শিরোনাম
রবিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

সাভার আশুলিয়ায় সড়কে চলছে ভয়াবহ চাঁদাবাজি

অবৈধ বাহনের কারণে মহাসড়কে যান চলাচল বাধাগ্রস্ত

নাজমুল হুদা, সাভার (ঢাকা)

ঢাকার সাভারে অটোরিকশাসহ ছোটখাটো যানবাহন থেকে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। দরিদ্র রিকশাচালকরাও রেহাই পাচ্ছে না চিহ্নিত চাঁদাবাজদের কবল  থেকে। পুলিশ ও স্থানীয় সরকারদলীয় রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রছায়ায় চলছে বেপরোয়া চাঁদাবাজি। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের আমিনবাজার থেকে সাভারের শেষ সীমান্ত নয়ারহাট ও নবীনগর থেকে নন্দনপার্ক, টঙ্গী থেকে আশুলিয়া সড়কের বাইপাইল পর্যন্ত প্রতিদিন যাত্রীবাহী পরিবহন ও ছোটখাটো যানবাহন থেকে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। নিয়মিত চাঁদা দেওয়ার কারণে চালকরা মহাসড়কেও ছোট ও ফিটনেসবিহীন যানবাহনগুলো চালায়। এজন্য এসব রুটে চলমান বাস, ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও ট্যাংকলরির চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অনেক পয়েন্টে তৈরি হচ্ছে অযাজিত যানজট। সাভারের হেমায়েতপুর, ঋষিপাড়া, পদ্মার মোড়, গেন্ড, সাভার বাজার, রেডিও কলোনি, সিঅ্যান্ডবি, বিশমাইল, নবীনগর, বাইপাইল, জিরানী, বলিভদ্র, জামগড়া, জিরাবো ও আশুলিয়া বাজার এলাকা ঘুরে দেখা যায় চাঁদাবাজির নানা চিত্র। এলাকাবাসীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী এসব এলাকায় প্রতিদিন প্রতিটি পয়েন্টে ১০ থেকে ২০০ টাকা আদায় করা হয়ে থাকে। এভাবে সাভার ও আশুলিয়া এলাকায় গড়ে প্রতিদিন প্রায় ৫০ লাখ টাকা আদায় করা হয়। স্থানীয় সংসদ সদস্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সড়কে যেসব চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে এর সত্যতা পাওয়া গেলে অবশ্যই বন্ধের ব্যবস্থা করবেন। সরেজমিন গিয়ে জানা গেছে, হেমায়েতপুর প্রাইভেটকার স্ট্যান্ড থেকে প্রতিদিন ১০০ টাকা করে চাঁদা আদায় করেন সাগর মিয়া। তিনি ট্রাফিক পুলিশের লোক বলে জানালেন চা  দোকানি সিরাজুল ও এক প্রাইভেটকার চালক। এ ছাড়া  হেমায়েতপুর বাসস্ট্যান্ডের পশ্চিম পাশ ও সিংগাইর- হেমায়েতপুর সড়কের সিএনজি ও অটোরিকশা স্ট্যান্ড থেকে ট্রাফিক পুলিশের নামে চাঁদা আদায় করা হয়ে থাকে।  হেমায়েতপুর থেকে সিংগাইর, হযরতপুর, নবাবগঞ্জ, মানিকনগরসহ কয়েকটি সড়কে চলাচলকারী পাঁচ শতাধিক সিএনজি অটোরিকশা থেকে প্রতিদিন ২০ টাকা এবং প্রায় এক হাজার অটোরিকশা থেকে প্রতিদিন ৪০ টাকা করে চাঁদা আদায় হয় পুলিশের নামে। সিএনজিঅটোরিকশা চালক রফিকুল ইসলাম বলেন, টাকা না দিলে পার্কিং দূরের কথা, রাস্তার পাশে যাত্রী নামাতেও বাধা  দেওয়া হয়। মারধর করে তাড়িয়ে দেয় পুলিশ।

হেমায়েতপুর ঋষিপাড়া পদ্মার মোড় এলাকায় মহিউদ্দিন নামে এক ব্যক্তি ট্রাক, পিকআপ, মিনি ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান এলেই দৌড়ে গিয়ে স্লিপ ধরিয়ে দিয়ে ২০ টাকা করে আদায় করছেন তিনি। আন্তজেলা ট্রাকচালক ইউনিয়নের নামে আদায় করা হচ্ছে এসব টাকা। সাভার বাজার ও গেন্ডা বাসস্ট্যান্ড থেকে আশুলিয়া এবং মিরপুর এলাকায় চলাচল করে দুই শতাধিক লেগুনা। কাগজপত্রবিহীন এসব লেগুনা থেকে প্রতিদিন গাড়িপ্রতি ৮৩০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। এর মধ্যে গেন্ডা ও সাভারে পার্কিং ২০ টাকা, চারাবাগ এলাকায় বিরুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান সুজনের প্রতিনিধি নাজমুল ও তার লোকজন গাড়িপ্রতি ১৮০ টাকা এবং মিরপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় প্রতি গাড়ি থেকে আদায় করা হয় ৬৩০ টাকা করে। আউকপাড়া এলাকায় আশুলিয়া রোডে চলাচলকারী প্রতিটি   লেগুনা থেকে নুরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি পুলিশ ও দলীয়  নেতা-কর্মীদের নামে আদায় করছে টাকা। সাভার বাসস্ট্যান্ড এলাকার মনসুর সুপার মার্কেট, রাজ্জাক প্লাজা সিটি সেন্টার, সুরুচি এবং রানা প্লাজার সামনে মহাসড়কের ওপর অবৈধভাবে পার্কিং করা গাড়ি থেকে স্থানীয় যুবলীগের প্রভাবশালী এক নেতার নাম ভাঙিয়ে মিলন চাঁদা আদায় করছে। এ ছাড়া আশুলিয়া-আবদুল্লাহপুর সড়কে চলাচলকারী বাস থেকে চাঁদা আদায় করে যুবলীগ নেতা সেলিম মন্ডল ও শ্রমিক লীগ নেতা বাবুলের লোকজন। গাড়িপ্রতি ৫৬০ টাকা আদায় করা হয় বলে জানান পরিবহনের চালক ও শ্রমিকরা। আশুলিয়ার নবীনগর, পল্লীবিদ্যুৎ, বাইপাইল, বলিভদ্র ও জামগড়া এলাকায় গাড়িপ্রতি ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা আদায় করছেন ধামসোনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলামের বড় ভাই আবুল হোসেনের লোকজন। নরসিংহপুর-কাশিমপুর সড়ক ও জিরাবো-ঘোষবাগের প্রতিটি বাস, মিনিবাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও ম্যাক্সি থেকে যুবলীগ নেতা কবির সরকারের লোকজন চাঁদা আদায় করেন। আশুলিয়া-টঙ্গাবাড়ী ও বিশমাইল সড়কে চলাচলকারী যানবাহন থেকে চাঁদা আদায় করেন আশুলিয়া ইউনিয়ন যুবলীগের  নেতা-কর্মীরা। জিরানী বাজার, গোহাইলবাড়ি, পানিশাইল ও বারইপাড়া এলাকায় চলাচলকারী যানবাহন থেকে চাঁদা আদায় করে বিকাশ সরকারের লোকজন।

পুলিশের লোকজন চাঁদা আদায় করে না জানিয়ে সাভার হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ সাজ্জাদ করিম খান বলেন,  যে কোনো সড়ক দুর্ঘটনায় পুলিশকেই সবার আগে দৌঁড়াতে হয়। দুর্ঘটনা বন্ধে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার ব্যাপারে সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর