রবিবার, ২২ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

বরিশাল নগরীতে বিদ্যুৎ তামাশা

কর্মঘণ্টা নষ্ট করে লাইন সংস্কারকে অন্তর্ঘাত সন্দেহ মেয়রের

রাহাত খান, বরিশাল

অফিস সময়ে কর্মঘণ্টা নষ্ট করে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন সংস্কার কাজকে অন্তর্ঘাত বলে সন্দেহ করছেন বরিশাল সিটি মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ। খুব সকালে লেবার না পাওয়ার অজুহাতে দিনের পর দিন নগরীর কয়েক লাখ বাসিন্দাকে ভোগান্তিতে ফেলে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত সংস্কার কাজ করছে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো)। এতে বিভিন্ন সরকারি অনুষ্ঠান ব্যাহত হচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি অফিস আদালত-ব্যাংক বীমা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অফিস সময়ে বিদ্যুৎ না থাকায় অলস বসে সময় কাটাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। সমস্যার প্রতিকার চেয়ে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে চিঠি দিয়েছেন সিটি মেয়র। অফিস সময়ের আগে বা কর্মঘণ্টা নষ্ট না করে আগামীতে বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনে সংস্কার কাজ করার কথা জানিয়েছেন বিদ্যুৎ বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী। সূত্র জানায়, নগরীর ৩০টি ওয়ার্ড এবং সদর উপজেলার জাগুয়া ও কাশীপুর ইউনিয়ন এবং চরবাড়িয়া ইউনিয়নের আংশিক এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করে ওজোপাডিকো। রূপাতলী বিদ্যুৎ কেন্দ্রের আটটি ফিডার, দপদপিয়া উপকেন্দ্রের তিনটি, পলাশপুর উপকেন্দ্রে আটটি এবং কাশীপুর উপকেন্দ্রের ১০টি ফিডারের (এলাকাভিত্তিক সঞ্চালন লাইন) মাধ্যমে নগরবাসী এবং তিন ইউনিয়নের বাসিন্দাদের বিদ্যুৎ সরবরাহ করে তারা। কিন্তু প্রায়ই অফিস সময়ে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রেখে বিদ্যুতের খুঁটি স্থানান্তর এবং লাইনের তার পরিবর্তন করছে তারা। অফিস সময়ে বিদ্যুৎ না থাকায় ভোগান্তিতে পড়েন সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবী, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ীসহ নগরীর সাত লাখ বাসিন্দা। এতে ত্যক্ত-বিরক্ত জনগণ। সর্বশেষ গতকাল সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সদর রোড ও পোর্ট রোড ফিডার, আলেকান্দা ফিডার, সার্কিট হাউস ফিডার এবং হাতেম আলী কলেজ ফিডারে বিদু্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রেখে সংস্কার করে তারা। সদর ফিডারের আওতাধীন সদর রোডে রয়েছে স্যাটেলাইট টেলিভিশন ইন্ডিপেন্ডেন্টের অফিস। এ অফিসের প্রধান মুরাদ আহমেদ বলেন, সকালে মানুষ যখন কাজ শুরু করে তখন তারা বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেয়। কাজের সময় বিদ্যুৎ বন্ধ থাকলে দিনটি মাটি হয়ে যায়। উদীচী বরিশালের সভাপতি ও ভোরের আলো সম্পাদক সাইফুর রহমান মিরন বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন উন্নয়ন কাজ করতে গিয়ে যাতে জনগণের ভোগান্তি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে। অথচ বরিশাল বিদ্যুৎ বিভাগ করছে উল্টোটা। যে কোনো উন্নয়ন জনগণের জন্য। সেখানে নগরীর সাত লাখ বাসিন্দা এবং তিন ইউনিয়নের আরও লক্ষাধিক মানুষকে দিনভর বিদ্যুৎবিহীন রেখে বিদ্যুৎ বিভাগের লাইন সংস্কার তামাশা ছাড়া আর কিছু নয়। নগরীর সদর রোডের একটি ক্লিনিক কাম ডায়াগনস্টিক সেন্টারের এক কর্মকর্তা বলেন, ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টার পুরোপুরি বিদ্যুৎনির্ভর। দিনভর বিদ্যুৎ না থাকায় ডায়াগনস্টিক সেন্টারের যাবতীয় ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রপাতি অচল। রোগ পরীক্ষা-নিরীক্ষা সব বন্ধ। এ কারণে দূরদূরান্তের গ্রাম-গঞ্জের শত শত রোগী দিনভর রোগ পরীক্ষার জন্য বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টার ঘুরেছেন। কিন্তু সারা দিন পরীক্ষা করাতে পারেননি তারা। এতে দুর্ভোগের শেষ ছিল না তাদের। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের পরামর্শক প্রকৌশলী মো. সাইফুল ইসলাম জানান, বিদ্যুৎ বিভাগ অফিস সময়ে (সকাল ৯টা থেকে ৫টা) সরবরাহ লাইন সংস্কার না করে সকাল ৬টা থেকে ১০টা পর্যন্ত সংস্কার কাজ করতে পারে। প্রয়োজনে রাতেও সংস্কার কাজ করা যেতে পারে।

বরিশাল ওজোপাডিকোর বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আমজাদ হোসেন বলেন, অফিস সময়েই লাইনের সংস্কার কাজ করে বিদ্যুৎ বিভাগ। এ জন্য আগেভাগে মাইকিং করা হয়েছে। রাতে কিংবা সকালে বিদ্যুৎ বিভাগ সঞ্চালন লাইন সংস্কার করে না।

তবে তার এ বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন বরিশাল ওজোপাডিকোর তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এ টি এম তারিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, চাইলে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্তও সঞ্চালন লাইন সংস্কার করা যায়। আগামীতে লাইন সংস্কারের ক্ষেত্রে বিষয়টি ভেবে দেখবেন বলে তিনি জানান।

এ বিষয়ে বরিশালের জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দিন হায়দার বলেন, তিনি নিজেও গতকাল এর ভুক্তভোগী হয়েছেন। সরকারি অনুষ্ঠান ব্যাহত হয়েছে। জেলা প্রশাসনের আগামী মাসিক উন্নয়ন সমন্বয় সভায় বিদ্যুৎ বিভাগের কাছে এ বিষয়ে কৈফিয়ত চাওয়ার কথা বলেন তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর