দুই হাত না থাকায় পা দিয়ে লিখে অন্য সবার মতো স্বাভাবিকভাবে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষা দিচ্ছে শিশু মুক্তামনি (১২)। পা দিয়ে লিখে শনিবার পঞ্চম পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে সে।
রবিবার গণিত পরীক্ষা দেয়ার মধ্য দিয়ে মুক্তামনি সম্পন্ন করবে ৬ বিষয়ের পরীক্ষা। ভালো ফলাফলেরও আশা রয়েছে তার।
বরিশালের হিজলা উপজেলার পূর্ব পত্তণীভাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির ছাত্রী মুক্তামনি। বাবা সেন্টু মিয়া ও মা ঝুমুর বেগম দম্পত্তির সন্তান মুক্তামনি। ঝুমুর ঢাকার সাভারে একটি গার্মেন্ট চাকরি করেন।
ঝুমুর বেগম বলেন, দুই বছর আগে তৃতীয় শ্রেণিতে অধ্যায়নরত অবস্থায় মুক্তা সাভারে আসে। সেখানে খেলার ছলে পাখি ধরতে গিয়ে দুই হাত দিয়ে বৈদ্যুতিক তার চেঁপে ধরে মুক্তা। এরপর থেকেই ধীরে ধীরে তার দুই হাত বিকল হয়ে যেতে শুরু করে। চিকিৎসার প্রয়োজনে প্রথমে কনুই থেকে দুটি হাত কেটে ফেলা হলেও ক্ষত ঠিক না হওয়ায় এক পর্যায়ে পুরোপুরি দুটো হাতই মুক্তার শরীর থেকে কেটে বাদ দিতে হয়েছে।
এরপর হিজলার পত্তণীভাঙ্গা গ্রামে দাদি জাহানারা বেগমের কাছে থেকে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠলে পুনরায় পড়াশোনা করতে চায় মুক্তা। মুক্তার ইচ্ছায় ২০১৮ সালে তাকে পূর্ব পত্তণীভাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণিতে ভর্তি করা হয়। ভর্তির পর থেকেই ডান পায়ের আঙ্গুলের ফাঁকে কলম দিয়ে লেখার অভ্যাস করতে থাকে মুক্তা। আর এখন হাতে লেখা যে কারো মতো স্বাভাবিক গতিতেই পা দিয়ে অনায়াসে লিখে যেতে পারে সে।
পূর্ব পত্তনীভাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাছিমা খানম বলেন, না দেখলে বিশ্বাস হবে না, মুক্তামনির পড়াশোনা করার ইচ্ছা শক্তি কতটা প্রবল। তাদের স্কুল থেকে এবারে ১৪জন শিক্ষার্থী পিইসি পরীক্ষা দিচ্ছে। এদের মধ্যে মুক্তার দুটি হাত না থাকায় পা দিয়েই সে লিখেই পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে সে। ওর (মুক্তা) পায়ের লেখাও অন্যদের হাতের লেখার চেয়ে অনেক সুন্দর। মুক্তামনি এতটাই ভালো ছাত্রী যে কখনো বিনা কারণে স্কুলে অনুপস্থিত থাকে না সে।
পত্তণীভাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পিইসি কেন্দ্রের প্রধান শিক্ষক সাহিদা ইয়াসমিন বলেন, যে কটা পরীক্ষা হয়েছে তার সবকটাতেই মুক্তামনি অংশ নিয়েছে। তার পা দিয়ে লেখা দেখে তিনিসহ অনেকেই হতবাক হন।
মুক্তার মা ঝুমুর বেগম বলেন, তার স্বামী তেমন কোন কাজকর্ম করতে পারেন না। নিজের সামান্য উপার্জনে দুই মেয়েকে পড়াশোনা করাতে তিনি হিমশিম খাচ্ছেন। তারপরও মেয়েদের আগ্রহের কারণে এখনও তিনি পড়াশোনা চালিয়ে নিচ্ছেন। তিনি মেয়েদের উচ্চশিক্ষিত করতে প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা কামনা করেন।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন