মঙ্গলবার, ১৩ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একটু দেখুন, না হলে সব শেষ হয়ে যাচ্ছে

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একটু দেখুন, না হলে সব শেষ হয়ে যাচ্ছে

করোনা মহামারী বিশ্বকে এক নতুন দিশা দিয়েছে। প্রকৃতির কাছে সবাই যে কত অসহায় নতুন করে প্রমাণ হলো। যে যত বাগাড়ম্বর করুক স্রষ্টার সৃৃষ্টি রহস্যের তেমন কিছুই আমরা জানি না। করোনার মহাবিপর্যয় মানুষের জন্য তেমনই এক কঠিন শিক্ষা। বাংলাদেশে করোনা মোকাবিলায় খুব একটা প্রশংসা করার মতো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি কখনো। বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সবচেয়ে বেশি অব্যবস্থাপনায় ভরা, দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। কী করে সীমাহীন এ ব্যর্থতা নিয়ে মন্ত্রণালয়টি চলছে তার আগামাথা কিছুই জানি না। যা প্রয়োজন সবার আগে সেই টিকা সংগ্রহ এবং হাসপাতালে সিটের ব্যবস্থা কোনো কিছুই ভালোভাবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় করতে পারেনি। বরং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঐকান্তিক ইচ্ছা ও দুর্বার প্রচেষ্টাকে তাদের অযোগ্যতায় অনেক ক্ষেত্রে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। ঠিক সময় বিশ্বজুড়ে করোনার টিকা সংগ্রহের চেষ্টা হলে এত দিন অনেক মানুষ টিকা পেতে পারত। তাতে আমরা কিছুটা সাহসে বুক বাঁধতে পারতাম। করোনায় নিমজ্জিত দুনিয়ার অনেক দেশ বিপদ কাটিয়ে স্বাভাবিক জীবনে পা বাড়াচ্ছে। ফ্রান্স-ব্রিটেন করোনার নিষেধাজ্ঞা তুলে দিতে চলেছে। এ রকম অবস্থায় আমাদের দেশে এখনো লকডাউন লকডাউন। লকডাউন ছাড়া যেন কোনো প্রতিকার নেই। আগেকার দিনে আমাদের দেশে সব অসুখেই কুইনাইন খাওয়ানো হতো। মারাত্মক তিতো ওষুধ কুইনাইন। রান্নায় যেমন হলুদ তেমনি চিকিৎসায় ছিল কুইনাইন। তেমনি লকডাউন বিড়ম্বনার এক নতুন নাম। মানুষের কষ্টের শেষ নেই। ১০০ টাকার গাড়ি ভাড়া ৫০০ টাকা, তার পরও নিরাপদ নয়। এ দুই সপ্তাহ কঠিন লকডাউনে কয়েক হাজার লোককে জেল-জরিমানা করা হয়েছে। কী ফল হয়েছে? কিছুই না। তার পরও লকডাউন। মনে হয় সরকারের এখনই লকডাউনের ইতি টানা উচিত। অর্থহীন লকডাউন কোনো কাজের কাজ বয়ে আনবে না।

ঘ্যাগের ওপর তারাবাতির মতো লকডাউনে সব বন্ধ। কিন্তু গার্মেন্ট খোলা, শিল্পকারখানা খোলা। প্রশ্ন কি আসতে পারে না লকডাউনে শিল্পকারখানা যদি বন্ধ থাকত তাহলে হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ ফ্যাক্টরিতে অতগুলো মানুষ মরত না। শিশুশ্রম জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক আইনে অপরাধ। অল্প পয়সায় সেই শিশুশ্রমই এখানে চলেছে। কি নির্মম নিষ্ঠুর পরিতাপের বিষয়, শত কোটি টাকা খরচ করে ফ্যাক্টরি করা হবে। কিন্তু ১-২ কোটি খরচ করে অগ্নিনির্বাপকের ব্যবস্থা করা হবে না। আমরা অনেকবার জেলে থেকেছি। জেলখানায়ও দিনে ঘরগুলো তালাবদ্ধ থাকে না। সূর্যাস্তের সময় তালা দেওয়া হয় আবার সূর্যোদয়ের আগে তালা খুলে দেয়। কিন্তু গার্মেন্ট ফ্যাক্টরিতে সব সময় তালা। আগুনে ধ্বংসপ্রাপ্ত হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ ফ্যাক্টরির চার তলায় ৫২ জনের মৃতদেহ পাওয়া গেছে। একে মোটেই দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেওয়া যাবে না। এটি একটি নির্ঘাত নিষ্ঠুর হত্যা। আগেকার দিনে রাজা-বাদশাহরা বন্দীদের যেভাবে হত্যা করত ঠিক তেমনি নিষ্ঠুরতা। মুঘল সম্রাজ্যে আনারকলিকে সম্রাট আকবর জিন্দা কবর দিয়েছিলেন, জিন্দা জ্বালিয়ে দেননি। কিন্তু এতগুলো মানুষকে জিন্দা জ্বালিয়ে দেওয়া হলো। দেশে কলকারখানা হবে, শিল্পায়ন হবে সবাই চায়। তাই বলে মানুষের জীবনের নিরাপত্তা থাকবে না তা তো হতে পারে না। প্রতিটি ইন্ডাস্ট্রিয়াল ভবনের ছাদে কয়েক হাজার গ্যালন পানির ট্যাংক থাকলে অসুবিধা কী? প্রতি ফ্লোরে সেই ট্যাংক থেকে দুই-আড়াই ইঞ্চি পাইপের কানেকশন থাকলে এবং ফ্লোরে ফ্লোরে ৫-৭ হর্সের দুটি করে ভালো পাম্প বসিয়ে দিলে প্রয়োজনে ফায়ার সার্ভিসের ১০টি পাম্পের চাইতে অনেক বেশি কাজ দিতে পারে। প্রতিটি কারখানা ভবনের নিচে কয়েক হাজার গ্যালন পানির রিজার্ভার তৈরি করতে কী তেমন খরচ? একটি ইন্ডাস্ট্রিয়াল বিল্ডিং বানাতে যদি ১০০ কোটি খরচ হয় সারা ভবনে অগ্নিনির্বাপণে পানির ব্যবস্থা করতে ৫০ লাখ-১ কোটি খরচ হবে কি না সন্দেহ। অতিরিক্ত ৫০ লাখ খরচ করে এমন রিজার্ভার এবং পানির পাম্পের ব্যবস্থা করা যেতে পারে যা দিয়ে প্রয়োজনে ৫-১০ মিনিটে সব ইন্ডাস্ট্রিয়াল এলাকা বন্যার মতো ডুবিয়ে দেওয়া যেতে পারে। যে কারখানায় ১ হাজার শ্রমিক কাজ করে পাহারা দেওয়ার জন্য হয়তো ১০০ জন থাকে। সেখানে ১৫-২০ জন ট্রেনিংপ্রাপ্ত ফায়ার ফাইটার থাকলে অসুবিধা কী? ছাদ পানির ট্যাংকের লোড সইতে না পারলে আলাদা করে ট্যাংক বানানো যেতে পারে অথবা পাশে বা যেখানে ছাদের ওপর ট্যাংক হবে সেখানে নিচে থেকেই লোড বেয়ারিং ঠিক করে নেওয়া যেতে পারে। এটা খুব কঠিন কিছু নয়। প্রয়োজন শুধু সদিচ্ছার। সব সময় সরকারি দলের ছত্রচ্ছায়ায় মিল-ইন্ডাস্ট্রি করে রাতারাতি অনেকেই আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যায়। প্রকৃত শিল্পোদ্যোক্তা খুব বেশি নেই। যারা শুধু সরকারের ভরসায় নয়, সত্যিকারে শিল্প বিকাশে উদ্যোগী উদ্যোক্তার সব ক্ষেত্রেই অভাব।

ভাবলে অবাক লাগে, ১৮টি ফায়ার ইউনিট ২১ ঘণ্টা চেষ্টা করেও আগুন পুরোপুরি নেভাতে পারেনি। এতেই বোঝা যায় আমাদের ফায়ার ফাইটিংয়ের সক্ষমতা কত। আর যদি ভবনের মধ্যেই পানির ব্যবস্থা থাকত, নিজস্ব পাম্প থাকত, সাহসী ১০ জন ফায়ারম্যান থাকত ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি আসার আগেই নিজেরাই আগুন নিভিয়ে ফেলতে পারত। তাতে যেমন জীবনহানি হতো না, হতো না সম্পদহানিও। সাধারণ মানুষের চাইতে এতে সম্পদশালীদেরই লাভ বেশি হতো। মনে হয় বিল্ডিং কোডে সবই আছে, শুধু মানা হয় না। মানা হয় না কারণ নতুন গজিয়ে ওঠা শিল্পপতিরা বা বিত্তশালীরা প্রায় সবই সরকারি ছত্রচ্ছায়ায়। তাদের স্পর্শ করে কে? তারা এমন করে অসংখ্য মানুষকে পুড়িয়ে মারার আগ পর্যন্ত পাখা মেলে উড়তে থাকে। তারা ভাবে, কেউ তাদের স্পর্শ করতে পারবে না। এই কদিন আগে বোট ক্লাবে পরিমণিকে নিয়ে যে ঘটনা হলো ঘুণাক্ষরেও কি ভেবেছিল ১৪ শিকের ভিতর যেতে হবে। গুল্যার তোফাজ্জলের পোলা অমি এখন নাকি হাজার কোটির মালিক। আমরা যখন কলেজে পড়তাম তখন অমির বাপ-চাচা-দাদাকে করটিয়া হাটে শাকসবজি বিক্রি করতে দেখতাম। সেই অমি হাজার কোটির মালিক, বিদেশে টাকা এবং মা-বোনের ইজ্জত-সম্ভ্রম বিক্রি করে এমন বিশাল সম্পদের মালিক হওয়া গেলে সমাজে তো এমন অবক্ষয় দেখা দেবেই। এ দেশে শুকনো ঝরাপাতারও দাম আছে। কারণ তা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। কিন্তু মানুষের জীবনের দাম নেই। বিশেষ করে শ্রমজীবী মানুষের জীবনের ঝরাপাতার সমানও দাম নেই। এ অচলায়তন ভাঙতেই আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম। কিন্তু পুরোপুরি সফল হতে পারিনি। তবে যে যা-ই বলুন যে যা-ই ভাবুন একবার এ বন্ধ্যত্ব ভাঙবেই, মানুষের চোখ খুলবেই খুলবে। অবহেলাকারীরা তখন করজোড়ে সমাজের কাছে মাথা নত করে ক্ষমা চেয়েও পার পাবে না এটাই প্রকৃতির শিক্ষা। তাই আকাশের দিকে চোখ রেখে যারা চলে তারা একদিন না একদিন প্রকৃতির হাতে মহান স্রষ্টার হাতে ধরা পড়বেই। একদিন আগে আর পরে অন্যায়কারী মাটির ওপর ভেসে বেড়ানো পরগাছার মতো নয়। তারা কোনো না কোনোভাবে কোনো দিন শাস্তি পাবেই পাবে।

বিশেষ করে আমরা যারা মনেপ্রাণে রাজনীতি করি, যারা বঙ্গবন্ধুকে হৃদয় দিয়ে ভালোবাসি, জননী-জন্মভূমি ছাড়া কারও প্রতি কোনো টান অনুভব করি না তারা আজ সত্যিই বড় বিপদে। দেশে সরকার আছে, কিন্তু রাজনীতি নেই, রাজনৈতিক সরকার নেই। বঙ্গবন্ধুকন্যা নেত্রী শেখ হাসিনা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু সত্যিই দেশ চালাচ্ছে আমলা আর আমলারা। রাজনৈতিক চিন্তা-চেতনার লেশমাত্র নেই। রাজনীতিহীন আমলাতান্ত্রিক প্রশাসনে যা হয় তান্ডই হচ্ছে। এ নিয়ে আফসোস করে খুব একটা লাভ নেই। তবু চোখের সামনে এত অন্যায় দেখে চুপ থাকতে পারি না। মাত্র কয়েক মাস আগে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে সাধারণ দরিদ্র মানুষকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মাথা গোঁজার ঠাঁই দিতে চেয়েছিলেন। তাঁর আন্তরিক ইচ্ছা গরিবের মাথার ওপর একটু ছায়া, একটা ঠিকানা- এ শুভ চিন্তাকে অশুভ বিফলে পরিণত করেছেন কিছু আমলা ফইলা। ২ শতাংশ জমি, তার মধ্যে কত হবে ঠিক জানি না। যদি ২৪ ফুট লম্বা, ১৬ ফুট পাশ ভিটির ওপর ১১ বাই ১০ ফুটের দুটি ঘর করা হয় তাহলে দেয়াল এবং ফ্লোর মিলে ইট লাগবে ৯-১০ হাজার। যার বাজারমূল্য ৮০ হাজার। নির্মাণস্থলে পৌঁছতে প্রতি হাজারে হয়তো আরও ২ হাজার। ১০ হাজার ইটের কাজ করতে কমপক্ষে ৭০-৮০ ব্যাগ সিমেন্টের দরকার। ৭০-৮০ ব্যাগ সিমেন্টের বাজারদর ৩৫-৪০ হাজার। ওই রকম ৩৫০-৪০০ স্কয়ার ফুট ঘরের কাজের মজুরিও হবে প্রায় ৪০-৫০ হাজার টাকা। কোথাও কোনো রড ব্যবহার করা হয়েছে কি না জানি না। হয়ে থাকলে তার একটা আলাদা মূল্য ধরতে হবে। এ ছাড়া ওপরে চালের টিন, সাজসজ্জা তারও একটা আলাদা মূল্য আছে। সুতারের খরচ আছে। শুনেছি যারা এ প্রকল্প নিয়েছেন তারা ১ লাখ ৮০ হাজার টাকায় প্রতিটি ঘর শেষ করতে চেয়েছেন। ২ শতাংশে ৮৭৫ স্কয়ার ফুট জায়গা। তার ৪০০ স্কয়ার ফুটে ঘর করলে বাকি থাকে ৪৭৫ স্কয়ার ফুট। ঘরটা যদি সাড়ে তিন-চার শর জায়গায় ৬০০ স্কয়ার ফুট এবং ২ শতাংশের পরিবর্তে ৪ শতাংশ জায়গা হতো তাহলে ১১০০-১২০০ স্কয়ার ফুট খালি থাকত। সেখানে স্থায়ীভাবে কিছু গাছপালা লাগাতে পারত, লাউ-কুমড়া-বেগুন-ঢেঁড়স বুনে দু-চার দিনের খাবার ব্যবস্থা করতে পারত। কিন্তু না, জায়গা দেওয়া হয়েছে ২ শতাংশ। কত মানুষের কবরের জন্যও আগে ২ শতাংশের জায়গায় ২ হাজার শতাংশ বরাদ্দ থাকত। কত রাজা-বাদশাগর হাজার হাজার একর জায়গাজুড়ে সমাধিস্থল। আর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইচ্ছা গরিবের আশ্রয়, তাদের মাথার ওপর একটা ছায়া। সেখানে ৪ শতাংশ জায়গা জুটল না। যাদের এ প্রকল্পের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তাদের মন নেই, মনন নেই, মানুষ সম্পর্কে, মানুষের বসবাস সম্পর্কে কোনো ধ্যান-ধারণাই নেই। একটা বাড়িতে শুধু দুটি ঘর হলেই চলে না। তার পানির দরকার, তার প্রস্রাব-পায়খানার জায়গা দরকার। গ্রামীণ জীবনে গরু-ছাগল-হাঁস-মুরগি পালনের ব্যবস্থা দরকার। গ্রামীণ অর্থনীতিই হচ্ছে হাঁস-মুরগি-গরু-ছাগল-গাছপালা। যারা আশ্রয়ণ প্রকল্পের পরিকল্পনা করেছেন কোথায় তাদের খেলার মাঠ, কোথায় স্কুলের ব্যবস্থা, কোথায় বিনোদনের জায়গা? যেখানে সেখানে কয়েকজন সরকারি কর্মচারী তড়িঘড়ি করে ঘরদুয়ার তুলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একটা পবিত্র স্বপ্ন ধূলিসাৎ করে দিয়েছেন। আমি শুরুর দিকেই বলেছিলাম, ওই বরাদ্দে শুধু বালু দিয়েও আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণ সম্ভব নয়। আজ থেকে প্রায় ৪০ বছর আগে আমার সহযোদ্ধা সদ্যপ্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সবুর খান বীরবিক্রম জাহাঙ্গীর স্মৃতি সেবাশ্রমের ২০০ ফুট জায়গা ১০টি বালু, ১টি সিমেন্ট রেশিওতে গাঁথুনি করেছিল। সেই গাঁথুনি প্রায় ৪০ বছর টিকে ছিল। সেখানে ঘর করার আগে দেয়াল ভেঙে পড়েনি। কিন্তু আশ্রয়ণ প্রকল্প ছয় মাসও যেতে পারেনি। চিন্তাটা যত পূতপবিত্র ছিল যাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তারা অত পবিত্র নন। ঠিকভাবে ভেবেচিন্তে জায়গা নির্বাচন এবং নির্মাণ করলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ উদ্যোগ সারা বিশ্বে প্রশংসা পেত। কিন্তু নির্মাণের আগেই ধসে পড়ায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সব শুভ কামনা সদিচ্ছা এবং মানুষকে আশ্রয় দেওয়ার আকুতি সবই বন্যার জলের মতো ভেসে গেল। কয়েকজনকে ওএসডি করা হয়েছে। তাদের ফাঁসি দিলেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর যে সম্মানহানি হয়েছে, তাঁর স্বপ্ন যেভাবে বিফল হয়েছে তা কিছুতেই ফিরে আসবে না। যা যায় তা আর ফিরে পাওয়া যায় না। দেশের যে সুনাম ক্ষুণ্ণহলো ধ্বংস হলো তা আর কখনো ফিরে পাওয়া যাবে না। ঢাকা-টাঙ্গাইল যাতায়াতে দু-একটি আশ্রয়ণ প্রকল্প চোখে পড়ে। স্থান নির্বাচন মোটেই সুবিধার হয়নি। কোথাও কোথাও নতুন মাটি ফেলে আশ্রয়ণ প্রকল্প করা হয়েছে। এক-দেড় মাসের বৃষ্টিতে তা ধসে গেছে। বন্যার আগেই অনেক ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। সেখানে মানুষের বসবাস দূরের কথা পোকা-মাকড়-সাপ-বিচ্ছু বাস করতে পারবে না। আসলে যাদের বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তারা শুধু কামিয়ে নিয়েছেন। তাদের ভাবনা ছিল কোনোভাবে ঘর তুলে বছর পার করতে পারলেই হলো।

এমনটা এর আগেও যে হয়নি তা নয়। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সময় ১৫-২০ হাজার কোটি টাকার বনায়নের একটা পরিকল্পনা হয়েছিল। আমি তখন নির্বাসনে। শুনেছিলাম, যারা ঋণ দিয়েছেন তারা ঋণ দেওয়ার আগেই ১৫ শতাংশ কেটে রেখেছিলেন। বনায়নের সঙ্গে যারা জড়িত রাষ্ট্রপতি থেকে মন্ত্রীরা ১৫-২০ শতাংশ সরিয়ে নিয়েছিলেন। ২০ হাজার কোটির ৫-৭ হাজার কোটি এমনিতেই ইন্দুর-বান্দরে খেয়ে ফেলেছিল। যখন বনায়ন শুরু হয় বিশেষ করে আমার এলাকায় ২০০-৩০০ বছরের পুরনো বাড়িঘর এমনকি বাপ-দাদার কবরের ওপরও বন বিভাগের লোকেরা গাছ রোপণ শুরু করে। এমনও শুনেছি, বিকালে গাছ বুনে সকালে তারাই আবার গরম পানি ঢেলে গাছ মেরে ফেলে আবার গাছ লাগিয়েছে। কারণ হিসাব দিতে হবে তো। ৫-১০ হাজার না বুনে তো আর বলতে পারবে না যে ৫-১০ লাখ চারা রোপণ করা হয়েছে। শেষটা এমন হয়েছিল যে কিছু গাছ তো বুনতেই হবে। একেবারে কোনো গাছ না বুনে কীভাবে বলে বনায়ন করা হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ক্ষেত্রেও অনেকটা তেমনই হয়েছে। বরাদ্দ অর্থ তুলে নেওয়ার জন্য ঘর চাই। সেটা কাগজের ঘরই হোক আর শোলার ঘর। ঘর হলেই হলো। তবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নসাধ আশ্রয়ণ প্রকল্পে তালিকাভুক্ত হতে শুধু দরিদ্র হলেই চলেনি, ৫-১০ এমনকি ৪০-৫০ হাজার টাকা মেম্বার-চেয়ারম্যান-ইউএনও এবং অন্যদের দিয়ে তবে তালিকাভুক্ত হতে হয়েছে। প্রকল্প পরিচালক কয়েক দিন যাবৎ বলছেন, এটা হলে ওটা হলে দুর্নীতি হলে কাউকে ছাড়া হবে না। এটাওটা হওয়ার কী আছে? প্রায় সব জায়গায় ঘরদুয়ার ধসে পড়েছে, ফাটল ধরেছে, প্রকল্পের জায়গা ডুবে গেছে। আর কী দুরবস্থা, অব্যবস্থা দেখবেন? এখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর যদি এসব চোখে পড়ে তাহলে হয়তো একটা কিছু হতে পারে। না হলে যেভাবে আছে এভাবেই থাকবে। আগের হাল যেখান দিয়ে যায় পিছের হালও সেখান দিয়ে যায়- এ প্রবাদের বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করা উচিত।

লেখক : রাজনীতিক।

www.ksjleague.com

সর্বশেষ খবর