মঙ্গলবার, ১১ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা

হঠাৎ অপ্রতিরোধ্য ছিনতাইকারী

♦ ঈদ সামনে রেখে অপরাধ বেড়েছে রাজশাহী ও চট্টগ্রামে ♦ সতর্ক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম

রাজশাহী নগরীতে অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে ছিনতাইকারীরা। এক দিনে নগরীর পাঁচটি স্থানে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় জনতার ধাওয়া খেয়ে পালানোর সময় ডাবতোলা এলাকায় এক ছিনতাইকারী নিহত হয়েছে। এ ছাড়া জনতার রোষানলে পড়ে মোটরসাইকেল রেখে পালিয়েছে তিন ছিনতাইকারী। এতসব ঘটনার পরও থানায় অভিযোগ করতে গেলে পুলিশ কোনো অভিযোগ নেয়নি।স্থানীয়রা জানান, ঈদ ঘিরে আবারও দামি মোটরসাইকেল নিয়ে রাজশাহীতে মাঠে নেমেছে এসব ছিনতাইকারী। মূলত ঈদ মার্কেটে যাওয়া নারীদের টার্গেট করে তৎপরতা চালাচ্ছে তারা। নগরীর কলাবাগান, আমবাগান, ডাবতোলা, বহরমপুর, ডিঙ্গাডোবা, মতিহারসহ বিভিন্ন এলাকার এ চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ হয়ে নামছে মাঠে। সবচেয়ে বেশি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে নগরীর রাজপাড়া, বোয়ালিয়া ও শাহ মখদুম এলাকায়। শুক্রবার সন্ধ্যায় ছিনতাই করে পালানোর সময় অনিক (১৯) নামে নগরীর ডাবতোলা এলাকার এক ছিনতাইকারী মোটরসাইকেলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হন। নগরীর শাহ মখদুম এলাকায় এক নারীর ভ্যানিটি ভ্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে পালানোর সময় প্রাচীরের সঙ্গে ধাক্কা লেগে ওই ছিনতাইকারীর মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় তার আরেক সহযোগী মারুফ হোসেন (১৮) গুরুতর আহত হন। এর পরের দিন শনিবার রাজপাড়া থানা এলাকায় এক দিনে তিনটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে বিলশিমলা এলাকায় দুই পথচারী যুবকের কাছ থেকে দুটি মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে মোটরসাইকেলে পালিয়ে যায় তিন ছিনতাইকারী। নগরীর তেরোখাদিয়া এলাকায় এক নারীর ভ্যানিটি ব্যাগ নিয়ে পালানোর সময় স্থানীয়রা ধাওয়া দিলে মোটরসাইকেল ফেলে পালিয়ে যায় তিন ছিনতাইকারী। এর আগে আকবর আলী নামের এক বৃদ্ধের অটোরিকশা ছিনতাই করে পালিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা। নগরীর ১৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনোয়ার হোসেন আনার বলেন, বেশকিছু দিন ধরে রাজশাহীতে ছিনতাই ব্যাপক বেড়েছে। গত ১৫ দিনে শুধু নগরীর রাজপাড়া এলাকাতেই অন্তত ১০টি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু একজন ছিনতাইকারীকেও পুলিশ আটক করতে পারেনি।নগর পুলিশের মুখপাত্র রফিকুল আলম বলেন, ‘একের পর এক ছিনতাইয়ের অভিযোগ পাচ্ছি। কেন হঠাৎ এতো ছিনতাই হচ্ছে, সেগুলো কীভাবে রোধ করা যায়, তা নিয়ে পুলিশ কাজ করছে।’

ঈদ সামনে রেখে বেপরোয়া ছিনতাই ও মলমপার্টি : ঈদ সামনে রেখে চট্টগ্রামে বেড়েছে ছিনতাই, মলমপার্টিসহ নানা অপরাধী চক্রের তৎপরতা। গত ১৫ দিনে নগরী ও জেলার বিভিন্ন এলাকায় এ ধরনের অপরাধী চক্রের শিকার হয়েছেন শতাধিক ব্যক্তি। হঠাৎ অপরাধী চক্র সক্রিয় হওয়ায় তৎপরতা জোরদার করেছে চট্টগ্রামের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এরই মধ্যে ছিনতাই, অজ্ঞানপার্টি, মলমপার্টিসহ মৌসুমি অপরাধীদের বিরুদ্ধে শুরু করেছে বিশেষ অভিযান। পাশাপাশি চিহ্নিত স্পটগুলোতে বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা তৎপরতা। র‌্যাব-৭ অধিনায়ক লে. কর্নেল মাহবুবুল আলম বলেন, ‘ঈদ কেন্দ্র করে ছিনতাই, ডাকাতি এবং অজ্ঞানপার্টির তৎপরতা ঠেকাতে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে চিহ্নিত অপরাধীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে র‌্যাব। বেশকিছু অপরাধীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ছাড়া চিহ্নিত অপরাধ স্পট এবং শপিং মলগুলোত গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে।’ চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায় বলেন, ‘রমজান ও ঈদকে দুইভাবে বিভক্ত করে নিরাপত্তা পরিকল্পনা সাজানো হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে নিয়মিত সদস্যদের পাশাপাশি অতিরিক্ত সাড়ে ছয় শত সদস্য দায়িত্ব পালন করছে। পাশাপাশি চিহ্নিত অপরাধীদের গ্রেফতার করতে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে।’ জানা যায়, পবিত্র রমজান ও ঈদ ঘিরে চট্টগ্রাম নগরী এবং জেলায় বেপরোয়া হয়ে উঠে ছিনতাই, অজ্ঞানপার্টি, মলমপার্টি, গামছাপার্টি ও টানাপার্টিসহ নানা অপরাধী চক্র।

 গত ১৫ দিনে নগরী ও জেলার বিভিন্ন এলাকায় ছিনতাই, অজ্ঞানপার্টি, টানাপার্টিসহ এ ধরনের অপরাধী চক্রের শিকার হয়েছেন শতাধিক ব্যক্তি। এসব ঘটনার বেশির ভাগই সংগঠিত হয়েছে শপিং মল, বাস স্টেশন, রেল স্টেশন, বস্তির আশপাশ ও নির্জন এলাকায়। এরই মধ্যে নগরীর অপরাধ প্রবণ শতাধিক স্পট চিহ্নিত করেছে পুলিশ। এসব স্পটের মধ্যে রয়েছে নগরীর আগ্রাবাদ মোড়, আগ্রাবাদ এক্সেস রোড, ছোটপুল, বড়পুল, হালিশহর, স্টেশন রোড, পুরাতন স্টেশন,  নিউ মার্কেট, টাইগারপাস, সিআরবি, বন্দর ফটক, ইপিজেড, অলংকার, এ কে খান মোড়, নতুন রেল স্টেশনের মুখ, নিউমার্কেট, কোতোয়ালি, লালদীঘির পাড়, প্রবর্তক, কাতালগঞ্জ, বক্সিরহাট বিট, ষোলশহর ও জিইসির মোড় অন্যতম। অপরাধ ঠেকাতে নিয়মিত টহলের পাশাপাশি নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে ফুট টহল এবং মোটরসাইকেল টহল জোরদার করা হয়েছে। এ ছাড়া ছিনতাই ও অপরাধ প্রবণ এলাকাকে রাখা হয়েছে পুলিশের বিশেষ নজরদারি। বসানো হয়েছে পুলিশের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। ঈদের ছুটিতে ফাঁকা নগরীতে বাসা বাড়ি ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে চুরি ঠেকাতে থাকবে বিশেষ টহল দল। ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক এবং চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে হাইওয়ে পুলিশের পাশাপাশি দায়িত্বে পুলিশ নিয়োজিত করা হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর