সোমবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
সংক্ষিপ্ত

রেলে ব্যয় বাড়বে বছরে ২০ কোটি

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

রেলে নিয়োগ করা প্রায় ৮ হাজার অস্থায়ী কর্মচারীর চাকরির মেয়াদ শেষ হচ্ছে এ ডিসেম্বরে। এর পর আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে পদগুলোতে কর্মচারী নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। এতে ওই কর্মচারীদের চাকরি হারানোর পাশাপাশি বছরে প্রায় ২০ কোটি টাকা বেশি ব্যয় হবে সরকারের। পয়েন্টসম্যান, খালাসি, গেটকিপার, ওয়েম্যান, সিগন্যাল খালাসি, পোর্টার পদে কর্মরতরা কেউ কেউ ২০ বছর ধরে অস্থায়ীভাবে কর্মরত আছেন। এ দক্ষ শ্রমিকদের বাদ দিয়ে ঠিকাদার নিযুক্ত করে লোকবল সরবরাহ নিতে চায় রেল মন্ত্রণালয়। এটি হলে পুরো রেলসেবা ও রেলযাত্রীদের জীবন হুমকির মুখে পড়বে বলে মনে করছেন রেলওয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। রেল কর্তৃপক্ষ জানায়, রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলে আছে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার অস্থায়ী কর্মচারী। এর মধ্যে পশ্চিমাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলীর দফতরের আওতায় ২ হাজার ৫০৮ জন, সৈয়দপুর কারখানার আওতায় ৫০০, পাকশী বিভাগীয় যন্ত্র প্রকৌশল দফতরের আওতায় ২০৩, বিভাগীয় যন্ত্র প্রকৌশলের (সিঅ্যান্ডডব্লিউ) আওতায় ২১৩ জন। সিভিল বিভাগের আওতায় আছেন আরও প্রায় দেড় হাজার কর্মচারী। পূর্বাঞ্চলে আছেন আরও প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কর্মচারী। এসব কর্মচারীর পেছনে প্রতি মাসে প্রায় ১২ কোটি টাকা ব্যয়  হয়। কর্মচারীদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে এ টাকা দেওয়া হয়। সেই হিসাবে বছরে প্রায় ১৪৯ কোটি ৭৬ লাখ টাকা ব্যয় হয়। এ ৮ হাজার লোকবল ঠিকাদারের মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হলে ব্যয় বাড়বে অন্তত ২০ ভাগ। ঠিকাদারের লাভ, ভ্যাট-ট্যাক্সসহ আনুষঙ্গিক খরচে যাবে এ টাকা। বছরে অন্তত ২০ কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় হবে সরকারের।

অস্থায়ী কর্মচারী কল্যাণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মিঠুন হোসেন বলেন, ‘ঠিকাদার নিয়োগ দিয়ে জনবল সরবরাহ করা হলে তারা ইচ্ছামতো নিয়োগ দেবেন। এতে হুমকির মুখে পড়বে রেল বিভাগ। বাড়বে দুর্ঘটনা। নতুন নিয়োগ পাওয়া কর্মচারীরা রেলওয়ের সিগন্যাল বুঝবেন না, পয়েন্টসম্যানরা কাজ পারবেন না। এতে দুর্ঘটনা বাড়বে।’ হাসান নামের আরেক কর্মচারী বলেন, ‘আমি প্রায় তিন বছর ধরে কাজ করছি। পয়েন্টসম্যান হিসেবে কাজ শিখতেই লেগেছে দুই বছর। এখন শুনছি অন্যদের মতো আমাকেও বাদ দেওয়া হবে। নতুন লোক আমার এ কাজ কীভাবে করবেন। তার তো কাজ শিখতেই অন্তত দুই বছর চলে যাবে।’

রেলওয়ে শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আকতার আলী বলেন, রেল বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান। অভিজ্ঞদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজে লাগানো হয়। অস্থায়ী কর্মচারীদের সর্বনিম্ন তিন বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে। অনেকের ১০-২০ বছরেরও আছে। দক্ষতা না থাকলে কোনো কর্মচারী কাজে অংশ নিতে পারে না। এসব কর্মচারীকে বাদ দিয়ে অদক্ষ লোকবল নিয়োগ দিলে হুমকির মুখে পড়বে রেলসেবা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

পশ্চিমাঞ্চল রেলের মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদার বলেন, ‘আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে জনবল নিয়োগ দেওয়া হলে ব্যয় বাড়বে অন্তত ১৫ ভাগ। এর বাইরেও নানা খরচ যুক্ত হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের কারণে রেল কর্তৃপক্ষ সেই পথেই হাঁটছেন। আমাদের কিছু করার নেই।’

সর্বশেষ খবর