বৃহস্পতিবার, ১১ নভেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

উন্নয়নে পাল্টে গেছে চলনবিল

নাসিম উদ্দীন নাসিম, নাটোর

চলনবিল অধ্যুষিত নাটোরের সিংড়া উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে সরকারের উন্নয়নের ছোঁয়ায় পাল্টে গেছে দৃশ্যপট। রাস্তাঘাট-ব্রিজ-কালভার্ট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে যাওয়ার ফলে গ্রামীণ জনপদের মানুষের জীবনে যুক্ত হয়েছে এক নতুন মাত্রা। গ্রামীণ রাস্তাগুলো পাকা হওয়ায় সহজেই উৎপাদিত ফসল বাজারজাত করায় লাভবান হচ্ছেন কৃষক। চলনবিলের সরকারি পুকুরগুলো স্বল্পমূল্যে ইজারা নিয়ে মাছচাষ করে ভাগ্য বদলে যাচ্ছে সুফলভোগী মৎস্যচাষিদের।

প্রকল্প বাস্তবায়ন দফতর, সড়ক ও জনপথ বিভাগ, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর, পানি উন্নয়ন বোর্ড, বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের আওতায় বদলে গেছে চলনবিল অধ্যুষিত সিংড়া উপজেলা। এর মধ্যে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এ উপজেলায় এক হাজার প্রকল্পের আওতায় বিদ্যুৎ, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ আর্থ-সামাজিক অবকাঠামোর ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। এরই মধ্যে ১৪২ কোটি ৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ৮৪৬টি প্রকল্পের আওতায় ২৩৭ কিলোমিটার সড়ক, ৯৩৩ মিটার ব্রিজ, উপজেলা কমপ্লেক্স ভবন, মুক্তিযোদ্ধা ভবন, ভূমিহীন ও অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের বাসস্থান, স্লুইসগেট ও বিদ্যালয় ভবন নির্মাণসহ বিভিন্ন কাজ শেষ হয়েছে। সিংড়ায় ৯০ কিলোমিটার খাল খনন করা হয়েছে। যার ফলে ৬০ হাজার মেট্রিক ট্রন ফসল অতিরিক্ত ঘরে তুলতে পারছে কৃষক। চলনবিলের মধ্যস্থলে অবস্থিত সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, পাবনার চাটমোহর, নাটোরের সিংড়া ও গুরুদাসপুর উপজেলা। এ দুটি উপজেলার একটি অংশের প্রায় ৩৫-৪০টি গ্রামের মানুষের চলনবিলের মধ্যে সড়ক না থাকায় দুর্ভোগ পোহাতে হতো বছরের পর বছর ধরে। সিংড়া অংশের ১২ গ্রামের মানুষের আশা-আকাক্সক্ষা ডুবো সড়কেই সাবমার্সিবল রোড এবং সিংড়া বাসস্ট্যান্ড থেকে উত্তরদিকে বালুয়া বাসুয়া গ্রাম। এখান থেকেই চলনবিল নাটোরের সিংড়া অংশের বুক ফেড়ে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ চলে গেছে ২৮ কিলোমিটারের ডুবো সড়ক।

বালুয়া বাসুয়া গ্রামের কৃষক ইউনুস ম ল (৭৫) জানান, এ সড়কটি নির্মিত হওয়ায় এখানকার উৎপাদিত শস্য এখন সহজে আনা-নেওয়া করতে পারছি। ফসলের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছি। সিংড়া উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সিংড়া-বারুহাস-তাড়াশ সড়কটি নির্মাণের ফলে চলনবিলের মানুষের জীবনে গতি এনে দিয়েছে। কৃষক আনছার আলী আনন্দ প্রকাশ করে বলেন, ফসলের মৌসুমে বিশেষ করে বছরের আট মাস এলাকার হাজার হাজার লোক উপকৃত হওয়ার পাশাপাশি তারা সরকারের এ উন্নয়নে খুশি। চামারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রভাষক রশিদুল ইসলাম জানান, জনপদের এলাকাটিতে এতদিন সড়ক না থাকায় হাজার হাজার একর জমির কোটি কোটি টাকার ফসল ঠিকমতো পরিবহন করতে না পেরে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হতেন। তা থেকে তারা মুক্তি পেলেন।

চৌগ্রাম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম ভোলা জানান, তাড়াশ, চাটমোহর, গুরুদাসপুর ও সিংড়া উপজেলার কয়েকটি প্রসিদ্ধ হাট-বাজারে এ অঞ্চলের উৎপাদিত সবজি, মাছসহ নানা ফসল চাহিদা মিটিয়ে থাকে। এ সড়কটি নির্মাণের ফলে এসব হাট-বাজারে কৃষক ফসল বিক্রি করতে পেরে উপকৃত হচ্ছে। সিংড়া পৌর মেয়র জান্নাতুল ফেরদৌস জানান, শহরের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া ক্যানেলটি পুনরুদ্ধার করে ঢাকার হাতিরঝিলের আদলে সৌন্দর্য বর্ধনের কাজ চলছে। পৌর এলাকার সড়কগুলোতে লাগানো হয়েছে সৌর বিদ্যুতায়িত সড়কবাতি। নাটোর-বগুড়া মহাসড়কের নিংগইন থেকে বালুয়া বাসুয়া মোড় পর্যন্ত লাগানো হয়েছে সড়কবাতি যা এলাকার মানুষের নজর কেড়েছে। পৌর শেখ রাসেল আউটসোর্সিং সেন্টার ও দর্জি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। বর্তমানে ইউজিআইআইপি প্রকল্পের আওতায় ২৬টি রাস্তা ও ৯টি ড্রেন নির্মাণ কাজ চলছে।

সেই সঙ্গে শহররক্ষা বাঁধ, পৌর শিশুপার্ক, পৌর মার্কেট, দমদমা মিনি স্টেডিয়ামসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকা  বাস্তবায়নের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে। পৌরসভার কার্যক্রম ডিজিটালাইজ করায় হয়রানি কমে সেবার মান বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে নাগরিক সুবিধা বেড়েছে। পৌরবাসীর জানমালের নিরাপত্তায় শহরের গুরুত্বপূর্ণ ছয়টি স্থানে লাগানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা। লাগানো হয়েছে ডিজিটাল ঘড়ি।

তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এমপি বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার আগে এ জনপদের মানুষ ছিল চরম অবহেলিত। তার সময়ে যে উন্নয়ন হয়েছে স্বাধীনতার পর এত উন্নয়ন হয়নি। প্রতিটি গ্রামে আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের ছোঁয়া রয়েছে। ‘শেখ হাসিনার উদ্যোগ ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ’-স্লোগানের প্রায় শতভাগ সফল হয়েছে। আশা রাখি যেসব প্রকল্প চলমান সেসব প্রকল্প শেষ হলে এ অবহেলিত জনপদের মানুষের ভাগ্যের চাকা দ্রুত ঘুরে যাবে।

নাটোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতায় ১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে পৌর শহরের বাজার এলাকায় আত্রাই নদীসংলগ্ন ১ হাজার ৭০৮ মিটার শহর প্রতিরক্ষা বাঁধের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। চলমান উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় বর্তমানে চলনবিলে শেরকোল এলাকার একই স্থানে ২৫২ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি হাইটেক পার্ক, শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার, টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার ও টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ নির্মিত হচ্ছে।

প্রতিষ্ঠানগুলো বাস্তবায়িত হলে এ এলাকার ২০ হাজার বেকার তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান হবে। শেরকোল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান লুৎফর হাবিব রুবেল জানান, পাকা রাস্তা না থাকার কারণে দুর্ভোগ ছিল নিত্যদিনের। এখন আর দুর্ভোগ নেই। মানুষ সহজে যানবাহনে যাতায়াত করতে পারছে।

একসময় সিংড়া উপজেলার মানুষকে চিকিৎসাসেবার জন্য নাটোর সদর হাসপাতাল ও অন্য জেলায় যেতে হতো। ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে তিনতলা বিশিষ্ট ৫০ শয্যার হাসপাতাল নির্মাণ করার ফলে এখানেই চিকিৎসাসেবা নেওয়া যায়। ৫৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব, ৬৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম চালু ও হুলহুলিয়া গ্রামে ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন, তিনতলা বিশিষ্ট ৫০ শয্যার হাসপাতাল নির্মাণ ও তিনটি আধুনিক অ্যাম্বুলেন্স দেওয়া হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর