বগুড়ার মহাস্থানগড়ে খননে পাওয়া গেল দেড় হাজার বছর আগের আটটি কূপ। সেই সঙ্গে পাওয়া গেছে মৃৎ পাত্র, মৃৎ পাত্রের ভগ্নাংশ, মাটির বড় একটি ডাবর (মটকা), পোড়া মাটির গুটিকা, নকশা করা ইট, কূপে ব্যবহার করা ইটসহ পোড়া মাটির পাত্র।
বগুড়ার মহাস্থান জাদুঘরের কাস্টোডিয়ান কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৮ নভেম্বর ২০১৯ থেকে বাংলাদেশ-ফ্রান্সের শুরু হওয়া যৌথ খননে এসব মিলেছে। খনন কাজ শেষ হয় ১৪ ডিসেম্বর। কিন্তু, খনন করা স্থানগুলো এখনো মাটি ভরাট করার কাজ চলছে। জেলা শহর থেকে প্রায় ১১ কিলোমিটার উত্তরে মহাস্থানগড়ের বৈরাগীর ভিটার দক্ষিণ পূর্বে (লইয়ের কুড়ি) অংশের ৫টি স্থানে খনন করা হয়। এরমধ্যে ফ্রান্সের দল তিনটি এবং বাংলাদেশের প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর দুটি স্থানে খনন কাজ করে। ৫টি স্থান থেকে খ্রিস্টপূর্বের প্রায় ৩০০ বছর আগের মৌর্য্য যুগের নিদর্শন পাওয়া গেছে। এর সঙ্গে কিছু নিদর্শন ও অবকাঠামো পাওয়া গেছে যা, সুঙ্গ এবং পাল সম্রাজের সঙ্গে মিল রয়েছে। খনন স্থানগুলো সংরক্ষণের জন্য মাটি ভরাট করে রাখা হবে।
মহাস্থানগড় ঐতিহাসিক স্থান হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে খনন করা হয়েছে। খননের বিভিন্ন পর্যায়ে পাওয়া গেছে বিভিন্ন শতাব্দির অসংখ্য নিদর্শন। যা থেকে মহাস্থানগড়ের সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী রাজা-মহারাজা ও তৎকালীন সমাজ ব্যবস্থার শিক্ষা সংস্কৃতির ধারণাও পাওয়া যাচ্ছে। ১৯৯৩ সাল থেকে বাংলাদেশ ও ফ্রান্স সরকার যৌথভাবে খনন কাজ পরিচালনা করে আসছে মহাস্থানগড়ে। পাশাপাশি নিজস্ব অর্থায়নেও প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর খনন পরিচালনা করছে।
খননকালে পাওয়া প্রত্নতাত্ত্বিক সামগ্রী দেখে ধারণা করা হচ্ছে, এসব মৌর্য যুগের এবং ওই সময়েও সমাজ ব্যবস্থা, মানব সভ্যাতায় সংস্কৃতি ছিল সমৃদ্ধ এবং যা আড়াই হাজার বছর আগের মৌর্য যুগের প্রাচীন স্থাপত্য নিদর্শন।
এর আগে বৈরাগীর ভিটায় ২০১৭ সালে খনন করে প্রায় ১৩০০ বছর আগে নির্মিত তিনটি বৌদ্ধ মন্দিরের নিদর্শন মিলে। এবার ওই খননস্থানের দক্ষিণ-পূর্ব পাশে খনন করা হয়। খননকালে পাশাপাশি পাঁচটি জায়গায় মোট আটটি কূপের সন্ধান মিলেছে। সেই সঙ্গে পাওয়া গেছে অসংখ্য পোড়া মাটির পাত্র।
খনন দলের সদস্য বগুড়া প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের সহকারী পরিচালক মজিবুর রহমান জানান, বিগত দিনে যেসব কূপের সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল, তা থেকে এবার আলাদা কূপ পাওয়া গেছে। এবারই প্রথম ইটের গাঁথুনিযুক্ত একটি কূপের সন্ধান মিলেছে বৈরাগীর ভিটায়। এই কূপের প্রায় ৬ ফুট গভীর পর্যন্ত খনন করে ৪৬ সারি ইটের গাঁথুনি দেখা গেছে। বাকি ৭টি কূপ পানি পানের জন্য বা পাতকুয়া হিসেবে ব্যবহার করা হতো বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তিনি জানান, ইটের গাঁথুনি বিশিষ্ট কূপটি সপ্তম থেকে অষ্টম শতাব্দি বা পাল আমলের বলে ধারণা করা হচ্ছে। বাকি পাওয়া ইটের অবকাঠামো ও পোড়া মাটির ভগ্নাংশের সঙ্গে খ্রিস্টপূর্বের মৌর্য্য যুগের সঙ্গে মিল রয়েছে। সেখানে যেসব নিদর্শন বা নমুনা মিলেছে তা প্রমাণ করে খ্রিস্টের জন্মের পূর্বেও এই জনপদ ছিল সমৃদ্ধ।
তিনি আরও জানান, এবার খননে সেখানে পোড়ামাটির গুটিকা, অবকাঠামো, কুয়া, ইটের গাঁথুনি, মৃৎপাত্র, নকশা করা ইটসহ আরও অন্যান্য নিদর্শন মিলেছে। খনন কাজ এখন শেষ খননস্থলগুলো সংরক্ষণের জন্য মাটি ভরাট করে রাখা হবে।
বগুড়ার মহাস্থানগড়ে যৌথ খননে ফ্রান্সের পক্ষে দল নেতা কলিন লেফ্রাংক। তার সঙ্গে ছিলেন ফ্রান্সের এলবো ফ্রাংকোয়িস ও আতোয়ান। বাংলাদেশ দলের পক্ষে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের আঞ্চলিক পরিচালক ড. নাহিদ সুলতানার সঙ্গে ছিলেন প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের সহকারী পরিচালক মজিবুর রহমান, শাহজাদপুর জাদুঘরের কস্টোডিয়ান মোহাম্মদ যায়েদ, মহাস্থান জাদুঘরের কস্টোডিয়ান রাজিয়া সুলতানাসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা।
বিডি প্রতিদিন/আরাফাত