বৃহস্পতিবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

টিকিট কেলেঙ্কারিতে ফেঁসেছেন খুলনা রেলস্টেশনের মাস্টার

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা

খুলনা রেলস্টেশনে টিকিট সিন্ডিকেট, নানা অনিয়ম ও স্টেশনের বিভিন্ন বাতি জ্বালানোর জন্য বরাদ্দ তেলের টাকা ভাগাভাগিতে এবার নিজেই ফেঁসেছেন স্টেশন মাস্টার মানিকচন্দ্র সরকার। প্রতি মাসে ১৪০ লিটার কেরোসিন তেলের টাকা ‘স্বচ্ছ পন্থায়’ ব্যয় না করা ও কর্মচারীদের অনুকূলে বরাদ্দ ২ ভাগ টিকিটের ‘অস্বচ্ছ বণ্টনের’ কারণে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি। এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগের তদন্তে দুর্নীতি দমন কমিশনকে সহযোগিতার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ রেলওয়ের (পাকশী) সহকারী পরিবহন কর্মকর্তা-১ মো. সাজেদুল ইসলাম ১৫ সেপ্টেম্বর মানিকচন্দ্র সরকারকে দেওয়া চিঠিতে এ নির্দেশ দিয়েছেন। জানা যায়, এর আগে ১৬ মে নিয়মবহির্ভূত ভিআইপিদের নামে টিকিট বরাদ্দ নিয়ে উচ্চমূল্যে বাইরে বিক্রির অভিযোগে দুই সহকারী স্টেশন মাস্টারসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে রেলওয়ে থানায় জিডি করেন স্টেশন মাস্টার মানিকচন্দ্র সরকার।

এতে বলা হয়- সহকারী স্টেশন মাস্টার আশিক আহম্মেদ ও জাকির হোসেন, শ্রমিক নেতা (টিএক্সআর) বায়তুল ইসলাম, ট্রলিম্যান জাফর ইকবাল এবং তোতা মিয়া সরাসরি টিকিট কালোবাজারিতে জড়িত।

এ নিয়ে ক্ষোভের সৃষ্টি হলে ১৯ মে পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক মো. শাহীদুল ইসলামের স্বাক্ষরিত আদেশে সহকারী দুই স্টেশন মাস্টারসহ শ্রমিক নেতা বায়তুল ইসলাম, জাফর ইকবাল ও স্টেশন মাস্টারের ‘বিশেষ ঘনিষ্ঠজন’ বলে পরিচিত লোকো খালাসি পপিদুর রহমানকে বদলি করা হয়। একই সঙ্গে ডিআরএম-পাকশী টিকিট কালোবাজারি দুর্নীতি অনিয়ম তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেন।

সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদ, সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে তদন্ত প্রতিবেদন ডিআরএম-পাকশী বরাবর দাখিল করা হয়েছে। কমিটির আহ্বায়ক এইএন-যশোর সহকারী প্রকৌশলী ওয়ালিউল হক তমাল তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়- স্টেশন মাস্টার মানিকচন্দ্র সরকার তথ্য আলামত ছাড়া সহকারী স্টেশন মাস্টারসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে জিডি করে রেলওয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছেন। রেলওয়ে স্টেশনের জন্য বরাদ্দ ১৪০ লিটার কেরোসিনের মূল্য বাবদ প্রতি মাসে ১১ হাজার ২০০ টাকা মানিকচন্দ্র সরকার উত্তোলন করেছেন ও স্বচ্ছ পন্থায় তা ব্যয় করা হয়নি। রেলওয়ে কর্মচারীদের অনুকূলে ২ ভাগ সংরক্ষিত টিকিট অস্বচ্ছভাবে বণ্টন করেছেন। এদিকে তদন্তে নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ায় প্রতিবেদন দাখিলের পর বদলি করা দুই সহকারী স্টেশন মাস্টার আশিক আহম্মেদকে খুলনা জংশনে ও জাকির হোসেনকে বেনাপোল স্টেশনে, বায়তুল ইসলামকে বেনাপোল ও জাফর ইকবালকে খুলনা স্টেশনে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।

তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক সহকারী প্রকৌশলী ওয়ালিউল হক তমাল জানান, তদন্ত প্রতিবেদনে টিকিট কালোবাজারি ঠেকাতে রেলওয়ের যে কর্মকর্তার নামে টিকিট বরাদ্দ হচ্ছে তাঁকে ফোন দিয়ে যাচাই করা ও দায়িত্বরত অবস্থায় বুকিং ক্লার্কদের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন ব্যবহার নিরুৎসাহ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। এখন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিভাগীয় শাস্তির ব্যবস্থা নেবেন।

স্টেশন মাস্টার মানিকচন্দ্র সরকার জানান, খুলনায় টিকিট কালোবাজারি বন্ধে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তিনি জিডি করেছিলেন। এখন তাঁকেই ফাঁসানোর চেষ্টা চলছে। এত দিন তেলের বরাদ্দের টাকা নিয়ে কোনো কথা হয়নি, কিন্তু টিকিট সিন্ডিকেটের বিষয় ধামাচাপা দিতে এ ঘটনা সামনে আনা হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর