সোমবার, ২২ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা
রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়ক

কাজ ফেলে ঠিকাদার উধাও

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

রাজশাহী-নওগাঁ ৭৮ কিলোমিটার আঞ্চলিক মহাসড়কটির সংস্কার কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে। প্রায় ৪৫০ কোটি টাকার এ প্রকল্পকে ১২ প্যাকেজে ভাগ করা হয়। কিন্তু কাজ শেষ না করেই তিনটি প্যাকেজের দুই ঠিকাদার প্রায় ৩০ কোটি টাকা বিল তুলে নিয়েছেন। এরপর থেকেই তারা লাপাত্তা। ফলে পড়ে আছে রাজশাহী অংশের ২২ কিলোমিটার সড়ক। বিল তুলে লাপাত্তা হয়ে যাওয়া ঠিকাদারদের মধ্যে একজন নগর আওয়ামী লীগের নেতা মঞ্জুর রহমান পিটারের মালিকানাধীন ওয়াহেদ কনস্ট্রাকশন ও আমিনুল এন্টারপ্রাইজ। এই দুই ঠিকাদার সড়কের কাজ ফেলে প্রায় ছয় মাস ধরে লাপাত্তা বলে জানিয়েছেন রাজশাহী  সড়ক ও জনপথের           (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শামসুজ্জোহা। তিনি বলেন, আমিনুল এন্টারপ্রাইজ ও ওয়াহেদ কনস্ট্রাকশন তাদের তিন প্যাকেজের মাত্র ৪০ ভাগ কাজ শেষ করেছে। ঠিকাদারদের চিঠি দেওয়া হয়েছে সড়কটি কার্পেটিং করার জন্য। কিন্তু তারা কাজ করছেন না। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। নির্দেশ পেলেই ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নির্বাহী প্রকৌশলী স্বীকার করেন, গুরুত্বপূর্ণ এই আঞ্চলিক সড়কটির কাজ শেষ না হওয়ায় জনদুর্ভোগ চরমে উঠেছে। মানুষ সড়কে নেমে বিক্ষোভ করছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রায় ৪৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে রাজশাহী-নওগাঁ ৭৮ কিলোমিটার আঞ্চলিক মহাসড়ক উন্নয়ন ও সংস্কার প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে। মোট ১২টি গ্রুপে ভাগ করে দরপত্র করা হয় ওই বছরই। অভিযোগ আছে, সক্ষম প্রতিষ্ঠানকে না দিয়ে সড়ক ও জনপথের কর্মকর্তারা সিন্ডিকেট করে নামধারী কিছু দলীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নির্বাচন করেন। প্রকল্পের  আওতায় এ আঞ্চলিক মহাসড়কটির সংস্কার ছাড়াও ৭ দশমিক ৩ মিটার চওড়া থেকে বাড়িয়ে ১০ দশমিক ৩ মিটার প্রশস্ত করার কথা উল্লেখ আছে। সড়কের পুরো কাজ সম্পন্ন করার শেষ সময় ছিল ৩০ এপ্রিল। তবে ঠিকাদাররা আবেদন করে আগামী ডিসেম্বরে কাজ শেষ করার অঙ্গীকারনামা দিয়েছেন। কিন্তু এখনো সড়কটির রাজশাহী অংশের ৬০ ভাগ কাজই পড়ে আছে ঠিকাদারদের অবহেলায়। নওগাঁ অংশের কার্পেটিং শেষ হলেও ফিনিশিং ছাড়াই পড়ে আছে ছয় মাস ধরে।

 

মোট ১২ প্যাকেজের মধ্যে আমিনুল এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয় চারটি প্যাকেজের কাজ। আমিনুল এন্টারপ্রাইজের চারটির মধ্যে একটি প্যাকেজ আছে রাজশাহী অংশের মোহনপুরে। আর দুটি প্যাকেজের কাজ পেয়েছেন মঞ্জুর রহমান পিটারের মালিকানায় থাকায় ওয়াহেদ কনস্ট্রাকশন। এ ছাড়া দুটি করে প্যাকেজের কাজ পেয়েছে ডন কনস্ট্রাকশন ও ঢাকার কামাল এসোসিয়েটস নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। বাকি দুটি প্যাকেজের কাজ করছে তৃণা ও প্যারাডাইস কনস্ট্রাকশনস। রাজশাহী ও নওগাঁ মহাসড়ক প্রকল্পটি সড়ক ও জনপথ বিভাগ যৌথভাবে তদারক করছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, রাজশাহী অংশের নওহাটা ও মোহনপুর এলাকার দুটি প্যাকেজের ১৫ কিলোমিটার কাজ করছে আওয়ামী লীগ নেতা মঞ্জুর রহমান পিটারের ওয়াহেদ কনস্ট্রাকশন। প্রায় দেড় বছর আগে সড়কের কার্পেটিং তুলে সড়কটি পুরোপুরি ভেঙে ফেলা হলেও সেখানে দেওয়া হয়নি মাটি, খোয়া আর পাথর। ফলে সড়কে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্ত। নির্মাণকাজ চলাকালে ধুলাবালি নিয়ন্ত্রণের জন্য পানি দেওয়ার কথা থাকলেও তা করা হয়নি।

সওজ ও এলাকাবাসীর অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ওয়াহেদ কনস্ট্রাকশনের পক্ষে ঠিকাদার মঞ্জুর রহমান পিটার দাবি করেন, কাজ চলছে। ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় আছে। এলাকাবাসী তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেননি। আমিনুলের প্যাকেজের বিষয়ে বিক্ষোভ করেছেন। তবে এ ব্যাপারে যোগাযোগের চেষ্টা করেও আমিনুল এন্টারপ্রাইজের মালিক আমিনুলের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

রাজশাহী-নওগাঁ আঞ্চলিক মহাসড়কের কাজে অচলাবস্থা প্রসঙ্গে রাজশাহী-৩ (মোহনপুর-পবা) আসনের এমপি আয়েন উদ্দিন বলেন, ‘সড়কটির কাজ দীর্ঘ সময়েও শেষ না হওয়ায় এলাকার মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন। এ নিয়ে আমরা খুবই বিপাকে আছি। এতে সরকারের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন হচ্ছে। আমরা সওজকে বলেছি, প্রয়োজনে ঠিকাদার পরিবর্তন করে সড়কের কাজটি যেন দ্রুত শেষ করা হয়।’

এদিকে সড়কটির এ দুরবস্থায় ফুঁসে উঠেছেন এলাকার লোকজন। বৃহস্পতিবার রাজশাহী অংশের ২২ কিলোমিটার সড়কের দুই ধারের ভুক্তভোগী মানুষ দীর্ঘ মানববন্ধন করেছেন সড়কটির নির্মাণকাজ শেষের দাবিতে। মানববন্ধন ও সমাবেশ থেকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলা হয়েছে, দ্রুত সড়কটির নির্মাণকাজ শেষ না হলে তারা এতে যান চলাচল বন্ধ করে দেবেন। ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণেরও দাবি করেছেন এলাকার এমপি আয়েন উদ্দিন।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর