মাতৃভাষার জন্য লড়াই করেছেন। আর সারা জীবন মানুষের পাশে থেকেছেন ভাষা সৈনিক আবদুল মতিন। তিনি পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন। কিন্তু তার দান করা চোখে এখন আলোকিত ঢাকার ধামরাই উপজেলার সুয়াপুর ইউনিয়নের রেশমা নাসরিনের জীবন।
রেশমা নাসরিন (২৮) আবদুল মতিনের মতো মহান মানুষের অনুগ্রহ পেয়ে গর্বিত। আবদুল মতিনের দান করে যাওয়া দুটি চোখের কর্নিয়ার মধ্যে একটি স্থাপন করা হয়েছে এই নারীর চোখে। জন্মগতভাবে চোখের সমস্যা নিয়ে ২৪ বছর অতিবাহিত করার পর আবদুল মতিনের চোখের কর্নিয়ায় জীবনের ছন্দ ফিরে এসেছে তার।
রেশমা জানান, জন্মের পর চোখের সমস্যা দেখা দেয় তার। আট বছর বয়স থেকে সমস্যা প্রকট হতে থাকে। অভাবের সংসারে চোখের সমস্যা নিয়ে রেশমা পড়াশোনা চালিয়ে যান। ২০১৩ সালে ধামরাই সরকারি কলেজ থেকে স্নাতক শেষ করে মাস্টার্সে ভর্তি হন। সেই বছর রেশমার চোখের আলো পুরোপুরি নিভে যায়। দিশেহারা রেশমা চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরতে থাকেন।
এক পর্যায়ে ঢাকার একটি চক্ষু হাসপাতালের একদল চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে রেশমাকে কর্নিয়া প্রতিস্থাপনের পরামর্শ দেন। কিন্তু ব্যয়বহুল এই কাজটি রেশমার পরিবারের পক্ষে করা সম্ভব ছিল না।
২০১৪ সালের ৮ অক্টোবর মারা যান ভাষা সৈনিক আবদুল মতিন। গণমাধ্যমের সুবাদে রেশমা আবদুল মতিনের কর্নিয়া দানের বিষয়টি জানতে পারেন। সেই দিনই তিনি যোগাযোগ করেন সন্ধানীর সঙ্গে। তারা তাকে পর দিন সেখানে যেতে বলেন।
৯ অক্টোবর বিকাল ৪টার দিকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে সৈনিক আবদুল মতিনের চোখের কর্নিয়া রেশমার চোখে স্থাপন করা হয়। এতে তার খরচ হয় মাত্র ১৫ হাজার টাকা।
রেশমা নাসরিন পেশায় সুয়াপুর কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্যকর্মী। আবদুল মতিনের দানে চোখের আলো ফিরে পেয়ে মানুষের সেবায় ব্রত হয়েছেন তিনি। বাড়ি বাড়ি গিয়ে সেবা দেয়ার পাশাপাশি মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেন শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গদান করায় জন্য। এভাবে মানুষের উপকার করে আবদুল মতিনের ঋণ কিছুটা শোধ করতে চান তিনি।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত