বুধবার, ১১ অক্টোবর, ২০১৭ ০০:০০ টা

ব্যাংকের অনিয়ম রোধে দুদকের প্রস্তাব বাস্তবায়নের সুপারিশ

মানিক মুনতাসির

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক খাতে অনিয়ম-দুর্নীতি রোধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দেওয়া ৭ দফা প্রস্তাব বাস্তবায়নের সুপারিশ করেছে অর্থমন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। এর মধ্যে অন্যতম সুপারিশ হলো খেলাপি ঋণের এবং ঋণ খেলাপিদের বিস্তারিত তথ্য পত্রিকায় প্রকাশের ব্যবস্থা নেওয়া। এ ছাড়া এসব ব্যাংকের সেবা গ্রহীতাদের দেওয়া ১৭টি সুপারিশের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলোও বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশনা দিয়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে যে সুপারিশটিকে সেটি হলো— ব্যাংকগুলোতে সিবিএ সংগঠনের শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ড বন্ধ করার ব্যবস্থা নেওয়া। উল্লেখ্য, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর অবস্থা পর্যালোচনা এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় করণীয় নির্ধারণে অর্থমন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ গত ২৬ আগস্ট একটি কর্মশালা আয়োজন করে। সে কর্মশালায় এসব সুপারিশ উপস্থাপন করা হয়। সেই কর্মশালার ফলোআপ হিসেবে গতকাল আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. ইউনুসুর রহমানের সভাপতিত্বে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। গতকালের বৈঠকে আগের সেই সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের সুপারিশ হয়। সূত্র জানায়, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড পর্যালোচনা করা হয়েছে বৈঠকে। এতে খেলাপি ঋণ আদায়, মন্দ ঋণের পরিমাণ কমিয়ে আনতে ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশ ব্যাংকের তদারকি বাড়ানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে ঋণ খেলাপিদের যাবতীয় তথ্য পত্রিকায় প্রকাশ হলে ঋণ খেলাপিরা সামাজিকভাবে নিজেদের মর্যাদা ক্ষুণ্নের ভয়ে হলেও নিয়মিত ঋণ পরিশোধ করবেন বলে বৈঠকে মতামত দেওয়া হয়। এজন্য দুদকের দেওয়া এই সুপারিশ বাস্তবায়নে জোর দিয়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। তবে এই সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে আরও এক মাস সময়ের প্রয়োজন বলে মতামত দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধি বৈঠকে জানান, সাম্প্রতিক সময়ে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক খাতের সুশাসন তলানিতে ঠেকেছে। এতে অনিয়ম-দুর্নীতি প্রতিনিয়তই বাড়ছে। এজন্য পর্ষদে কাদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে সে বিষয়ে আরও সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কেননা যখন কোথাও কোনো ব্যাংকে বড় ধরনের জালিয়াতির ঘটনা ঘটে তার পেছনে মূল ভূমিকা পালন করে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা এবং পরিচালনা পর্ষদ। ফলে এ দুটি জায়গাকে ঠিক করতে পারলে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বলে মনে করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এসব ব্যাংকের ঋণ ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে দুদকের পক্ষ থেকে ৭ দফা সুপারিশ করা হয়েছে। এর মধ্যে পরিচালনা পর্ষদ যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করছে কিনা সে বিষয়ে মনিটরিং বাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে কোনো ধরনের অনিয়ম ধরা পড়লে সে বিষয়ে দ্রুত যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। ভুয়া দলিল দেখিয়ে ঋণ নিলে ওই ঋণগ্রহীতার বিরুদ্ধে ফৌজদারি বিধিতে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। ব্যাংকগুলো ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনার ক্ষেত্রে দুর্বলতা ও ত্রুটি চিহ্নিত করে বাংলাদেশ ব্যাংককে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

এ ছাড়া এসব ব্যাংকের সেবার মানের বিষয়ে গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলে কিছু মন্তব্য তুলে ধরা হয়েছে ২৬ আগস্টের উপস্থাপিত প্রবন্ধে। এতে ১৭টি সমস্যা চিহ্নিত করা হয়েছে। অন্যদিকে ব্যাংকাররা ১২ দফা সমস্যা ও সম্ভাবনা তুলে  ধরেছেন। এসব সুপারিশ বাস্তবায়ন, সমস্যার সমাধান ও সম্ভাবনা কাজে লাগাতে বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশনা দিয়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।

 

সর্বশেষ খবর