বৃহস্পতিবার, ৫ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

তিল ধারণের ঠাঁই নেই রমেকে বাড়ছে আগুনে পোড়া রোগী

নজরুল মৃধা, রংপুর

তিল ধারণের ঠাঁই নেই রমেকে বাড়ছে আগুনে পোড়া রোগী

শীতজনিত রোগের কারণে রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। শিশু রোগী ও স্বজনদের হাহাকার উঠেছে শিশু বিভাগে। এ ছাড়া ১২ বেডে বার্ন ইউনিটে রোগীর স্থানসংকুলান না হওয়ায় হাসপাতালের অন্য ওয়ার্ডগুলোয় আগুনে পোড়া রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। মেডিসিন ওয়ার্ডে ঠাঁই না পেয়ে অনেক রোগীকে বারান্দায় চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। তবে হাসপাতালের পরিচালক ডা. শরিফুল আলম বলেছেন, ‘রোগীর সংখ্যা যা-ই থাকুক না কেন আমরা চিকিৎসা দিতে প্রস্তুত।’ গতকাল দুপুরে সরেজমিন হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে এমন চিত্র।

১ হাজার শয্যার রমেক হাসপাতাল হলেও এখানে এখন প্রায় ২ হাজার রোগীকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি রোগী রয়েছে শিশু ওয়ার্ডে। ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে কয়েক শ শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় দুটি শিশু ওয়ার্ডে ৮৩ রোগী ভর্তি হয়েছে। হাসপাতালের তৃতীয় তলায় ৯ নম্বর শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেছে ওই ওয়ার্ডে বেড রয়েছে ৪০টি। সেখানে গতকাল দুপুর পর্যন্ত ১২৮ শিশুকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। ধারণক্ষমতার তিন গুণ বেশি রোগী নিয়ে ওয়ার্ডের চিকিৎসক, নার্স সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছিলেন। ওই ওয়ার্ডে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ২৮ শিশু ভর্তি হয়েছে। এসব শিশুর বেশির ভাগ ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। ওই ওয়ার্ডে কথা হয় ভক্তিরানী নামে এক মায়ের সঙ্গে। তার বাড়ি দিনাজপুর জেলায়। বমি-কাশি বন্ধ না হওয়ায় বিষ্ণুপ্রিয়া নামে শিশুকে চার দিন আগে রমেক হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। শিশুটির পরিবারের লোকজনও এসেছে। বিষ্ণুপ্রিয়ার মতো বেশির ভাগ শিশুই ওই ওয়ার্ডে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে।

১০ নম্বর শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায় একই চিত্র। ওই ওয়ার্ডে ধারণক্ষমতা ৪০ রোগী। সেখানে চিকিৎসা নিচ্ছে ৮৬ শিশু। এসব শিশুর ৫৫ জনই গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। নীলফারীর ডালিয়া থেকে ১২ বছর বয়সী অন্তু, লালমনিরহাট থেকে আসা পাঁচ মাস বয়সী ইমতি ওই ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিচ্ছে। ইমতি ১০ দিন আগে ভর্তি হয়েছে। তার ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিয়েছে। তাদের অভিভাবকরা বলেন, ঠান্ডার কারণে শিশু অসুস্থ হয়ে পড়লে তারা রমেক হাসপাতালে সন্তানকে ভর্তি করান।

হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে রোগীধারণ ক্ষমতা ১২। সেখানে সংকটাপন্ন রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া আগুনে পোড়া রোগীদের ৬, ১৫ ও ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেওয়া হয়। বর্তমানে শীত থেকে বাঁচতে আগুনের উত্তাপ নেওয়া রোগী রয়েছেন ২৭ জন। নীলফামারীর নাজিনুর রহমান তার পাঁচ বছরের মেয়ে জান্নাতুন মুনতাহাকে নিয়ে এ হাসপাতালে এসেছেন শনিবার। আগুন পোহাতে গিয়ে দগ্ধ হয় জান্নাতুন। তার দেহের নিম্নাংশ পুড়ে গেছে। অবস্থা আশঙ্কাজনক।

শিশুটির বাবা জানান, নীলফামারী থেকে মেয়ের চিকিৎসার জন্য পরিবারের পাঁচ-ছয় জন হাসপাতালে অবস্থান করছেন। এতে প্রচুর টাকা ব্যয় হচ্ছে।

হাসপাতালে মেডিসিন ওয়ার্ডে স্থানসংকুলান না হওয়ায় ওয়ার্ডের বারান্দায় রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এক রোগীর স্বজন আলতাফ হোসেন জানান, বেড না পাওয়ায় তারা বাধ্য হয়ে শীতের মধ্যে বারান্দায় চিকিৎসা নিচ্ছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর