আধিপত্য বিস্তার, মাদকের আগ্রাসন, ছিনতাই, পারিবারিক বিরোধসহ নানা কারণে নাটোরে অনেক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। পুলিশের তথ্যমতে, বিদায়ী বছরে জেলায় ৪০টি হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। এতে চরম উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় রয়েছে নাটোরবাসী।
ন্যায় বিচারের দীর্ঘসূত্রতা পরিহার করে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করাসহ নৈতিক মূল্যবোধ, সহনশীলতার চর্চার মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডের মতো অপরাধমূলক প্রবণতা কমিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
পুলিশের হিসেব অনুযায়ী, এ বছর জেলায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মামলা হয়েছে ৪০টি। যার মধ্যে সদর থানায় ছয়টি, সিংড়া থানায় নয়টি, নলডাঙ্গা থানায় তিনটি, বড়াইগ্রামে আটটি, বাগাতিপাড়ায় একটি, লালপুরে ছয়টি আর গুরুদাসপুর থানায় সাতটি হত্যা মামলা দায়ের হয়।
বিশ্লেষকরা বলছেন, আধিপত্য বিস্তার, ছিনতাই, মাদকের আগ্রাসনসহ পারিবারিক বিরোধে প্রাণ হারাচ্ছে নারী, শিশুসহ খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। বিচারহীনতার দীর্ঘসূত্রতা পরিহার করে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করাসহ নৈতিক মূল্যবোধ, সহনশীলতার চর্চার মাধ্যমে হত্যাকাণ্ডের মতো অপরাধমূলক প্রবনতা কমিয়ে আনা সম্ভব।
নাটোর জজকোটের আইনজীবী এ্যাড. ভাস্কর বাগচী বলেন, আমরা এবার জানতে পেরেছি নাটোর এবার প্রায় ৪০টি হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হয়েছে। প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের পেছনে দেখা যাবে, এর পেছনে আছে ভূমি বিরোধ, মাদক, রাজনৈতিক প্রতিহিংসা এবং সামাজিক অস্থিরতাসহ নারী নির্যাতন। এইগুলো যদি সমাজ থেকে দ্রুত নিস্পত্তি করা যায় পাশাপাশি এই মামলার বিচারগুলো যদি দ্রুত নিম্পত্তি করা যায় তাহলে সমাজে দৃষ্টান্ত স্থাপন হবে। সেই সাথে মানুষের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা কমে আসবে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃৎশিল্প ও ভাস্কর্য বিভাগ- চারুকলা অনুষদের সহযোগি অধ্যাপক ড. একেএম আরিফুল ইসলাম আরিফ জানান, হত্যাকাণ্ড রোধ করা আইন-শৃঙ্খরা বাহিনীর একক দায়িত্ব নয়। এটা রোধে আমাদের সামাজিক দায়বদ্ধতা জাগ্রত করতে হবে। মানুষত্ববোধ জাগ্রত করতে হবে। সেই সাথে আমাদের সহনশীল হতে হবে। আমাদের আগামী প্রজন্মকে সহনশীল হবার জন্য উপদেশ দিতে হবে। তাদেরকে প্রকৃত মানুষত্ববোধ ও বিবেকবোধ সম্পন্ন মানুষ হিসাবে গড়ে তুলতে হবে। তাহলেই এ দেশটা সোনার বাংলা হিসাবে গড়ে উঠবে।
পাবনা মানসিক হাসপাতালের কনসালটেন্ট (সাইকিয়াট্রি) ডাঃ মাসুদ রানা সরকার বলেন, যে কোন হত্যাকাণ্ডের পেছনে শুধু যে মানসিক প্রবলেম আছে তা বলা মুসকিল। এখানে আইনের শাসনের অভাব থাকতে পারে। নৈতিক মুল্যবোধ অভাব, পারিবারিক অশান্তি, মাদকের আগ্রাসনের নানা কারণে হত্যার মতো জঘন্য ঘটনা ঘটে থাকে। এ থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, ইমাম, ফাদার, পুরোহিতসহ সকল ধর্মীয় লোকজনকে নৈতিক মূল্যবোধ সৃষ্টি জন্য কাজ করতে হবে। রাজনৈতিক ব্যক্তিদের এগিয়ে আসতে হবে। সেই সাথে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
খুনের মামলাগুলোর অগ্রগতি ভালো উল্লেখ করে জেলা পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা জানান, ২০১৯ সালে নাটোর জেলায় সংগঠিত ৪০টি হত্যাকাণ্ডের মধ্যে অধিকাংশ হত্যা রহস্য উন্মোচন করতে সক্ষম হয়েছি। যে হত্যা মামলাগুলো রহস্য উদঘাটিত হয়নি সে মামলাগুলো নিয়ে আমরা ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছি। হত্যাকাণ্ড যাতে না হতে পারে সে জন্য আমরা কাউন্সিলিং করছি এবং সাতটি থানায় ইউনিয়ন পর্যায়ে আমরা কমিউনিটি পুলিশিং সহ আমাদের তৎপরতা অব্যাহত রেখেছি। এভাবে কাজ করার ফলে আমরা হত্যাকান্ড কমাতে পারবো। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার কারণে নাটোরে ক্রমান্নয়ে হত্যার ঘটনা কমে যাচ্ছে।
বিডি প্রতিদিন/এ মজুমদার