শনিবার, ২৭ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

দেশকে এগিয়ে নেওয়া সবার দায়িত্ব : সিইসি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা বলেছেন, ‘স্বাধীনতা সহজে আসেনি। একে রক্ষা করা এবং দিনে দিনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া আমার আপনার সবার দায়িত্ব।’ তিনি বলেন, ‘যারা অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করেছেন শুধু তারাই মুক্তিযোদ্ধা নন। যারা ঘরে বসে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য রান্না করে পাঠিয়েছেন তারাও ছিলেন যোদ্ধা। ওই নারীরা যোদ্ধা ছিলেন, তারা ঘরে বসে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য রান্না করে পাঠিয়েছেন। গতকাল নির্বাচন কমিশন আয়োজিত মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ইসি সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকারের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম, বেগম কবিতা খানম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী। বিশেষ বক্তা ছিলেন সরকারি কর্ম কমিশনের সাবেক সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. এস এম আনোয়ারা বেগম। এ ছাড়া বক্তব্য দেন ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ কে এম হুমায়ূন কবীর ও আইডিইএ প্রকল্প পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবুল কাশেম মো. ফজলুল কাদের।

 

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বিভিন্ন ঘটনা স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে একপর্যায়ে কেঁদে ফেলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। সিইসি বলেন, ‘৮ ডিসেম্বর পুরো শহর এবং জেলা আমরা দখল করে ফেলি। এর কয়েক দিন পর আওয়ামী লীগ নেতা কাশেম সাহেব আমাকে বললেন তুমি একটু পোস্ট অফিসে যাও। পোস্টমাস্টার তোমার সঙ্গে দেখা করতে চান। আমি রিকশায় পোস্ট অফিসে গেলাম। তখন পোস্টমাস্টার ও অফিসের কয়েকজন কর্মচারী লাল কাপড়ে মোড়া একটি পোঁটলা আমার হাতে দেন। জানতে চাইলাম কী আছে এর মধ্যে? বলে খোলেন। খুলে দেখি ওর মধ্যে অনেক টাকা। এই ১০, ২০, ৫০ টাকার নোট। ১০০ টাকার নোট ছিল কি না আমার মনে নেই। তখন মানুষের এত সচ্ছলতা ছিল না। আমি বললাম কাদের টাকা? এমন প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন পাকিস্তান বাহিনীর সদস্যরা বাড়িতে মানি অর্ডার করার জন্য দিয়েছিল। একটা টাকাও তারা পাঠাননি।’... এ গল্প করতে গিয়ে সিইসির কণ্ঠ ভারী হয়ে আসে। তিনি কিছুক্ষণ কথা বলতে পারছিলেন না। কেঁদে ফেলেন সিইসি। কান্নাজড়িত কণ্ঠে সিইসি বলেন, ‘ওই সময়ে হাতে টাকাপয়সা ছিল না। আমার ক্যাম্পে ৩০০ লোক। কীভাবে খাওয়াব? তখন পোস্ট অফিসের লোকজন আমাকে বলেন এ টাকাগুলো আপনি নিয়ে যান।’

সিইসি বলেন, ‘এরা টাকাগুলো না পাঠিয়ে অনেক বড় ঝুঁকি নিয়েছিলেন। পাকিস্তানিরা জানতে পারলে এ অপরাধে তাদের লাশ নদীতে ভাসত। এই হলো মুক্তিযোদ্ধা।’ তিনি বলেন, ‘আমি মুক্তিযোদ্ধা ছিলাম। আমার হাতে রাইফেল ছিল, গ্রেনেড ছিল। আমাদের অবস্থান ছিল হয় মরব না হয় মারব।’ জীবনের ঝুঁকি নেওয়ায় পোস্ট অফিসের ওই কর্মচারীদেরও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি। এ ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘তাৎপর্যের কথা হলো মুক্তিযোদ্ধার তালিকা করা ঠিক হয়নি। কোনো সময় পোস্ট অফিসের সেই কর্মচারীরা আমার কাছে কোনো সুপারিশের জন্য আসেননি।’

মুক্তিযোদ্ধা ড. এস এম আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘আমরা বন্দুক ও গ্রেনেড নিয়ে যুদ্ধ করেছি বলেই মুক্তিযোদ্ধা হব তা হতে পারে না। কারণ ওই সময় আমরা যুদ্ধ করলেও বেশির ভাগ মানুষ মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করেছেন।’ তিনি বলেন, ‘৭৫ সালের পর যে সরকার ছিল সে সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা করেছিল। আমার কাছে মনে হয় মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকাটা করা দরকার ছিল না। কেননা যারা সরাসরি যুদ্ধ করেছেন তারাও যোদ্ধা। আবার যারা সহযোগিতা করেছেন তারাও যোদ্ধা। ’৭১ সালে এমন মানুষ নেই যারা আমাদের সহযোগিতা করেননি। যারা বিরোধী তাদের সংখ্যা কিন্তু খুব বেশি ছিল না। ওই সময় যদি স্বাধীনতাবিরোধীদের তালিকা হতো ভালো হতো।’ তিনি বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যাও কমে যাচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধার তালিকাও দীর্ঘ হচ্ছে।’

সর্বশেষ খবর