ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার চরযশোরদী ইউনিয়নের ধর্মদি গ্রামের বাসিন্দা রওশন আরা বেগম (৫৩)। স্বামী কুদ্দুস মোল্যা মারা গেছেন দীর্ঘ ২৫ বছর আগে। এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে সেই থেকেই বেশ কষ্টের মধ্যে দিন কাটাতে হতো রওশন আরা বেগমের।
মানুষের বাড়িতে ঝি এর কাজ করে ছেলে-মেয়েকে নিয়ে কোন রকমে সংসার চলছিল। স্বামীর এক টুকরো জমিতে থাকা ছোট্ট ঘরেই থাকতো ছেলে-মেয়েকে নিয়ে। গত কয়েক বছর আগে ছেলে ও মেয়ের বিয়ে হওয়ায় তারা আলাদা সংসার পেতেছেন। ফলে বেশ অসুবিধার মধ্যে পড়তে হয় অসহায়, হত-দরিদ্র রওশন আরাকে। এরই মধ্যে শরীরে নানা রোগ বাসা বেঁধেছে। আগের মতো আর কাজ করতে পারেন না।
কয়েক মাস আগেও মানুষের বাড়িতে কাজ করে যা পেতেন তা দিয়েই কোন রকমে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটতো তার। সংসারে অভাবের কথা চিন্তা করে কিছু একটা করার কথা ভাবেন রওশন আরা। কিন্তু কি করবেন, কিভাবে করবেন এমন কথা ভাবতেই স্থানীয় এক ব্যক্তি তাকে পাপড় বানিয়ে তা বিক্রি করার কথা বলেন। ব্যবসা করতে গেলে টাকার দরকার, কিন্তু তার কাছে কোন টাকা নেই। এসময় পাপড় বানানোর জন্য কিছু টাকা দেন রওশন আরাকে। সেই থেকে শুরু রওশন আরার পাপড় বানানোর কাজ।
রওশন আরা বেগম জানান, এখন প্রতিদিন ২ কেজি পাপড় বানাতে পারেন তিনি। আটা, ময়দা, রংসহ অন্যান্য জিনিষ মিশিয়ে পাপড় বানিয়ে তা রোদে শুকানো হয়। পরে সেই পাপড় পাইকারী বিক্রি করে থাকেন তিনি। প্রতি কেজি পাপড় বিক্রি করেন ৭০ টাকা কেজিতে। ধার-দেনা করে কিছু টাকা দিয়েই তিনি শুরু করেন পাপড় বানানোর ব্যবসা। এখন তার পাপড়ের বেশ চাহিদা রয়েছে। বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন তার হরেক রংয়ের বানানো পাপড় কিনতে আসেন। কিন্তু পুজির অভাবে তিনি চাহিদা মতো পাপড় বানাতে পারেন না।
রওশন আরা জানান, তিনি একজন বিধবা। অসহায় অবস্থার মধ্যে থাকলেও পাননি বিধবা ভাতার কোন কার্ড। শরীরে নানা রোগ বাসা বেঁধেছে ফলে চিকিৎসার জন্য দরকার অনেক টাকার। কিন্তু টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারেন না। তিনি বলেন, সরকার কিংবা কোন ব্যক্তি তাকে আর্থিক সহযোগিতা করতো তাহলে তিনি আরও লোক নিয়ে পাপড় বানিয়ে তা বিক্রি করে সচ্ছলতা ফেরাতে পারতেন।
রওশন আরা আরও জানান, পাপড় বানিয়ে তা বিক্রি করে নিজের ভাগ্য বদলের পাশাপাশি গ্রামের অনেক মহিলাকে তিনি স্বাবলম্বী করার স্বপ্ন দেখেন। এর জন্য দরকার আর্থিক সহযোগিতা। অল্পকিছু আর্থিক সহযোগিতা পেলে পাপড় বানানোর কাজ করে ভাগ্য বদলানো কোন কঠিন কাজই নয় এমনটিই ভাবেন হত-দরিদ্র রওশন আরা।
বিডি প্রতিদিন/আবু জাফর