বৃহস্পতিবার, ৫ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

দালাল ছাড়া মেলে না সেবা, হয় না তদন্ত

প্রবাসীদের ওয়ানস্টপ সার্ভিস, হয়রানি ভোগান্তি পদে পদে

গোলাম রাব্বানী

দালাল ছাড়া মেলে না সেবা, হয় না তদন্ত

মালয়েশিয়ায় পড়ালেখা করেন এম ইসলাম। ভোটার তালিকা হালনাগাদের সময় দেশে ভোটার হওয়ার ফরম পূরণ করেন। ছবি তোলার নির্ধারিত সময়ে তিনি দেশে ছিলেন না। ফিরে এসে ঢাকার উত্তরা নির্বাচন অফিসে যোগাযোগ করেও ছবি তুলতে পারেননি। পরে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন কমিশনের প্রবাসী ডেস্কে গিয়ে তিনি ৭ জানুয়ারি নতুন করে তথ্য ফরম পূরণ করে ভোটার হন। তখন ঢাকা সিটি নির্বাচন থাকায় কর্মকর্তারা বলেন, নির্বাচন শেষ হলেই তাকে ভোটার করা হবে। কিন্তু নির্বাচন শেষ হওয়ার এক মাস পরেও তিনি ভোটার হওয়ার কোনো তথ্য পাচ্ছিলেন না। গতকাল দুপুরে তার এক আত্মীয় রাব্বী সেই খবর নিতে নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (ইটিআই) ভবনের প্রবসী ডেস্কে যান। এ সময় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন, গত ২০ জানুয়ারি তার ভোটার অন্তর্ভুক্তির আবেদন তদন্তের জন্য উত্তরা নির্বাচন অফিসে পাঠানো হয়েছে। ওই কর্মকর্তা তাকে তদন্তে পাঠানোর একটি পত্র দেন এবং তা নিয়ে উত্তরা নির্বাচন অফিসে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন। গতকাল রাব্বীর সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়। এ সময় তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে ভোগান্তির এ কথা শোনান। ইসির আইডিইএ প্রকল্পের সহকারী পরিচালক ফারহানা বেগম স্বাক্ষরিত ওই পত্রে ১৯ জন ভোটারের তথ্য দেওয়া আছে। পত্রে বলা হয়েছে, ‘‘উল্লিখিত (১৯ জন) ভোটার তালিকা অন্তর্ভুক্ত হওয়ার যোগ্য কিনা সে বিষয়ে সুস্পষ্ট মতামতসহ তদন্ত প্রতিবেদন ‘জরুরি’ ভিত্তিতে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগে প্রেরণ করার জন্য অনুরোধ করা হলো।” এ ভুক্তভোগীর প্রশ্ন পত্রে ‘জরুরি’ কথা লেখা রয়েছে। কিন্তু প্রায় দেড় মাস হলো তবুও জরুরি তদন্ত শেষ হলো না? তিনি বলেন, ইসি বলছে, প্রবাসী ভোটারের জন্য ওয়ানস্টপ সার্ভিস। ওয়ানস্টপ সার্ভিস মানে কি প্রবাসী ভোটাররা দ্বারে দ্বারে ঘুরবেন? প্রবাসী ভোটারের তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে ইসির প্রবাসী ডেস্কের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, আমরা ভোটার করার দুই দিনের মধ্যে তদন্তের জন্য থানা অফিসে পাঠাই। তবে এ ডেস্কের অন্য কর্মকর্তারা বলেন, তদন্তের চিঠি মাসের পর মাস উপজেলা অফিসারের টেবিলে পড়ে থাকে। কোনো ভোটার যোগাযোগ করলে তদন্ত প্রতিবেদন পান। আর না করলে কর্মকর্তার টেবিলে তা পড়ে থাকে। যদিও এ তদন্ত প্রতিবেদনের জন্য উপজেলা অফিস ভোটারের সঙ্গে যোগাযোগ করার কথা। ভুক্তভোগী প্রবাসীদের অভিযোগ, প্রবাসী ভোটারের কথা শুনলেই কিছু কিছু থানা অফিসার, অফিস স্টাফ সরাসরি টাকা চেয়ে বসেন। বলেন, চা-মিষ্টি খাওয়ান। আর এই চা-মিষ্টি মানে ৫০০/১০০০ টাকা নয়। প্রবাসী ভোটার হলে বিভিন্ন কাগজপত্রে সমস্যা দেখিয়ে ২৫ থেকে ৫০ হাজার টাকাও হাতিয়ে নেন তারা। আবার এমন কর্মকর্তা আছেন টাকা দিলে বাসায় জাতীয় পরিচয়পত্র পাঠিয়ে দেন। শফিউল আলম নামের এক প্রবাসী গতকাল বলেন, আমার বড় ভাই ভোটার হতে এসেছিলেন। কিন্তু কেউ তেমন সহযোগিতা করেননি। পরে এক দালালের সহযোগিতায় প্রবাসী ডেস্কে ভোটার হন। পরে ওই দালাল বাসায় জাতীয় পরিচয়পত্র পাঠিয়ে দেন। এ জন্য অবশ্য মোটা অঙ্কের টাকাও দিতে হয়েছে। ইসি সূত্রে জানা গেছে, গত ৭ জানুয়ারি উত্তরা থানা, মিরপুর, শাহআলী, ক্যান্টনমেন্ট ও গুলশান থানা নির্বাচন অফিসের আওতাভুক্ত এলাকার ১৯ জন প্রবাসী ভোটার হন। প্রবাসী ডেস্ক একই চিঠিতে ১৯ জন ভোটারের তদন্ত প্রতিবেদন পাঠাতে সংশ্লিষ্ট অফিসারদের চিঠি দেন। কিন্তু অনেক উপজেলায় সেই চিঠির নির্দেশনা পালন করেননি। ঢাকার প্রবাসী ডেস্কে প্রবাসীরা সহযোগিতা পেলেও বিভিন্ন উপজেলা নির্বাচন অফিসে প্রতিনিয়তই প্রবাসীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। তবে ঢাকার বাইরে প্রবাসীদের ভোগান্তি আরও বেশি। বিশেষ করে ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ, সাভার ও গাজীপুরের বিভিন্ন অফিসে প্রবাসীরা টাকা ছাড়া কাজ করতে পারেন না। দেশের অনেক জেলা-উপজেলা নির্বাচন অফিসের চিত্র একই। ভোগান্তির বিষয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে কথা বলেন, চঞ্চল তালুকদার নামের একজন প্রবাসী। তিনি বলেন, কয়েক মাস আগে মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলা নির্বাচন অফিসে ভোটার হতে গিয়েছিলাম। কিন্তু নানা জঠিলতা দেখিয়ে আমাকে ভোটার করেননি। তারা বলেন, ৫ মাস পরে ভোটার করা হবে। প্রবাসী ভোটারের বিষয়ে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম এ ব্যাপারে বলেন, প্রবাসীদের জাতীয় পরিচয়পত্র পেতে যাতে বেগ পেতে না হয়, সে জন্য আমরা প্রবাসী ডেস্ক স্থাপন করেছি।

হয়রানির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে যদি আমরা সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাই, কেউ হয়রানি হয়, তাহলে আমরা অবশ্যই সর্বোচ্চ আইনি ব্যবস্থা নেব। তিনি বলেন, হেড কোয়ার্টারে দালাল খুঁজে পাওয়া কঠিন। আমরা সব কিছু সিসি ক্যামেরার আওতায় এনেছি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর