খুলনায় নিয়ন্ত্রণহীন ইজিবাইকের চাপে যানজটে ভোগান্তি বাড়ছে। সড়কের ধারণক্ষমতার তুলনায় অতিরিক্ত ইজিবাইক, অদক্ষ চালক, যাত্রী নেওয়ার জন্য যেখানে সেখানে দাঁড়ানোর ফলে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। সেই সঙ্গে সমন্বয় না থাকায় সড়ক ও ফুটপাত দখল, সড়কের পাশে অস্থায়ী বাজার, হাসপাতাল-ক্লিনিকে নিজস্ব গ্যারেজ না থাকায় প্রতিষ্ঠানের সামনেই অ্যাম্বুলেন্স প্রাইভেটকার অবস্থান নেয়। ফলে সড়কে চলাচলের জায়গা সংকুচিত হয়ে নাগরিক ভোগান্তি বাড়ে। সিটি করপোরেশনের তথ্য অনুযায়ী, খুলনা মহানগরীতে ৮ হাজারের মতো ইজিবাইক চলাচল করে। তবে ট্রাফিক বিভাগ বলছে, এই সংখ্যা ১৫ থেকে ২০ হাজারের মতো। তাদের দাবি, করপোরেশনের দেওয়া লাইসেন্স (নিবন্ধন) নকল করে অবৈধ ইজিবাইক সড়কে চলাচল করছে। সরেজমিন দেখা যায়, নগরীতে সবচেয়ে ভয়াবহ যানজট তৈরি হয় সোনাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড, মজিদ সরণি, এম এ বারী রোড এলাকায়। ট্রাফিক পুলিশের মনিটরিং না থাকায় এসব স্থানে যাত্রীবাহী বাস ও ইজিবাইকের কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজট লেগে থাকে। নাগরিক নেতারা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে নগরবাসী যানজটের দুর্ভোগে অতিষ্ঠ হলেও স্থায়ী সমাধান হয়নি। উপরন্তু, প্রতিনিয়ত সড়কে বাড়ছে সমন্বয়হীনতা।
বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ-উজ্জামান বলেন, পরিস্থিতি দিন দিন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। সোনাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড গল্লামারী, সাতরাস্তা মোড়, খানজাহান আলী রোড, পাওয়ার হাউস মোড়সহ বিভিন্ন স্থানে যানজট চরম আকার ধারণ করছে। বিশেষ করে সোনাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় সড়কের ওপর যাত্রী ওঠানো-নামানোর জন্য দীর্ঘক্ষণ এলোমেলো বাস ও ইজিবাইক রাখায় স্বাভাবিক যান চলাচল বন্ধ হয়ে সোনাডাঙ্গা থানার সামনে এম এ বারী রোড ও মজিদ সরণি রোডের প্রায় এক কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজট তৈরি হয়। মুমূর্ষু রোগী নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সও এ সময় ভিড়ের মধ্যে আটকে থাকে। অবৈধ যানবাহন চলাচল বন্ধে কেসিসি ও ট্রাফিক বিভাগের মধ্যে সমন্বয় না থাকায় ভোগান্তি বাড়ছে। এদিকে শহরের বাইরে থেকে আসা ইজিবাইক নিয়ন্ত্রণে ট্রাফিক বিভাগ ব্যর্থ হওয়ায় যানজট তৈরি হচ্ছে বলে দাবি করেন সিটি মেয়র তালকুদার আবদুল খালেক। তিনি বলেন, সড়কের ধারণক্ষমতা বিবেচনায় সিটি করপোরেশন ৮ হাজার ইজিবাইক চলাচলের লাইসেন্স দিয়েছে। এর বাইরে আর কোনো ইজিবাইক চলাচল করতে পারবে না। কিন্তু ট্রাফিক বিভাগকে শহরের বাইরের ইজিবাইক ঢুকতে না দেওয়ার কথা বলা হলেও তারা ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।
তবে কেসিসির দেওয়া একটি লাইসেন্সের বিপরীতে একাধিক ইজিবাইক চলাচল করায় সংকট সৃষ্টি হওয়ার কথা বলছেন খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের ডিসি মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ইজিবাইকের ইঞ্জিন বা চেসিস নম্বর না থাকায় প্রতিটি গাড়ির লাইসেন্সই একই রকম। কোনো ইজিবাইক আটক করলে তারা লাইসেন্স দেখাচ্ছে বা পরে কোথাও থেকে নিয়ে আসছে। ইঞ্জিন বা চেসিস নম্বর না থাকায় ওই লাইসেন্স দেখেই ইজিবাইক ছেড়ে দিতে হচ্ছে। নিরাপদ সড়ক চাই খুলনা মহানগর শাখা সভাপতি এস এম ইকবাল হোসেন বিপ্লব জানান, শহরজুড়ে অবৈধ ইজিবাইক চলাচলে পরিবহন সেক্টরের সিন্ডিকেট কাজ করছে। শহরে একসময় রূপসা থেকে ফুলতলা পর্যন্ত ৩০-৩৫টি টাউন সার্ভিস বাস চলাচল করত। পেশীশক্তির জোরে এগুলোকে বন্ধ করা হয়েছে। তার জায়গায় ইজিবাইক ও মাহেন্দ্র চালকদের কাছ থেকে সমিতির নামে চাঁদা আদায় করা হয়। তিনি বলেন, খুলনায় অবৈধ ইজিবাইক নিয়ন্ত্রণে যথাযথ ও সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।