সরকারি হিসাব অনুযায়ী চলতি বছরে সিলেটে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ৩৫০ জন। এর মধ্যে গেল নভেম্বরেই আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন ১৩৪ জন। বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে প্রতিদিন আক্রান্ত শনাক্ত হলেও সে পরিসংখ্যান যথাযথভাবে যাচ্ছে না সরকারি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে। ফলে আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা সরকারি হিসাবের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি বলে মনে করা হচ্ছে। ওষুধ, জনবল ও বরাদ্দের স্বল্পতার কারণে চলতি বছর মশক নিধনে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেনি সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)। ফলে মশার উপদ্রব ও এডিস মশার বংশবৃদ্ধির কারণে বেড়েছে ডেঙ্গু-এমন দাবি নগরবাসীর। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, ২০২৩ সালে সিলেট বিভাগে ডেঙ্গু আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছিলেন ১ হাজার ৪৩৫ জন। সেই হিসাবে চলতি বছরে আক্রান্তের সংখ্যা অনেক কম। কিন্তু গত নভেম্বর থেকে প্রতিদিন যেভাবে আক্রান্ত বাড়ছে তাতে সিলেটবাসীর মনে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। বছরের ১০ মাসে যেখানে আক্রান্ত ছিল প্রায় ৩৫০, সেখানে শুধু নভেম্বরে শনাক্ত হয়েছেন ১৩৪ জন। গত বৃহস্পতিবার এক দিনে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৯ জন। এর মধ্যে সাতজন বিভাগের তিন জেলার ও দুজন সিলেট নগরীর বাসিন্দা।
সূত্র জানায়, গত বছর ডেঙ্গু আক্রান্তদের বেশির ভাগেরই ‘ট্রাভেল হিস্ট্রি’ ছিল। অর্থাৎ বাইরের জেলা থেকে আক্রান্ত হয়ে তারা সিলেট এসেছিলেন। কিন্তু এবারের চিত্র উল্টো। আক্রান্তদের বেশির ভাগেরই ‘ট্রাভেল হিস্ট্রি’ নেই। অর্থাৎ সিলেট বিভাগে নিজেদের বাসাবাড়ি ও কর্মস্থলে আক্রান্ত হয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে ভাবাচ্ছে সংশ্লিষ্টদের। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারি হিসাবে চলতি বছর আক্রান্তের সংখ্যা ৩০৮ জন হলেও প্রকৃতপক্ষে এ সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি। গত অক্টোবর থেকে সিলেটে ঘরে ঘরে জ্বরের প্রকোপ দেখা দেয়। প্রচণ্ড জ্বর নিয়ে বেশির ভাগ রোগী প্রাইভেট চেম্বারে চিকিৎসক দেখান। পরীক্ষায় ‘ডেঙ্গু পজিটিভ’ এলে ওষুধ নিয়ে তারা বাসায় চিকিৎসা নেন। অবস্থার অবনতি হলে ভর্তি হন হাসপাতালে। যেসব রোগী হাসপাতাল-ক্লিনিকে ভর্তি হন তাদের হিসাব যায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে। নিয়মানুযায়ী কোনো ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষায় কারও ‘ডেঙ্গু পজিটিভ’ শনাক্ত হলে তা স্বাস্থ্য বিভাগের সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে অবগত করার কথা।
কিন্তু সিলেটের হাতে গোনা কয়েকটি হাসপাতাল-ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার অনিয়মিতভাবে সেই তথ্য দিচ্ছে। ফলে ডেঙ্গু আক্রান্তদের সঠিক পরিসংখ্যান মিলছে না।
সিলেটে হঠাৎ ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে সারা বছর মশার ওষুধ না ছিটানোকে দায়ী করছেন নগরবাসী। সিসিকের স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র জানায়, মশক নিধনে যেখানে অন্তত ৫ শতাধিক কর্মীর দরকার সেখানে রয়েছেন মাত্র দুজন। এ ছাড়া গত ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে মশক নিধনের ওষুধ কেনার জন্য বরাদ্দ ছিল না ‘কানাকড়ি’ও। এরপরও জোড়াতালি দিয়ে বিভিন্ন সময় মশক নিধনের কাজ চালানো হলেও কাঙ্ক্ষিত ফল মেলেনি।
সিসিকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলাম জানান, মশক নিধনে সিসিকের সুষ্ঠু পরিকল্পনা দরকার। এরকম একটি পরিকল্পনা জমা দেওয়া হলেও তা এখনো পাস হয়নি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মশা মারার ওষুধ কেনার জন্য কোনো বরাদ্দ ছিল না। মশক নিধনের জন্য নগরভবনের কোনো জনবলও নেই। দিনমজুর দিয়ে কাজ করিয়ে কাঙ্ক্ষিত সুফল পাওয়া যায় না।
তিনি আরও বলেন, ‘সিলেটে ডেঙ্গু পরিস্থিতি এখনো আশঙ্কাজনক নয়। ওষুধ পাওয়ায় কয়েক দিনের মধ্যে নগরভবন থেকে মশক নিধন অভিযান শুরু হবে। এতে নগরবাসী মশার উপদ্রব থেকে রক্ষা পাওয়ার পাশাপাশি ডেঙ্গুও প্রতিরোধ করা সম্ভব বলে আমরা আশাবাদী।’ ডা. জাহিদ স্বীকার করে বলেন, ‘ডেঙ্গু আক্রান্তের সরকারি হিসাবে হেরফের রয়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠান আক্রান্তদের তথ্য যথাযথভাবে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে সরবরাহ করছে না।’