বুধবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

আরও ১০ বছর এলডিসি সুবিধা চাইছে বাংলাদেশ

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পর কমপক্ষে আরও ১০ বছর যাতে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা বহাল রাখা হয়, সে ধরনের একটি প্রস্তাব দিয়ে এলডিসি গ্রুপের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে বাংলাদেশ। গত ৩ সেপ্টেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে মাথাপিছু আয়, মানব সম্পদ ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা এই তিন সূচকে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি অর্জন করতে হয়। তবে এ ধরনের অগ্রগতির পরও যদি উত্তরণ প্রক্রিয়াটি টেকসই না হয়, তখন বেরিয়ে যাওয়া দেশটিকে বাণিজ্য ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে নানা ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়। আর এ কারণেই উত্তরণ প্রক্রিয়াটি স্বাভাবিকভাবে সম্পন্ন করে আরও বাড়তি সময় প্রাপ্ত সুবিধাগুলো বহাল রাখা উচিত বলে মনে করছে বাংলাদেশ। কভিড-১৯-এর নেতিবাচক প্রভাব যে দেশগুলোর অর্থনীতি ও স্বাস্থ্য খাতে সবচেয়ে বেশি পড়েছে এলডিসি দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ তার অন্যতম। ফলে বেসরকারি গবেষণা সংস্থাগুলোর পরামর্শ ছিল বাংলাদেশ যাতে এই উত্তরণ প্রক্রিয়াটি পেছানোর প্রস্তাব করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশ ইচ্ছা করলে এই উত্তরণের সময় বাড়াতে পারে। কারণ এলডিসি থেকে বের হওয়ার পর এলডিসি হিসেবে পণ্য রপ্তানিতে যে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা পাওয়া যায় সেটি থাকবে না। আবার বৈদেশিক ঋণে সহনীয় সুদ ও নমনীয় শর্তও সীমিত হয়ে আসবে। করোনা পরবর্তী বিশ্ব বাণিজ্যে এলডিসির সুবিধা হারিয়ে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার বিষয়টি বাংলাদেশের জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।

 বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, কভিড-১৯ অর্থনীতিতে যে ক্ষত তৈরি করেছে, সেটির পরও এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে গ্র্যাজুয়েশনের জন্য প্রস্তুত বাংলাদেশ। কারণ করোনার যে প্রভাব সেটি শুল্ক সুবিধার সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। তবে এই উত্তরণ প্রক্রিয়াটি যাতে টেকসই হয়, সে জন্য আমরা দুই সংখ্যার (ডাবল ডিজিট) বছরের জন্য প্রাপ্ত সুবিধা বহাল রাখার প্রস্তাব করেছি। চিঠিতে ডাবল ডিজিট উল্লেখ করার অর্থ হচ্ছে- প্রাপ্ত সুবিধা যেন কমপক্ষে ১০ বছর হয়। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ এলডিসি থেকে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জন করে। ওই সময় জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি) জানায়, এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের জন্য বিবেচ্য তিনটি সূচকেই বাংলাদেশ  যোগ্যতা অর্জন করেছে। তবে তা ছয় বছর ধরে রাখতে হবে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানায়, সিডিপি তিন বছর অন্তর এলডিসি থেকে উত্তরণের বিষয়টি পর্যালোচনা করে। আগামী বছর ওই কমিটির এ-সংক্রান্ত বৈঠক হওয়ার কথা। আর ২০২৪ সালে বাংলাদেশের এলডিসি থেকে বের হওয়ার কথা রয়েছে।

জাতিসংঘের ওই কমিটির সদস্য এবং সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, উত্তরণের পর আরও ১০ বছর এলডিসি সুবিধা বহাল রাখার জন্য সরকার যে প্রস্তাবটি দিয়েছে সেটি ইতিবাচক; তবে এ ধরনের প্রস্তাবের কোনো তাৎপর্য আছে বলে তিনি মনে করেন না।

দেবপ্রিয় বলেন, ‘বাংলাদেশ এলডিসি দেশগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র। ফলে এ ধরনের একটি প্রস্তাব বাংলাদেশ থেকে গেলে সেটি গুরুত্ব পাবে। তবে এলডিসির সুবিধা হচ্ছে মূলত উন্নত দেশগুলোতে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা। এই সুবিধা কিন্তু ডব্লিউটিও (বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা) দেয় না। এটি ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, কানাডা, অস্ট্রেলিয়ার মতো উন্নত দেশগুলো দেয়। ফলে এলডিসি থেকে উত্তরণের পরও যাতে এ ধরনের শুল্ক সুবিধা বহাল থাকে সে জন্য সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক চুক্তির উদ্যোগ নিতে হবে।’

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানায়, বর্তমানে এলডিসি গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছে চাঁদ প্রজাতন্ত্র। সেই গ্রুপের সদস্য দেশগুলো বাংলাদেশের প্রস্তাবে সম্মত হলে এটি ডব্লিউটিও’র জেনারেল কাউন্সিলে পাঠানো হবে মতামতের জন্য। এ বিষয়ে মতামত ইতিবাচক হলে প্রস্তাবটি আগামী জুনে অনুষ্ঠেয় ডব্লিউটিওর মিনিস্ট্রেরিয়াল বৈঠকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। ২০২৪ সালে বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমার ও অ্যাঙ্গোলা এই দুটি দেশেরও উত্তরণের কথা রয়েছে। প্রস্তাবটি অনুমোদন পেলে ওই দেশগুলোর ক্ষেত্রেও এই সুবিধা কার্যকর হবে।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর