২০ অক্টোবর, ২০২০ ১২:০৯
অষ্টম পর্ব

বনবিহারী

আলম শাইন

বনবিহারী

হাতিশালার পাশেই হ্রদ আকৃতির একটি বিশাল জলাশয়। হাতির গোসল, জলপান এই জলাশয়ের উপর নির্ভরশীল। নদীর জলে ভরসা নেই, জোয়ার এলে উপচে পড়ে, ভাটায় কাদায় থিকথিক করে। তখন আমাদের গোসলের সমস্যা হয় যেমন, তেমনি হাতির জলপানেও সমস্যা দেখা দেয়। সেই বিবেচনায়ই মেঘলা অফিসের সন্নিকটে জলাশয়টি খনন করা হয়েছে। জলাশয়টি খুব গভীর নয়; পারও তেমন উঁচু নয়। সব মিলিয়ে হাতির ওঠানামার জন্য সহায়ক বলা যায়।

নান্দনিক গড়নের জলাশয়টি দ্বীপ বনের বাড়তি আকর্ষণ। রোজ বিকেলে চন্দ্রাকৃতির এই জলাশয়টির পার ধরে হাঁটাহাঁটি করি আমি। বেশ ভালো লাগে আশপাশ ধরে হাঁটতে। জলাশয় থেকে বয়ে আসা মৃদুমন্দ হাওয়া গায়ে লাগলে শরীর মন সতেজ হয়ে যায় নিমেষেই। জলাশয়ের পাড়ে ঘাস লতা ও বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ থাকলেও তত দুর্ভেদ্য নয়, হাঁটতে তেমন সমস্যা হয় না। জলাশয়ের পারে খর্বাকৃতির কিছু গাছপালা থাকলেও সেগুলোকে এখন আর গাছের মতো মনে হয় না। স্বর্ণ লতা, আষাঢ়ি লতা গাছের ডালপালা ঢেকে দেওয়ায় দূর থেকে সেগুলোকে এখন ঝোপ জঙ্গল মনে হচ্ছে। সে কারণেই জলাশয়ের পাড় আমার কাছে এক মহাবিস্ময়কর লাগছে।

জলাশয়ের পাড়ে হরেক প্রজাতির ছোট ছোট উদ্ভিদ, সেগুলোর মাথায় অসংখ্য ফুল ফুটেছে। ফলে বেশ আকর্ষণীয় লাগছে জায়গাটা। আরও আকর্ষণীয় লাগছে স্বর্ণলতার ছড়াছড়িতে। জলাশয় পারের মূল আকর্ষণই হচ্ছে সোনালি রঙের এ চিকন লতা। দেখতে ভীষণ লাগে; স্বর্ণলতা নয় যেন স্বর্গলতা! খর্বাকৃতির গাছগুলো ঢেকে দিয়েছে স্বর্ণলতায়। দূর থেকে মনে হয় সোনামোড়ানো বৃক্ষরাজি। কদাকার বৃক্ষেরও রূপ পাল্টে গেছে স্বর্ণলতার ছোঁয়ায়! রাতে চন্দ্রজ্যোতি স্বর্ণলতার ওপর পড়লে চোখ ধাঁধিয়ে যায়। সেকি রূপ, বাবা! চোখ ফেরানো দায় লতার ওপর নজর পড়লেই। তথাপিও লতাটাকে বাঁচিয়ে রাখতে চায় না মানুষ। আগ্রাসী লতা। যে কোন গাছপালাকে বছর খানেকের মধ্যেই মেরে ফেলতে সক্ষম স্বর্ণলতা। প্রথমত, গাছের  পুষ্টি চুষে নেয়। দ্বিতীয়ত, লতার ঘনত্বে গাছপালার সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটায়, ফলে ধীরে ধীরে প্রাণ হারায়। অর্থাৎ পরজীবী উদ্ভিদ এরা। কোন ধরনের পাতা নেই, লতাই দেহ-কাণ্ড-মূল। বৃক্ষরাজির রসচোষে পুষ্টি জোগায়। কিছু পরজীবী মানুষের মতো; যার আপাদমস্তক চিকচিক করে স্বর্ণের মতোই। একেবারে দুধে ধোয়া তুলসী, গায়ে দাগ নেই, সুগন্ধ বেরোয় ভুরভুর করে। সুযোগ পেলেই পরের ঘাড় চেপে লঙ্কা খায়। রস চুষে হৃষ্টপুষ্ট হয়ে এক সময় এঁটুলি’র মতো টুপ করে নিচে পড়ে। মূলত এরাই স্বর্ণলতার জ্ঞাতিভাই!

জলাশয়ের কিনার তেমন ঢালু নয়, কিছুটা সমান্তরাল। হাঁটু সমান জল কিনারে। কিনারে অসংখ্য চাঁদমালার ডাঁটা উঁচিয়ে আছে। অসংখ্য খই আকৃতির ফুল ফোটছে ডাঁটার মাথায়। সে এক নান্দনিক দৃশ্য! আরও মজাদার হচ্ছে, ফুলের ওপর হরেক রঙের প্রজাপতির আনাগোনা। হেলিকপ্টারের মতো টার্ন নিয়ে ফুলের ওপরে ওঠানামা করছে ওরা। আমি প্রায়ই দেখি প্রজাপতির সেই মিলনমেলা। মুগ্ধ হয়ে জলাশয়ের পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকি তাই।

রোজ বিকেলের মতো সে দিনও জলাশয়ের পার ধরে হাঁটছিলাম। উল্টোদিক দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে হাতিশালার কাছে চলে এলাম। আমাকে দেখে মাহুত মোহন মাঝি কাছে এগিয়ে এল। ওকে দেখে বললাম, ‘মাঝি, হাতির যত্নআত্তি ঠিকমত নিচ্ছ তো?’
‘বড়মিয়া, মায়ারানী আমার সন্তানের মতো। আর কিছু বলার নেই আমার।’
মাহুতের আবেগ বুঝতে পেরে আমি প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে বললাম, ‘তোমার ছুটি তো আগামীকাল থেকেই, তাই না?’ 
‘বড় মিয়া, আমি সেকথা জানাতেই আপনার কাছে এলাম।’
‘আবার কী হয়েছে, বলো।’
‘আমাকে তো আগামীকাল থেকে এক সপ্তাহের ছুটি দিয়েছেন, কিন্তু মায়ারানী তো আমাকে ছাড়ছে না।’
‘মানেটা বুঝলাম না! খুলে বলো।’
 ‘আমি একটু আগে মায়ারানীকে বললাম, “আমি বাড়ি যাব কাল। অনেকদিন বাড়ি যাইনি, তোকে না দেখলে ভালো লাগবে না।” বিশ্বাস করেন বড়মিয়া, আমার কথা শেষ না হতেই মায়ারানী শুঁড় দিয়ে আমার গলা প্যাঁচিয়ে ধরল। আর ছাড়ছে না, কিছুতেই না। পরে বুঝিয়ে বলেছি, “বাড়ি যাব না; গলাছাড়।” তখন গলা ছেড়েছে। আরেকটু দেরি হলে আমার দমই বন্ধ হয়ে যেত, এমনি অবস্থা হয়েছে আজ।’
  ‘বল কী!’
  ‘সত্যি বলছি। বড়মিয়া, এখন কী করব আমি বুঝতে পারছি না। অনেকদিন ছেলেপেলেদেরকে দেখিনি মনটা ভালো যাচ্ছে না তাই। মায়ারানীকে ছেড়ে যেতেও ইচ্ছে করছে না। অবুঝপ্রাণী আমাকে খুব ভালোবাসে।’
  কিছুক্ষণ ভেবেচিন্তে বললাম, ‘তুমি চিন্তা করো না, কিছু একটা ব্যবস্থা করব। আপাতত তোমার যাওয়ার দরকার নেই। তুমি এখন তোমার কাজ কর, পরে আমি সব জানাব।’
  মাহুতের কথায় আমি খুব চিন্তিত হলাম। হাতির জন্য আরেকজন মাহুত আগে থেকেই ঠিক করে রাখা উচিত ছিল। তাহলে মোহন মাঝির ছুটিছাটায় সমস্যা হতো না। ভেবে ঠিক করলাম, হাতি যখন ওকে যেতে দিচ্ছে না তাহলে ওর স্ত্রী ছেলে-মেয়েকে এখানে বেড়াতে নিয়ে আসতে বলব। ওর বাড়ি বেশি দূর নয়, সদর উপজেলার কাছাকাছি। প্রয়োজনে একটা পরিপাটি দোচালা ঘর বানিয়ে দিবো, যদি তারা বনবাদাড়ে সবসময়ে থাকতে ইচ্ছুক হয়।

মায়ারানী শুধু পশুই নয়, ও আমাদের পরিবারের সদস্যও। অনেক ধরনের ঘটনা আছে মায়ারানীকে নিয়ে। তেমনি একটি ঘটনা আজ না জানিয়ে পারছি না।

মায়ারানীর পায়ে মাহুত পারতপক্ষে শিকল পরায় না। মায়ারানী দূরে কোথাও যায়ও না অবশ্য; অনিষ্টও করে না। ক্ষিধে পেলে বড়জোর কলাবাগান পর্যন্ত যায়। বাগানটা ওর জন্যই বানানো হয়েছে। হাজার হাজার কলা গাছ, পাকা কলাও ঝুলছে অনেক গাছে। ইচ্ছে মতো খেতে পারে। যার ফলে মায়ারানী অভূক্ত থাকে না কখনো। শুধু সমস্যা পার্থেনিয়াম নিয়ে। উদ্ভিদটি খেতে পারে, সেই ভয়ে অনেক সময় পায়ে শিকল পরানো হয় ওর। মায়ারানী যেখানেই যাক, প্রয়োজনে মোহন মাঝি জোরে হাঁক দিলে ক্ষিপ্রগতিতে ছুটে আসে। আর তাছাড়া কাউকে কোনদিন ভয়ও দেখায়নি; আক্রমণ তো দূরের কথা। বরং সে সবার সঙ্গে আমুদে কাটাতে পছন্দ করে, তাকে সঙ্গ না দিলে রেগে যায়, আর্তচিৎকার করে। এতটাই বিশ্বস্ত আর আমুদে স্বভাবের মায়ারানী।
  মায়ারানীর বিশেষগুণ সে নানান কসরত দেখাতে জানে। মাহুত ওকে অনেক কিছু শিখিয়েছে, শিখিয়েছে ফুটবলে লাথি মারাও। এ ছাড়াও বিভিন্ন অঙ্গচালানোর কৌশলও শিখিয়েছে। সার্কাসের হাতির মতো টুকটাক খেলা দেখাতে পারে সে এখন।
  একদিনের ঘটনা। মেঘলার অফিস চত্বরে ফুটবল খেলছিল কয়েকজন মিলে। ফুটবলের ধুপধাপ আওয়াজ শুনেই মায়ারানী হাজির হলো সেখানে। খেলার সময় সে বড়ই বিরক্ত করে। যখন তখন বলে পা লাগিয়ে দেয়। অথচ খেলার সে কিছুই বুঝে না। মাহুত শিখিয়েছে বলে লাথি মারা, সেটাই ওর পছন্দ এখন। কার ছুঁড়ে দেওয়া বল কার দিকে যাবে, সেসব চিন্তা ওর নেই। বলে পা লাগাতে পারলেই যেন মহাখুশি। ওকে সরিয়ে দিতে গেলে রেগে যায়। গগন ফাটানো আর্তচিৎকার করে। কারসাধ্য তখন ওকে সরায়। বাধ্য হয়ে তখন মাহুত মধ্যস্থতা করে, বুঝিয়ে শুনিয়ে নিয়ে যায়। আবার কোন কোন দিন সরেই না গোঁ ধরে দাঁড়িয়ে থাকে।
  সেদিন খেলছে সবাই, আমি পাশে একটা মোড়া নিয়ে বসে খেলা উপভোগ করছিলাম। অমনি মায়ারানীও হাজির। খেলায় বিরক্ত করা যাবে না; সবার দাবী। বাজি ধরে খেলছে তারা সুতরাং মায়ারানীকে সামলাতে হবে, দায়িত্বটা আমাকে দিয়েছে তারা। মহব্বত দয়ালকে বললাম, ‘কিচেনে বাদামের বস্তা আছে, ওখান থেকে ২-৩ কেজি বাদাম নিয়ে এসো। আমি মায়ারানীকে সামলানোর চেষ্টা করছি।’
  মহব্বত দয়াল বলল, ‘বড়মিয়া, ওর পায়ে শিকল পরালেই ত হয়।’
  বললাম, ‘আজ মায়ারানীর পায়ে শিকল লাগাতে পারবে না কেউই। ও যাবে না এখান থেকে। ওর মনের ওপর প্রভাববিস্তার করাও ঠিক হবে না, রেগে যাবে। কৌশলে যা করা যায় তাই-ই করছি।’
  মহব্বত দয়াল আবারও বলল, ‘মাহুতকে বললে নিতে পারবে মনে হয়।’ 
  ‘মাহুতও পারবে না আজ নিতে। দেখছ না কীভাবে দাঁড়িয়ে আছে বলে পা লাগাতে।’ আমি হেসে হেসে জবাব দিলাম।
  আসলে আমিও মনে মনে চাচ্ছিলাম মায়ারানী বলে লাথি মারুক। আমার কাছে ওর অঙ্গচালানো দারুণ লাগে। মাহুতও সেটি জানে। তাই সে খেলার সময় ইচ্ছেকৃত সরে যায়। যেন কেউ খুঁজলেও মাহুতকে না পায়।
  আজ মনে মনে মায়ারানীকে অতটা আশা না করলেও চলে যাক তাও চাইনি। আমি চাই মায়ারানী আমাদের কাছাকাছি থাকুক, বিরক্ত না করলেই হয়।
  মহব্বত দয়াল এক ব্যাগ বাদাম এনে আমার সামনে রাখল। মায়ারানী কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে আছে। সুযোগ খুঁজছে বলে লাথি লাগাতে। আমি ওর মনোভাব বুঝতে পেরে ডাকলাম, ‘মায়ারানী এদিকে আয়।’
  তারপর ওকে ইশারায় বাদামের ব্যাগ দেখলাম। ওর নজর পড়ছে ব্যাগের দিকে। একদিকে বল একদিকে খাবার, মায়ারানী দোটানায় পড়ল। বাদাম ওর প্রিয় খাবার, এটা জানি আমি। জেনেই বাদামের ব্যাগটা ওকে দেখালাম। ব্যাগটা ওর পরিচিত, এখান থেকে বাদাম বের করে মাঝমধ্যে ওকে খেতে দেই।
  লোভের ফাঁদে পা দিয়ে মায়ারানী আমার কাছে এল। আমি ওকে মুঠোভর্তি বাদাম খেতে দিলাম। শুঁড় দিয়ে বাদাম টেনে নিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে খাচ্ছে সে। তবে একটা জিনিস লক্ষ্য করলাম সে যথেষ্ট অমনোযোগী। অর্থাৎ খাবারের চেয়ে বলের প্রতি আসক্তি বেশি ওর। এখানে দুটি বিষয় কাজ করছে। প্রথমত মায়ারানী ক্ষুধার্ত নয়, কাজেই ওর খাদ্যের অতটা প্রয়োজন নেই। যা খাচ্ছে, মূলত তা শখে খাচ্ছে। দ্বিতীয় ওর সঙ্গীসাথী কেউ নেই, মানুষের কাছাকাছি থাকতে তাই ভালোবাসে। যার বহিঃপ্রকাশ খেলাধুলার সময় উপস্থিত হওয়া। 
  মায়ারানীকে ইশারায় বুঝালাম পিঠে উঠবো, পেছনের পা বাঁকাতে হবে। অন্যদিন ভঙ্গিকরে দেখালে পা বাঁকিয়ে দিতো, তখন ওর পিঠে উঠতাম। আজ মায়ারানী আমার আবদার রক্ষা করছে না। আমি বুঝতে পেরেছি সব, আসলে সে এখান থেকে যেতেই নারাজ। বল ওকে পেয়ে বসেছে, বলে লাথি না দিয়ে যাবেই না। 
  কিছুক্ষণ বাদাম খেল মায়ারানী, তার পর হঠাৎ শুঁড়ের বাদামগুলো ছিটিয়ে দিয়ে আক্রমণাত্মকের ভঙ্গিতে আমার দিকে এগিয়ে এল। আমি অপ্রস্তুত ছিলাম। মায়ারানী কাছে এসে শুঁড় দিয়ে মোড়াটা টান দিয়ে ফেলে দিলো। আমি দাঁড়িয়ে গেলাম, বিষয়টা বুঝতে পারলাম না। তার পর সঙ্গে সঙ্গে মায়ারানী আমাকে শুঁড়দিয়ে প্যাঁচিয়ে শূন্যে তুলে ফেলল। আমি ভয় পেলাম এবার, মায়ারানী রেগে গেছে নিশ্চয়, আমাকে ছুঁড়ে মারবে অথবা পদপিষ্ঠ করবে; ভাবটা সে রকমই মনে হলো। মুহূর্তেই খেলা বন্ধ, সবাই দাঁড়িয়ে রইল; ‘হায় হায়’ রব ওঠল। আমাকে কীভাবে উদ্ধার করবে, তা তারা মুহূর্তের জন্য ভুলে গেল। কিছু একটা দুর্ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে আঁচ করতে পেরে সবাই মাহুতকে ডাকাডাকি করতে লাগল।
  সবাই যখন ‘হায় হায়’ রবে চেঁচাচ্ছে, তখন মায়ারানী আমাকে শূন্যে তুলে ধীরে পায়ে অগ্রসর হয়ে খেলোয়াড়দের কাছে নিয়ে এল। তার পর মাটিতে নামিয়ে শুঁড়ের প্যাঁচ খুলল। মায়ারানীর উদ্দেশ্য এবার বুঝতে পেরেছি আমি। বুঝতে পেরেছে সবাই, এবার হাততালি দিয়ে আমাকে খেলতে স্বাগত জানাল তারা।
  সেদিন মায়ারানীকে আমি খুব আদর করলাম। সবার উদ্দেশ্যে বললাম, খেলা মানে আনন্দ। বনের পশু যদি সেই আনন্দে শরিক হতে চায়, তখন তাকে দূরে ঠেলে দেওয়া ঠিক হবে না তোমাদের। আর মাহুতকে ডেকে বললাম, ওর পায়ে দিনে আর কখনো শিকল পরাবে না। হাতিটি ক্রীড়ামোদী, কারও ক্ষতি করবে না সে। তার পর থেকে মায়ারানী সম্পূর্ণ মুক্ত। আমাদেরও সাহস বেড়েছে, অনেক সময় মাহুত ছাড়াই ওর পিঠে চড়ে বসি আমরা। মায়ারানী অবশ্য তাতে আপত্তি করে না, আমাদের আবদার সব সময় পূরণ করতে চেষ্টা করে।  
  মায়ারানীর ভেতর প্রায়ই শিশু সুলভ আচরণ লক্ষ্য করি আমি। মস্ত শরীর নিয়ে শুঁড় উঁচিয়ে যখন ছুটে বেড়ায় তখন বড়ই চমৎকার লাগে ওকে। আর মায়ারানী প্রায়ই বাদাম খেতে আসে আমার কাছে। বাংলোর নিচে এসেই গর্জন করতে থাকে। যতক্ষণ পর্যন্ত নেমে না আসি ততক্ষণ পযর্ন্ত ওর গর্জন থামে না। এই সব আবদার বেশি রাখছে ওকে মুক্ত রাখার পর থেকেই।
 এখানে বলতেই হয় মায়ারানীর সঙ্গে যদি আমাদের সম্পর্ক এমন বন্ধুত্বপূর্ণ হয়, তাহলে মাহুতের সঙ্গে ওর কেমন খাতির হতে পারে তা বোধকরি আর খুলে বলার প্রয়োজন নেই।
  মাহুত মোহন মাঝি যখন আমাকে বলেছে ওকে মায়ারানী যেতে দিচ্ছে না, তখন আমার চোখের সামনে ঘটে যাওয়া সেই দৃশ্য ভেসে ওঠল। মূলত এ জন্যই নিরুপায় হয়ে মোহন মাঝির পরিবার বনবাদাড়ে এনে রাখার চিন্তা করলাম আমি।

চলবে...

বিডি প্রতিদিন/ফারজানা

সর্বশেষ খবর