শনিবার, ৯ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

মাশরুমের নতুন গণ ‘কাজিবোলেটুস’

ওলী আহম্মেদ, শেকৃবি

বাংলাদেশ থেকে দ্বিতীয়বারের মতো আবিষ্কৃত হয়েছে মাশরুমের নতুন গণ (Genus) ‘কাজিবোলেটুস’ (Kaziboletus)। এ সম্পর্কীয় গবেষণা প্রবন্ধ জার্মানভিত্তিক বিজ্ঞানসাময়িকী ‘মাইকোলজিক্যাল প্রোগ্রেসে’ চলতি বছরের ২ অক্টোবর প্রকাশিত হয়। দেশের জাতীয় অ্যামিরেটাস বিজ্ঞানী ড. কাজী এম বদরুদ্দোজার সম্মানে মাশরুমটির এ নামকরণ করা হয়। এটি ‘বোলেটাসেয়ী’ (Boletaceae) পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের গ্র্যাজুয়েট ড. ইকবাল হোসেন ও তার পিএইচডি গবেষণার অধীক্ষক ড. ইয়াং চুলিয়াং যৌথভাবে এ গবেষণাকর্মটি সম্পাদন করেন। গবেষক ইকবাল বর্তমানে চীনের গুয়াংডং একাডেমি অব সায়েন্সেসের ইনস্টিটিউট অব মাইক্রোবায়োলজিতে সহযোগী অধ্যাপক (গবেষণা) হিসেবে কর্মরত। ড. ইকবাল মাশরুমের ট্যাক্সনমি ও মলিকুলার ফাইলোজেনি নিয়ে প্রায় ১১ বছর ধরে গবেষণা করছেন। ফলস্বরূপ তিনি মাশরুমের ১১টি নতুন প্রজাতি ও ২টি নতুন গণ আবিষ্কার করেছেন। গবেষণাকর্মটি সম্বন্ধে ইকবাল জানান, গাজীপুরের ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান ও দিনাজপুর জেলার বিরল উপজেলার কালীগঞ্জ শালবাগান থেকে এ মাশরুমটি যথাক্রমে ২০১১ ও ২০১৩ সালে সংগ্রহ করা হয়। মাশরুমটি দৃশ্যত লেক্সিনুম, লেক্সিনেলুম ও স্পঞ্জিস্পোরের অনুরূপ হলেও জিনগতভাবে (জেনেটিক্যালি) ভিন্ন প্রকৃতির। মাশরুমটির ডিএনএ বিশ্লেষণের মাধ্যমে জানা যায়, বর্তমানে এটি একক প্রজাতিসম্পন্ন গণ।

প্রজাতিটির নাম ক. rufescens যা একটি মিথোজীবী মাশরুম। এটি শুধুমাত্র বাংলাদেশের শালবনে পাওয়া গেছে। ছোট বয়সে মাশরুমটির পিলিয়াস লাল বা লালচে বাদামী বর্ণের হয়ে থাকে ও বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এটি হালকা ধূসর থেকে সাদা বা ধূসর বর্ণ ধারণ করে।

গবেষক বলেন, বিশে^ ২.৫ মিলিয়নের অধিক ছত্রাকের ৫ থেকে ৭ শতাংশ আবিষ্কৃত হয়েছে। তন্মধ্যে কিছু কিছু ভক্ষণ উপযোগী যা উচ্চ প্রোটিনসমৃদ্ধ, কম চর্বিযুক্ত ও আঁশযুক্ত খাবার- এক কথায় সুপারফুড। যেহেতু এ গবেষণাটি মাশরুমের শ্রেণিবিন্যাসের ওপর করা তাই ভবিষ্যতে এর কাছাকাছি গ্রুপের মাশরুমের বিবর্তনের ইতিহাস সম্পর্কিত গবেষণায় গুরুত্ব বহন করবে। তিনি আরও বলেন, ‘দেশে মাশরুম চাষ তিন দশকের বেশি হলেও এর শ্রেণিবিন্যাস নিয়ে গবেষণা দেশে অপ্রতুল। উপযুক্ত গবেষণার মাধ্যমে প্রকৃতি থেকে আহরণ করে এসবের কিছু চাষাবাদের আওতায় আনলে তা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সুপারফুড ও ওষুধশিল্পের কাঁচামাল হিসেবে কাজ করবে।

মাশরুমটির নামকরণ সম্পর্কে গবেষক বলেন, ‘ড. কাজী এম বদরুদ্দোজা বাংলাদেশের আধুনিক কৃষির স্থপতি। তিনি আমাদের গবেষণাকর্মের অনুপ্রেরণা। তাই তাঁর সম্মানার্থে তাঁর নামানুসারেই মাশরুমের আবিষ্কৃত এ গণটির নামকরণ করা হয়েছে। উল্লেখ্য, এর আগে গবেষক ইকবাল হোসেনের হাত ধরেই বাংলাদেশ থেকে সর্বপ্রথম ‘বড়ফুটুস’ (Borofutus) নামক মাশরুমের গণ আবিষ্কৃত হয়, যা বড়ফুটুস ঢাকানুস (Borofutus Dhakanus) নামে পরিচিত।

সর্বশেষ খবর