শুক্রবার, ১৫ জুলাই, ২০১৬ ০০:০০ টা
প্রকৃতি

বিলীন হচ্ছে বরগুনার হরিণবাড়িয়া বন

বরগুনা প্রতিনিধি

বিলীন হচ্ছে বরগুনার হরিণবাড়িয়া বন

নদী ভাঙন ও কাঠ পাচারকারীদের কারণে বিষখালী, বুড়িশ্বর ও বলেশ্বর নদীর মোহনায় গড়ে ওঠা বরগুনার সংরক্ষিত বন হরিণবাড়িয়া বিলীন হয়ে যাচ্ছে। হরিণ, মেছোবাঘ, বনমোরগ, বানর, শূকর, গুইসাপসহ কমপক্ষে ৫০ প্রজাতির পাখি ও বন্যপ্রাণীর বসবাস এই বনটিতে। সংরক্ষিত বনটি ক্রমশ ছোট হয়ে আসায় বনে বসবাসরত প্রাণিকুল পড়ছে আবাসন সংকটে। হুমকিতে পড়ছে জীববৈচিত্র্য। বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬৭ সাল থেকে শ্বাসমূলীয় এই বনটিতে বনায়নের কাজ শুরু হয়। ১৯৭৪ সালে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় এটিকে সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষণা করে। এরপর থেকেই এখানে সৃজিত বনায়নের কাজ করে আসছে বন বিভাগ। ২০১৬ সালে বন বিভাগের একটি সমীক্ষায় পাথরঘাটার চরলাঠিমারা ও হরিণবাড়িয়া বন কেন্দ্রের আয়তন সাড়ে ৬ হাজার একর নির্ধারণ করা হয়। এই বনের বৃক্ষরাজির মধ্যে রয়েছে কেওড়া, ছইলা, সুন্দরী, পশুর, বাইন, গড়ান, খলিশা, আমুর ও গেওয়া। যেখানে বন্যপ্রাণীরা গড়েছে তাদের নিরাপদ আবাসস্থল। বন্যপ্রাণীর মধ্যে প্রধানত রয়েছে হরিণ, মেছোবাঘ, বনমোরগ, বানর, শূকর, গুইসাপসহ কমপক্ষে ৫০ প্রজাতির পাখি ও হরেক প্রজাতির প্রাণী। সূত্রমতে, প্রতিনিয়ত নদী ভাঙনের কবলে পড়ে বন ধ্বংস হওয়ায় প্রাকৃতিক ভারসম্য নষ্ট হচ্ছে। বিপন্ন হচ্ছে  জীববৈচিত্র্য। স্থানীয় অনেকেই জানান, সিডর, আইলা, মহাসেনসহ যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে তাদের রক্ষার একমাত্র হাতিয়ার এই বন। কিন্তু যেভাবে ভাঙন ও চোরাকারবারিদের কবলে বন উজাড় হচ্ছে- তাতে ভবিষ্যতে বড় কোনো দুর্যোগ এলে বনের সক্ষমতা কমে যাবে। স্থানীয় বাসিন্দা জয়নাল বলেন, যে কোনো দুর্যোগের হাত থেকে বন তাদের রক্ষা করে। বন না থাকলে বেঁচে থাকা দায় হয়ে উঠবে। বন বিভাগের পাথরঘাটা রেঞ্জ কর্মকর্তা সোলায়মান হাওলাদার বলেন, বনটির পশ্চিমাংশের লালদিয়া চরসংলগ্ন এলাকা ভাঙনের কবলে বিলীন হচ্ছে। শুধু ভাঙনের কবলেই বন ধ্বংস হচ্ছে তা নয়, বনের মধ্যে রয়েছে কাঠ চোরাকারবারিদের আধিপত্য। দেদার কাঠ কেটে নিয়ে যাচ্ছে বনদস্যুরা।

পরিবেশ বিশেষজ্ঞ পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রোফরেস্ট্রি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. আলমগীর কবির বলেন, উপকূলীয় অঞ্চলে ভাঙনে বন ধ্বংস হওয়ার ফলে প্রাকৃতিক ভারসম্য নষ্ট হচ্ছে। সংরক্ষিত বন ধ্বংস হওয়ার ফলে বনে বসবাসরত বন্যপ্রাণীর আবাসন সংকট সৃষ্টি হওয়ায় জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ছে। তাই দ্রুত পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখতে যেসব স্থানে নতুন চর জাগছে সেখানে বন বিভাগের উদ্যোগে সৃজিত বনায়ন গড়ে তোলা উচিত। যেসব স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে সেখানে প্রাকৃতিক নিয়মে ভাঙন রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। এ বিষয়ে বরগুনা ও পটুয়াখালীর বিভাগীয় বন কর্মকর্তা অজিত কুমার রুদ্র বলেন, প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে ১৫ হেক্টর নতুন জমিতে এনরিচমেন্ট বনায়ন করা হয়েছে। যেখানে সুন্দরী, গেওয়া ও গড়ান গাছ লাগানো হয়েছে। এ ছাড়াও ৫ হেক্টর জমিতে মাউন্ট বাগান করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরেও ১০ হেক্টর জমিতে ঝাউবাগান করা হয়েছে। এ ছাড়া ভাঙন প্রকৃতির নিয়ম, এটাকে প্রাকৃতিকভাবেই প্রতিহত করতে হবে। নতুন বনায়ন করে বনের ঘাটতি পূরণ করতে হবে। তিনি জানান, সম্প্রতি বনটিকে অভয়ারণ্য ঘোষণা করার একটি প্রস্তাবনা বরগুনা জেলা প্রশাসকের কাছে দেওয়া হয়েছে। প্রস্তাবনাটি গৃহীত হলে বনের উন্নয়নে আরও ব্যাপকভাবে কার্যক্রম হাতে নেওয়া যাবে।

সর্বশেষ খবর