গৃহকর্মীরা ঝুঁকিপূর্ণ কাজের পাশাপাশি শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। রক্ষা পাচ্ছে না গৃহকর্তার যৌন হয়রানি থেকেও। এমন নির্যাতনে গত পাঁচ বছরে ১৮৩ জন গৃহকর্মী মারা যায়। আহত হয় ১৪৩ জন। সামান্য অর্থের বিনিময়ে অমানুষিক পরিশ্রম করা গৃহকর্মীদের জন্য সরকার ‘গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি-২০১৫’ প্রণয়ন করেছে। এই নীতিমালাকে দ্রুত আইনে পরিণত করার দাবি জানিয়েছেন বক্তারা। গতকাল রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ লিমিটেড মিলনায়তনে ‘গৃহকর্মীর সুরক্ষা ও বর্তমান অবস্থা’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় বক্তারা এ দাবি জানান। কালের কণ্ঠ ও বেসরকারি সংস্থা অ্যাকশন ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট (এএসডি) যৌথভাবে এর আয়োজন করে।
কালের কণ্ঠের সম্পাদক কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলনের সঞ্চালনায় সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক চুন্নু। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বেগম জেবুন্নেছা আফরোজ এমপি। গোলটেবিল বৈঠকে আরও বক্তব্য দেন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের প্রধান (ডিআইজি) বনজ কুমার মজুমদার, নারী নির্যাতন প্রতিরোধকল্পে মাল্টিসেক্টরাল প্রোগ্রামের প্রকল্প পরিচালক ড. আবুল হোসেন, সমাজসেবা অফিসার কে এম শহিদুজ্জামান, এএসডির নির্বাহী পরিচালক জামিল এইচ চৌধুরী, উত্তরা ইউনিভার্সিটির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন আরা লেখা, ব্লাস্টের সখি প্রজেক্টের টিম লিডার ব্যারিস্টার নাজরানা ইমান, বিএসএমইউ-এর ডা. ইশরাত শর্মী, অভিনেত্রী অঞ্জনা, এএসডির উপ-নির্বাহী পরিচালক মো. মোজাম্মেল হক, এসওএস শিশু পল্লীর প্রকল্প পরিচালক সাইফুল ইসলাম, উন্নয়ন কর্মী সাকিলা পারভীন, কবি ও গণমাধ্যম কর্মী তাহমিনা শিল্পী, কোয়ালিশন ফর আরবান পুওর-এর নির্বাহী পরিচালক খন্দকার রেবেকা সান-ইয়াত, অপরাজেয় বাংলাদেশের সমন্বয়কারী সাফিয়া সামি, ডন ফোরামের চেয়ারপারসন মো. মাহবুবুল হক প্রমুখ। সেমিনারে লিখিত প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন এএসডির ডিসিএইচআর প্রকল্প ব্যবস্থাপক ইউকেএম ফারহানা সুলতানা। প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক বলেন, গৃহকর্মীরা গড়ে ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা কাজ করে কিন্তু তাদের থাকার জন্য কোনো জায়গা বরাদ্দ থাকে না। তারা কখনো ড্রয়িং রুমে, কখনো রান্না ঘরে থাকে। আমরা এসব গৃহকর্মীর সুরক্ষার জন্য নীতিমালা করেছি। তা দ্রুত আইনে পরিণত করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রতিমন্ত্রী বলেন, শুধু আইন ও নীতিমালা করলেই হবে না। আমাদের বিবেক যদি জাগ্রত না হয়, আমরা যদি সচেতন না হই, তবে নীতিমালা কাজে আসবে না। গৃহকর্মী সুরক্ষা ও শিশুশ্রম হ্রাসের জন্য জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কমিটি করেছি। আশা করছি, আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে তা সম্পূর্ণরূপে হ্রাস করতে পারব। এ ছাড়া সন্তানসম্ভবা গৃহকর্মীর জন্য ২০ হাজার টাকা, তাদের বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া সন্তানের জন্য এককালীন তিন লাখ টাকা এবং মারা গেলে দুই লাখ টাকা দেওয়া হবে। কালের কণ্ঠের সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে নীতিমালা করে পকেটে নিয়ে ঘুরলে হবে না। এ নীতিমালা প্রয়োগের পাশাপাশি মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য কাজ করতে হবে। সবাই নিজ নিজ জায়গা থেকে গৃহকর্মী সুরক্ষার জন্য এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন আনতে হবে। এ ব্যাপারে গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণা চালালে সমাজের অনেক পরিবর্তন সম্ভব। লিখিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গৃহকর্মীদের ৮০ ভাগই মেয়ে। এসব শিশু গৃহকর্মীর ৬৬ ভাগ মানসিক ও ৭ ভাগ যৌন নির্যাতনের শিকার। বিলসের এক গবেষণার তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, গৃহকর্মীদের ৫০ ভাগ গৃহকর্তার দ্বারা যৌন নির্যাতনের শিকার। যৌন নির্যাতনের শিকার এসব গৃহকর্মীদের ৫০ ভাগই শিশু।