সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য না থাকলে যে কী সুফল আসতে পারে, তা দেশের মানুষ দেখেছে আগস্ট মাসজুড়ে। সড়ক ও বাজারসহ সব ক্ষেত্রের দুষ্টচক্র পালিয়ে যাওয়ায় পণ্য পরিবহনে চাঁদাবাজির শিকার হতে হয়নি ব্যবসায়ীদের। নিত্যপণ্যের বাজারে কলকাঠি নাড়ার অপশক্তি ভয়ে ঘাপটি মেরে থাকায় মাছ-মুরগি-ডিম-মাংস থেকে শাকসবজি সবই বিক্রি হয়েছে এমন মূল্যে, যা ছিল প্রত্যাশার চেয়েও কম। ছাত্র-জনতার মাসব্যাপী আন্দোলন-সংগ্রাম সংঘর্ষের পর স্বভাবতই মানুষের মনে আশঙ্কা ছিল যে, পণ্যমূল্য হঠাৎ বেড়ে যেতে পারে। কিন্তু ঘটেছে উল্টো। তখন খুচরা ব্যবসায়ীরাই বলেছেন, সিন্ডিকেটের কারসাজি না থাকায় পণ্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে নেমে এসেছে। কিন্তু মাস না যেতেই প্রেক্ষাপট ফের পাল্টাতে বসেছে। জিনিসপত্রের দাম আবার বাড়তে শুরু করেছে। অনেক পণ্যের দাম অযৌক্তিক পর্যায়ে পৌঁছেছে। কারণ, এর মধ্যেই সিন্ডিকেটের হাত বদল হয়ে গেছে। পতিত সরকারের পান্ডাদের দাপটে যারা এতদিন জনগণের পকেট কাটার ব্যবসার বখরা থেকে বঞ্চিত ছিল, এখন তারা কোমর বেঁধে নেমেছে। দীর্ঘ বঞ্চনার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ব্যতিব্যস্ত তারা। শুধু নিত্যপণ্যের বাজারে নয়, ব্যবসা-বাণিজ্যের সব ক্ষেত্রেই। শুরু হয়েছে আবার সেই পথেঘাটে পরিবহনে চাঁদাবজি। ডিম, মুরগি, কাঁচাবাজারে মোবাইল ফোনে দাম বেঁধে দেওয়ার অপতৎপরতা চালাচ্ছে সিন্ডিকেট। সাধারণ মানুষের অবস্থা দাঁড়াচ্ছে গরম কড়াই থেকে জ্বলন্ত চুলায় পড়ার মতো। অথচ এর জন্য জীবন দেয়নি আবু সাঈদ, মুগ্ধরা। প্রাণ দেয়নি হাজারো কিশোর-যুব-জনতা। ছাত্র-জনতার গণ অভ্যুত্থানে যে আদর্শিক বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটেছে, তাকে সত্য, সাম্য, ন্যায্যতায় মহিমান্বিত করতে রাষ্ট্র সংস্কারের ভিত্তি রচিত হচ্ছে। সেই সংস্কারে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভাঙতে হবে সব সিন্ডিকেট। অপচক্রের হাতে জনগণ ফের জিম্মি হবে- এমন ভাবার দুঃসাহস যেন কারও না হয়। মুনাফালোভীদের কালো হাত ভেঙে দিতে হবে। ক্যাব, ভোক্তা অধিদপ্তরের সঙ্গে অন্যান্য সংস্থা একসঙ্গে কাজ করলে বাজার নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। এটা করতেই হবে। না হলে ছাত্র-জনতার সোনালি অর্জন ধরে রাখা কঠিন হবে।