শনিবার, ৩০ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

জয়পুরহাটে ভেড়ার খামার

জয়পুরহাট প্রতিনিধি

জয়পুরহাটে ভেড়ার খামার

জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার হরেন্দা গ্রামের রেহেনা ভেড়া পালন করে তার সংসারে সচ্ছলতা এনেছেন। রেহেনাকে বর্তমানে সবাই মডেল হিসেবেই চেনেন। শাশুড়ির কাছ থেকে পাওয়া একটি ভেড়া থেকে তার খামারে এখন দুই শতাধিক ভেড়া রয়েছে। গত কোরবানির ঈদে তিনি শতাধিক ভেড়া বিক্রি করেছেন। কখনো খেয়ে না খেয়ে দিন পার করলেও বর্তমানে ভেড়া পালন করে তার পরিবার স্বাবলম্বী।

রেহেনা জানান, বাবা-মায়ের সংসারে অভাব-অনটনের জন্য লেখাপড়া করা তো দূরের কথা, ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়াও মেলেনি। অল্প বয়সে একই উপজেলার হরেন্দা গ্রামের আবদুর রহিমের সঙ্গে বিয়ে হয়।  তখন তার স্বামী  ভ্যান চালাত। রহিমের ভ্যান চালানো টাকা দিয়ে খুব কষ্ট করে খেয়ে না খেয়ে সংসার চলত। সে সময় রেহেনা অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করত। তিন বছরের মধ্যে যোগ হলো রাশেদ ও আশিক নামে দুই পুত্র সন্তান। এরই মধ্যে শ্বশুর-শাশুড়ির সংসার থেকে আলাদা হতে হয় তাদের। আলাদা হওয়ার সময় শাশুড়ির কাছ থেকে ভাগ পায় একটি ভেড়ার বাচ্চা। লালন-পালনের পর ভেড়াটি বড় হয়। এরই মধ্যে ভেড়াটি প্রথমবারে দুটি বাচ্চা জন্ম দেয়। তবে ভেড়াটি বছরে তিনবার বাচ্চা জন্ম দেওয়ায় তার খামারে বাড়তে থাকে সংখ্যা। এভাবেই প্রতি বছর ভেড়া বাড়তেই থাকে। সেই থেকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি রেহেনাকে। ভেড়া বিক্রি করে রেহেনা তার বড় ছেলে রাশেদ হোসেনকে একটি কলেজে দ্বাদশ শ্রেণিতে এবং ছোট ছেলে আশিককে স্থানীয় বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণিতে পড়াশোনা করাচ্ছেন। এ ছাড়া তিনি ২ লাখ টাকা দিয়ে ৫ শতক জায়গা, দেড় লাখ টাকা দিয়ে দুটি গাভী ক্রয় করেছেন। বর্তমানে তার খামারে ছোট-বড় মিলিয়ে ১০০টি ভেড়া আছে। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৫ লাখ টাকা।

রেহেনার স্বামী আব্দুর রহিম জানান, এক সময় টাকা-পয়সার অভাবে তিনি সংসার চালাতে পারতেন না। অভাব-অনটন ছিল নিত্যদিনের সঙ্গী। তিনি সব সময় হতাশায় ভুগতেন। তিনি এখন ভেড়া ও ভ্যান  থেকে প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা আয় করছেন। আগামীতে তিনি ছেলেদের নিয়ে গরুর খামার করবেন।

ছোট ছেলে আশিক বলেন, স্কুলে যাওয়ার আগে এবং স্কুল থেকে এসে আমি ভেড়াগুলোকে ঘাস খাওয়াতে মাঠে নিয়ে যাই। যতটুকু সময় পাই সেই সময়টুকু আমার মায়ের সঙ্গে ভেড়াগুলোর পেছনে দেই।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. নিয়ায কাজমীর বলেন, রেহেনা বেগম ভেড়া পালন করে স্বাবলম্বী হয়ে এ উপজেলায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তাকে দেখে অন্যরা ভেড়া পালন করবেন বলে আমি আশা করছি। আমি তাকে সরকারিভাবে ভেড়া পালনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করব, যাতে  ভেড়া পালন করতে তার জন্য আরও সহজ হয়।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর