বৃহস্পতিবার, ১৯ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

ফাতেমা ধানে নতুন আশা

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

ফাতেমা ধানে নতুন আশা

রাজশাহীতে এবার প্রথমবারের মতো ‘ফাতেমা’ ধান চাষ করে আশাতীত ফলন পেয়েছে কৃষক। ধান কাটার পর ফলনে আশার সঞ্চার সৃষ্টি করেছে কৃষকদের। রাজশাহীতে প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলকভাবে এ ধান চাষ করে বিঘায় ৩৬ মণ ধান উৎপাদন করেছেন জেলার পবা উপজেলার এক কৃষক। কৃষি বিভাগ উদ্যোগী হলে এ ধান চাষ কৃষক পর্যায়ে সাড়া ফেলতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে।

রাজশাহীতে প্রথম চাষ করা এ জাতের ধানের ফলন প্রতি বিঘায় ৩৬ মণ ছাড়িয়েছে। রাজশাহীর ধান চাষি দুলাল মাহবুব বলেন, তার জমিতে এবার প্রথমবারের মতো ফাতেমা ধান চাষ করেছিলেন। ধান কাটার পর প্রতি বিঘায় ৩৬ মণ ফলন পেয়েছেন। বর্তমানে প্রতি বিঘায় উচ্চ ফলনশীল ব্রি-২৮ ধানের উৎপাদন হচ্ছে ১৬ থেকে ২০ মণ। সেখানে একই খরচে প্রতি বিঘা জমিতে ফাতেমা ধান ৩৬ মণ উৎপাদন হচ্ছে। ব্রি-২৮ ধানের চেয়ে প্রতি বিঘা জমিতে ১৬ মণ ধান বেশি পাওয়া যাচ্ছে। তিনি বলেন, ধান বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে নিবিড় যত্নসহ ফাতেমা জাতের ধান চাষ করলে প্রতি বিঘায় ৪০ থেকে ৫০ মণ উৎপাদন করা সম্ভব। তবে কৃষি বিভাগ এখনো এ জাতের ধান চাষ নিয়ে কৃষক পর্যায়ে কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি। চলতি বছর শখের বশে তিনি নওগাঁ জেলার মান্দা থেকে এ ধানের বীজ সংগ্রহ করে উপজেলার নওহাটার তেঘর-বসন্তপুর গ্রামের জমিতে চাষ করেছিলেন। গত শনিবার তার জমিতে ধান কাটা হয়েছে।

এ উপলক্ষে সেখানে কৃষক সমাবেশও অনুষ্ঠিত হয়।

পবা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শফিকুল ইসলাম বলেন, এ জাতের ধানে প্রতি শীষে যে পরিমাণ ধান আছে, তাতে প্রতি বিঘা জমিতে ৪০ মণের ওপর ফলন হবে। রাজশাহীতে এ জাতের ধান কাটার পর রেসিও অনুযায়ী ফলন দাঁড়িয়েছে ৩৬ মণ। কৃষকের এই ধানের বিষয়ে কৃষি বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানাব। অন্য ধানের মতোই এ ধানের চাষ পদ্ধতি। গাছের উচ্চতা প্রায় ৫ ফুট যা অন্য ধানের তুলনায় বেশি। গাছগুলো শক্ত হওয়ায় হেলে পড়ে না। এ ধানে রোগ ও পোকামাকড়ের হার তুলনামূলক কম। চাল খুব চিকন ও ভাতও খেতে সুস্বাদু।

পবা উপজেলার সাবেক উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মজিবর রহমান বলেন, ফাতেমা ধানের ফলন কৃষিকে বদলে দিতে পারে। কৃষক পর্যায়ে যদি এ ধান চাষে আগ্রহ সৃষ্টি করা যায়, তাহলে এ ধানের চাষ বাড়বে।

জানা যায়, বাগেরহাটের কৃষক ফাতেমা বেগম ২০১৬ সালে বোরো মৌসুমে তার বাড়ির পাশে জমিতে হাইব্রিড আফতাব-৫ জাতের ধান কাটার সময় তিনটি ভিন্ন জাতের ধানের শীষ দেখতে পান। ওই তিনটি শীষ অন্যগুলোর চেয়ে অনেক বড় এবং শীষে ধানের দানার পরিমাণও অনেক বেশি ছিল। এরপর ওই ধানের শীষ তিনটি বাড়িতে এনে শুকিয়ে প্রক্রিয়া করে বীজ হিসেবে রেখে দেন। পরের বছর সেই থেকে ধান চাষ করে আড়াই কেজি ধান পাওয়া যায়। সময়ের ব্যবধানে এখন এ ধান সাড়া ফেলেছে। পরিচিতি পেয়েছে ফাতেমা ধান হিসেবে। কৃষি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ফাতেমা জাতের ধানের আছে নানা বৈশিষ্ট্য। এ ধানের ফলন শুধু দেশ নয়, গোটা বিশ্বকে তাক লাগাতে পারে।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর