্রেম পাগলামী গাঢ় হয় যখন দুজনের পরিবার তাদের প্রেমের কথা জেনে যায়। দুজনের মধ্যে দেখা-সাক্ষাৎ বন্ধ হয়ে যায়। লাইলিকে দেখতে না পেয়ে কায়েস মরুপ্রান্তরে নির্বাসনে চলে যান। তার এই দুরবস্থা দেখে লোকজন তাকে মজনু বা পাগল নামে সম্বোধন করত। মরুভূমিতে এক বৃদ্ধ বেদুইন মজনুকে বলেন, লাইলিকে পাওয়ার জন্য শহরে ফিরে যেতে। অন্যদিকে লাইলিও মজনুর জন্য পরিবার ও সমাজের সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যেতে থাকেন। মজনুর জন্য তার পাগলপ্রায় অবস্থা দেখে লাইলির গোত্র ক্ষমতাচ্যুত হয়, কিন্তু তারপরও লাইলির বাবা কায়েসের সঙ্গে লাইলির বিয়েতে সম্মতি দেননি। এদিকে মরুভূমিতে বেদুইনের দল মজনুর হার না-মানা ভালোবাসা দেখে তাঁকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে। তারা লাইলির বাবাকে যুদ্ধে হারিয়ে দেয়। কিন্তু ততদিনে অনেক দেরি হয়ে গেছে। লাইলিকে তাঁর পিতা জোর করে অন্যত্র বিয়ে দিয়েছিলেন। কথিত আছে, স্বামী মারা যাওয়ার পর লাইলি মজনুর কাছে ফিরে এসেছিলেন। কিন্তু ফিরে এসে জানতে পারেন দুঃখ আর অনাহারে মজনু মারা গেছেন।

 

 

শিরি ফরহাদ

শিরি-ফরহাদের প্রেমাখ্যান আসলে প্রাচীন ইরানি লোকগাথা। যুগে যুগে দুজনের প্রেমকাহিনি বিভিন্ন সূত্রে বিভিন্নভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। কেউ বলেছেন, শিরিন বা শিরি ছিলেন একজন রানী, কেউ বলেছেন রাজকন্যা। ফরহাদের পরিচয় নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। একটি লোককথায় জানা যায়, ফরহাদ ছিলেন নদীর বাঁধ নির্মাণের একজন শ্রমিক। ঘটনাচক্রে ফরহাদের কাছে নায়িকা শিরি বলেছিলেন, ‘তুমি যদি ওই নদীতে বাঁধ তৈরি করতে পার তাহলেই আমাকে পাবে।’ ফরহাদ শিরিকে পাওয়ার জন্য এ অসম্ভবকে সম্ভব করার আশায় কাজে নামেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে বাঁধ ভেঙে জলের তোড়ে মারা যান ফরহাদ। আর তার দুঃখে শিরিও পানিতে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন। অন্যদিকে আরেকটি গল্পে দেখা যায়, ফরহাদ ছিলেন একজন গুণী ভাস্কর। তিনি ভাবতেন, তাঁর বানানো মূর্তির চেয়ে সুন্দর আর কিছুই হতে পারে না। কিন্তু ফরহাদের এ অহঙ্কার ভেঙে চুরমার হয়ে যায় রাজকন্যা শিরিকে দেখে। শিরির রূপে পাগলপ্রায় ফরহাদ তখন একের পর এক শিরির মূর্তি গড়তে শুরু করেন। এক দিন ফরহাদের সঙ্গে সামনা-সামনি দেখা হয় শিরির। কিন্তু রাজ্য আর ক্ষমতার কারণে ফরহাদের প্রেমকে অস্বীকার করেন শিরি। কিন্তু শিরির এ প্রত্যাখ্যান ফরহাদকে নতুন করে পাগল করে তোলে। ফলে শিরির স্মৃতি ভাস্কর হিসেবে বেসাতুন পর্বতকে গড়ে তুলতে কঠোর পরিশ্রম শুরু করেন ফরহাদ। ফরহাদের এ পাগলামোর গল্প শুনে আর স্থির থাকতে পারলেন না শিরি। সিংহাসনের মায়া ত্যাগ করে তিনিও ছুটে যান ফরহাদের কাছে। তাঁদের প্রেম কাহিনি স্থান পেয়েছে পারস্যের  মহাকবি ফেরদৌসীর শাহানামায়।

 

বিচ্ছেদ বেদনায় রানী ভিক্টোরিয়া ৪০ বছর শোক পালন করেন

ইংল্যান্ডের সিংহাসনের রাজমুকুট পরেন ভিক্টোরিয়া। তখন তাঁর বয়স মাত্র ১৮। ১৮৩৭ সালে যখন তিনি ক্ষমতায় বসেন তখন ইংল্যান্ড এতটা উন্নত ছিল না। ক্ষমতা সামলানোর গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে পুরো মন দিয়েছেন তিনি। তাঁর জীবনে প্রেম আসে আরও পরে। তিন বছর পর ১৮৪০ সালে রানী ভিক্টোরিয়া তাঁর ফার্স্ট কাজিন প্রিন্স অ্যালবার্টকে বিয়ে করেন। প্রিন্স অ্যালবার্ট ছিলেন বেশ সংস্কৃতিমনা। তাঁদের এই বিয়েকে খুব একটা ভালো চোখে দেখেনি অনেকে। এ নিয়ে অনেক কানাঘুষাও চলত প্রাসাদে। তবে রানীর প্রতিপত্তির সামনে সেসব খুব বেশি মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারেনি। অন্যদিকে অ্যালবার্ট মানুষ ছিলেন অসাধারণ। তিনি রানীকে প্রচ- ভালোবাসতেন। যে কারণে তাঁদের মধ্যে কখনো কোনো সমস্যা শেকড় গেড়ে বসতে পারেনি। রাজপ্রাসাদের অভ্যন্তরেই তাঁদের প্রেম বটবৃক্ষের মতো ডালপালা মেলেছিল। 

কিন্তু রোগ-মৃত্যু রাজা-রানীকেও ছাড় দেয়নি। ১৮৬১ সালে টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হন অ্যালবার্ট। মারা যান তিনি। এই দুর্ঘটনা রানীকে পুরোপুরি আক্রান্ত করে। তিনি নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে দেন। নিজেকে ঘরবন্দী করে রাখেন। রাজ্যপাট সামলানোতেও তিনি পিছিয়ে পড়েন। স্বামীর মৃত্যুর শোক রানীকে আবৃত করে ফেলে। রানী ভিক্টোরিয়া সেই শোকে পরের তিনটি বছর একবারের জন্যও লোকসমক্ষে আসেননি। তবে ভালোবাসার মানুষের বিচ্ছেদ বেদনা বুঝতে চায়নি সাধারণ মানুষ। এ নিয়ে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। ১৮৬৬ সালে রানী পুনরায় কাজ শুরু করেন।

১৯০১ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ভিক্টোরিয়া শোকের কালো পোশাক পরিধান করতেন। কে না জানে, রানী ভিক্টোরিয়া তাঁর স্বামী প্রিন্স অ্যালবার্টের মৃত্যুর পর প্রায় ৪০ বছর পর্যন্ত  তাঁর জন্য শোক করেছেন।

 

 

ক্লিওপেট্রা অ্যান্টনির রাজকীয় প্রেম

ক্লিওপেট্রা ছিলেন মিসরীয় রানী। তাঁর প্রেমে হাবুডুবু খেয়েছিলেন রোমান সেনাপতি মার্ক অ্যান্টনি। প্রথম দেখাতেই তাঁরা দুজন দুজনকে ভালোবেসে ফেলেছিলেন। ক্ষমতাধরের প্রেম বুঝি একেই বলে। অবশ্য এই প্রেমের পথও মসৃণ ছিল না। বিশেষত রোমান শাসকদের ঘুম কেড়ে নিয়েছিল তাঁদের প্রেম। রোমান শাসকরা জানত, এ প্রেমের কারণে দিন দিন আরও শক্তিশালী হয়ে উঠছে মিসর। যে কারণে অন্তর্™^ন্দ্ব ও কূটচালের ভিতর দিয়ে যেতে হয়েছিল অ্যান্টনিও এবং ক্লিওপেট্রাকে। তাঁরা বিয়েও করেছিলেন। কেউ কেউ ধারণা করেন, ব্যাটল অব অ্যাক্টিয়ামের নৌযুদ্ধে রোমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত অবস্থায় অ্যান্টনির মনোবল ভাঙার জন্য তাঁকে ক্লিওপেট্রার মৃত্যুর মিথ্যা সংবাদ শোনানো হয়। বলা হয়েছিল, রোমানরা ক্লিওপেট্রাকে হত্যা করেছে। ক্লিওপেট্রার মৃত্যু সংবাদে অ্যান্টনি পুরোপুরি ভেঙে পড়েন। নিজ তলোয়ার দিয়ে আত্মহত্যা করেন তিনি। অ্যান্টনির মৃত্যুর পর ক্লিওপেট্রা বিষাদে আচ্ছন্ন হন। যে কারণে অ্যান্টনির মৃত্যুর পর কিছু দিনের মধ্যেই ক্লিওপেট্রাকে হত্যার পরিকল্পনা  আরও জোরদার হয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর