শনিবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

৯ গাড়ির জায়গায় এখন ১৫০ গাড়ি পার্কিং

মাহবুব মমতাজী

৯ গাড়ির জায়গায় এখন ১৫০ গাড়ি পার্কিং

রাজধানীতে যানজটের সমস্যা নতুন নয়। সঙ্গে রয়েছে গাড়ি রাখার সমস্যাও। পার্কিংয়ের ভালো ব্যবস্থা না থাকায় অনেকে যেখানে সেখানে গাড়ি রাখেন। ফলে যানজটে সমস্যা আরও বাড়ে, এই সমস্যা মিটাতে পুলিশ সদর দফতরে চালু হয়েছে ১৬ তলা মাল্টিলেভেল কার পার্কিং। উন্নত দেশে এমন প্রযুক্তি চোখে পড়লেও, আমাদের দেশে কেবলমাত্র শুরু হয়েছে এর ব্যবহার। এতে যেমন সুবিধা, তেমনি জায়গার অপচয়ও ঠেকাবে। একই সঙ্গে সুরক্ষিত রাখবে গাড়ি। যা পুরোপুরি ডিজিটাল পদ্ধতিতে পরিচালিত।

পুলিশ সদর দফতর বলছে, এখানে রয়েছে পাঁচটি লিফট, প্রতিটিতে ৩০টি করে ১৫০টি গাড়ি পার্ক করা যায়। গাড়ি আসার পর কার্ড পাঞ্চ করলে সিস্টেম গাড়িগুলোকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে রেখে দেয় নির্দিষ্ট জায়গায়। আবার যখন প্রয়োজন তখন কার্ড পাঞ্চ করলেই সেই গাড়ি চলে আসে নিচে। নিচ তলা থেকে ১৬তলা পর্যন্ত প্রতিটি গাড়ি পার্কিং করতে সময় লাগে ১ মিনিট ৫২ সেকেন্ড। নিচতলা থেকে ৮তলা পর্যন্ত ১ মিনিট ৩০ সেকেন্ড। আর নিচতলা থেকে দ্বিতীয় তলা পর্যন্ত মাত্র ৫২ সেকেন্ড সময় লাগে। ৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে মাল্টিলেভেল কার পার্কিং নির্মাণের ফলে গাড়িগুলো অফিস কাম্পাউন্ডের মধ্যে নিরাপদে থাকছে। এ বিষয়ে পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত ডিআইজি ড. শোয়েব রিয়াজ আলম বলেন, আমরা কার পার্কিংয়ের যে জায়গাটিতে দাঁড়িয়ে আছি, এখানে সাধারণভাবে ৯টি গাড়ি রাখা যেত। এখন একই জায়গায় ১৫০টি গাড়ি পার্কিং করা যাবে। এই অল্প জায়গায় যে খরচ হয়েছে, এর সঙ্গে যদি জমির হিসাব করে দেখি তাতে আমাদের ৯ থেকে ১০ গুণ টাকা সাশ্রয় হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে এমন কাঠামো তৈরি করা হলে ঢাকা শহরে গাড়ি পার্কিং এবং যানজটের সমস্যা অনেকটাই নিরসন হবে বলে মনে করেন অতিরিক্ত ডিআইজি ড. শোয়েব। তিনি বলেন, এখানে দুটি নিরাপত্তা। একটি গাড়ির, অন্যটি মানুষের। এই পার্কিংয়ের স্থানে মানুষকে ঢুকতেই হয় না। যদি কোনো মানুষ ঢুকে পড়ে তাহলে মেশিন স্বয়ংক্রিয়ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে। কাজেই মানুষের নিরাপত্তা এখানে শতভাগ বলতে পারি। আর গাড়ির নিরাপত্তার বিষয়ে বলা যায়- আমরা এখনো কোনো দুর্ঘটনার খবর পাইনি। সে ক্ষেত্রেও আমরা নিরাপদ। গত ২২ ডিসেম্বর এই মাল্টিলেভেল কার পার্কিং উদ্বোধন করেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।

উদ্বোধনকালে তিনি বলেছিলেন, পুলিশের নিজস্ব কম্পাউন্ডে স্থান সংকুলান না হওয়ায় গাড়ি পার্কিংয়ের সমস্যা রয়েছে। পুলিশের গাড়ি অফিস কম্পাউন্ডের বাইরে পার্ক করতে হয়। মাল্টিলেভেল কার পার্কিং নির্মাণের মতো উদ্ভাবনী উদ্যোগ গ্রহণ করায় পার্কিংয়ের জটিলতা নিরসন হবে। জানা গেছে, পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের দফতরেও এ ধরনের বহুতল পার্কিংয়ের কাজ চলছে। রাজারবাগ পুলিশ লাইনস এবং উত্তরা এপিবিএনে মাল্টিলেভেল কার পার্কিংয়ের কাজ চলছে। প্রতিটির খরচ ধরা হয়েছে প্রায় ২০ কোটি টাকা। এগুলো ১৬ তলাবিশিষ্ট হবে, ৯০টি গাড়ি রাখার ব্যবস্থা থাকবে। মালিবাগ সিআইডি কার্যালয় এবং স্পেশাল ব্রাঞ্চের জন্য এ ধরনের মাল্টিলেভেল কার পার্কিং করার চিন্তা চলছে। সেগুলোতে খরচ ধরা হয়েছে ২৫ কোটি টাকার মতো। পুলিশ সদর দফতরে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, মাল্টিলেভেল পার্কিংয়ের নির্দিষ্ট স্থানে গাড়িটি রেখে চালক একটি কার্ড সংগ্রহ করেন। সেই কার্ড পাঞ্চ করার সঙ্গে সঙ্গে খালি থাকা পার্কিংয়ে চলে যাচ্ছে গাড়ি। আবার যখন চালক গাড়িটি নেওয়ার জন্য আসলেন, নির্দিষ্ট স্থানে পাঞ্চ করলে গাড়িটি এসে যে জায়গায় চালক প্রথমে রেখেছিলেন সেখানে চলে আসে। সেখান থেকে চালক গাড়িটি নিয়ে বের হয়ে চলে যান। পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, ১৫০টি গাড়ি রাখার জন্য যদি রাজধানীর কোথাও জমি অধিগ্রহণ করতে হতো তাহলে প্রায় ৩২০ কোটি টাকার প্রয়োজন হতো। আর ১৬তলা ১৫০টি গাড়ি রাখার ভবন এবং যন্ত্রপাতি সেটআপ করতে খরচ হয়েছে ৩৪ কোটি টাকার কিছু বেশি। আর এর রক্ষণাবেক্ষণে বছরে ৪-৫ লাখ টাকার দরকার হবে। এতে গাড়ি থাকবে নিরাপদ, আর চালককেও ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতে হবে না।

 

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর