৬ জুন, ২০২৩ ১৭:৪৪

চাঁদপুরে সংকটে মৃৎশিল্প

নেয়ামত হোসেন, চাঁদপুর

চাঁদপুরে সংকটে মৃৎশিল্প

চাঁদপুরের মৃৎ শিল্পীদের অনেকে আর্থিক দৈন্যতা, মাটির সংকট ও কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধির কারণে ধীরে ধীরে এই পেশা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। ফলে বিলুপ্তির পথে হাঁটছে স্থানীয় মৃৎশিল্প। 

মৃৎশিল্পীরা জানান, তাদের তৈরি করা জিনিসপত্র বর্তমানে খুব কম বিক্রি হচ্ছে। তাই বছরের পর বছরজীবন-জীবিকার জন্য মৃৎশিল্প পেশায় জড়িত মানুষগুলো কালের আবর্তে হারিয়ে যাচ্ছে।

এক সময় মাটির তৈরি বিভিন্ন ধরনের হাড়ি-পাতিল, মটকা, কলস, ফুলের টব, খেলনার খুবই কদর ছিল। বর্তমানে আধুনিকতার ছোঁয়ায় প্লাস্টিক সামগ্রীর কারণে মৃৎশিল্প এখন প্রায় বিপন্ন। বংশ পরম্পরায় যারা এই পেশা ধরে রেখেছেন, তাদের সংসার চলছে অতি কষ্টে। মাটির তৈরি মালামাল ঠিকমত তৈরি ও সঠিক দাম না পাওয়ায় সংসারে অভাব অনটন লেগেই থাকে। যে কারণে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও তারা সন্তানদের ঠিকমত পড়াশোনা করাতে পারছেন না। নানা প্রতিকূলতার মাঝেও অনেকে বাপ-দাদার এই পেশাকে পাল্টাতে পারছে না। আবার কেউ কেউ বিলুপ্ত প্রায় মৃৎশিল্পকে আঁকড়ে ধরেই বেঁচে থাকার চেষ্টা করছেন।

হাজীগঞ্জ  সদর ইউনিয়নের অলিপুরে মৃৎশিল্পী শিলা রানী পাল ও সুচিত্রা পালের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্লাস্টিক সামগ্রীর সহজ প্রাপ্যতার কারণে এই শিল্প প্রায় বিলুপ্তির পথে। শত কষ্টের মাঝেও এখানে তারা চারটি পরিবার টিকে আছে। তারা অন্য কাজ করতে অভ্যস্ত নন বলেই বাপ-দাদার এই পেশাকেই আঁকড়ে ধরে রেখেছেন। বর্তমানে মাটির দাম তিন গুন বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে পরিবহন খরচও তিনগুল বেড়েছে। এজন্য কুমিল্লার বিজয়পুর, ফরিদগঞ্জের গল্লাক, মানুরী থেকে তৈরি মাটির সামগ্রী ক্রয় করে। তাদের স্বামীরা তা ভারে নিয়ে ফেরী করে গ্রামে গ্রামে বিক্রি করে থাকে। এতে যা কিছু আয় হয় তা দিয়েই কোনরকমে তারা সংসার চালায়। 

মৃৎশিল্পী পরেশ পাল জানান, আমরা বংশ পরস্পরায় এই কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছি। কিন্তু বর্তমানে মাটির তৈরির সামগ্রীর তেমন চাহিদা নেই। তবে বৈশাখী মেলায় কিছু খেলনা সামগ্রী বিক্রি হয় বলে খেলনা সামগ্রী বানাই। এছাড়া সারা বছর ফুলের টব আর কিছু দধির পাতিল বিক্রি করে কোন রকম খেয়ে পরে বেঁচে আছি। আবার মাটির দাম বেশি হওয়ায় জমির মালিকরাও ইট ভাটায় মাটি বিক্রি করতে আগ্রহী। ইটভাটা মালিকদের সাথে পাল্লা দিয়ে আমরা মাটি কিনতে পারছি না। এখানে আমাদের বংশের অনেকেই বাড়ি-জমি বিক্রি করে ভারতে চলে গেছে। তার মধ্যে আমরা ৪টি পরিবার মৃৎশিল্প কাজ নিয়ে জড়িয়ে আছি। আবার অনেকে পেশা বদল করে অন্য পেশায় চলে গেছে। আমাদের পরিবারের দু’জনে একচালা টিনের বারান্দায় বসে মাটির তৈরি জিনিসপত্র বানাচ্ছেন। পাশেই অন্যরা মাটির জিনিসে সাজ ও জিনিসগুলো রৌদ্রে শুকাচ্ছে। শুকানো জিনিসগুলো আবার কেউ ঘরের আঙিনায় সাজিয়ে রাখছেন। তাদের এই ঐতিহ্যের সংগ্রাম চলমান। 

চাঁদপুর বিসিক জেলা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়,  সদরে ১০ জন, শাহারাস্তী ২০জন,  হাজীগঞ্জ ৪ জন,  ফরিদগঞ্জ ৬ জন মৃৎশিল্পের কারিগর রয়েছেন। মাটি তৈরি মালামালের ধরণ পাল্টানোর প্রয়োজন আর এজন্য প্রয়োজন প্রশিক্ষণ ও আর্থিক সহায়তা। মৃৎশিল্পীদের নিয়ে আরো সম্প্রতি আপডেট জরিপ করার চিন্তা রয়েছে। বিপন্ন প্রায় এ শিল্পের কারিগরদের টিকিয়ে রাখতে সরকারিভাবে উদ্যোগ নেবে, এমনটাই প্রত্যাশা সবার।

 


বিডি প্রতিদিন/নাজমুল

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর