মঙ্গলবার, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা
আজ অমর একুশে

ভাষাশহীদদের প্রতি রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর বিনম্র শ্রদ্ধা

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভাষাশহীদদের প্রতি রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর বিনম্র শ্রদ্ধা

মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ২১ ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা —বাংলাদেশ প্রতিদিন

একুশের প্রথম প্রহরে রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙে জেগে উঠেছিল সারা দেশের মানুষ। রাত ১২টা ১ মিনিটে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদিতে জাতির পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহান একুশের অমর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। রাষ্ট্রপতি প্রথমে ফুল দেন শহীদ বেদিতে, এরপর দেন সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা। তারা ফুল দিয়ে কিছু সময় নীরবে দাঁড়িয়ে ভাষাশহীদদের প্রতি সম্মান জানান। এ সময় বেজে ওঠে অমর একুশের গানের করুণ সুর।

এরপর শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে নিয়ে শহীদ বেদিতে ফুল দেন। তারপর ফুল দেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়া, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, রওশন এরশাদের নেতৃত্বে বিরোধী দল, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক ও দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন, তিন বাহিনীর প্রধান, পুলিশপ্রধান, কূটনীতিকদের পর ফুল দেন ১৪ দলের নেতৃবৃন্দ। সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম এবং হুইল চেয়ারে বসে একদল যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান ভাষাশহীদদের।

এর আগে রাত ১১টা ৫০ মিনিটে শহীদ মিনারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভ্যর্থনা জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। এ সময় মন্ত্রিপরিষদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রপতি রাত ১১টা ৫২ মিনিটে শহীদ মিনারে পৌঁছলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে অভ্যর্থনা জানান। প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতিকে শহীদ বেদিমূলে নিয়ে যান। এদিকে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের শ্রদ্ধা নিবেদনের পর শহীদ মিনার সবার জন্য খুলে দেওয়া হয়। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক এবং পরে তার নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট ও ডিন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি এবং বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন নেতারা পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। এরপর বাংলা একাডেমি, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, ছাত্রলীগ ও জাসদ নেতারা শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন। পরে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক দল ও সংগঠন ছাড়াও ছাত্র, যুব, নারী, শ্রমিক, শিশু-কিশোর সংগঠন এবং হাজার হাজার মানুষ সারিবদ্ধভাবে একে একে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মাধ্যমে গভীর শ্রদ্ধা জানান মহান ভাষাশহীদদের প্রতি।

রাত দেড়টায় বিএনপি নেতাদের সঙ্গে নিয়ে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ অর্পণ করেন।

মানুষের ঢল : রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা জানানো শেষে শহীদ মিনারের বিভিন্ন পয়েন্টে মানুষের ঢল বাড়তে থাকে। শাহবাগ মোড়, পলাশী মোড়, কাঁটাবন, নীলক্ষেত মোড়সহ শহীদ মিনারের আশপাশে সময় গড়ানোর সঙ্গে বাড়ে এ ভিড়।

শহিদ মিনারে যাওয়ার রুট-ম্যাপ : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ‘একুশে উদযাপন কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটি’ আজিমপুর কবরস্থান ও কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যাতায়াতের জন্য একটি রুট-ম্যাপ তৈরি করেছে। রুট-ম্যাপটি গতকাল সোমবার রাত ৮টা থেকে কার্যকর হয়েছে।

রুট-ম্যাপ অনুযায়ী জনসাধারণ পুরনো হাইকোর্টের সামনের রাস্তা দিয়ে দোয়েল ক্রসিং, বাংলা একাডেমি, টিএসসি মোড়, উপাচার্য ভবনের পাশ দিয়ে নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়ি মোড়, নিউমার্কেট-ক্রসিং পার হয়ে আজিমপুর কবরস্থানের উত্তর দিকের গেট দিয়ে কবরস্থানে প্রবেশ করবেন।

যেসব রাস্তা বন্ধ থাকবে : টিএসসি মোড় থেকে জগন্নাথ হলের পূর্ব পাশের রাস্তা অর্থাত্ শিববাড়ির পশ্চিম পাশ দিয়ে শহীদ মিনারে ও মেডিকেল কলেজে যাওয়ার রাস্তা সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে। উপাচার্য ভবন গেট থেকে ফুলার রোড হয়ে ফুলার রোড মোড় পর্যন্ত রাস্তা এবং চানখাঁর পুল থেকে কার্জন হল পর্যন্ত রাস্তা জনসাধারণের যাতায়াতের জন্য সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে। শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণের পর সেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয় খেলার মাঠের সামনের রাস্তা দিয়ে দোয়েল চত্বর ও পেছনের রাস্তা দিয়ে চানখাঁর পুল হয়ে শুধু প্রস্থান করা যাবে, শহীদ মিনারের দিকে আসা যাবে না।

একুশের কর্মসূচি : আজ সরকারি ছুটির দিন। সারা দেশে আজ রয়েছে নানা কর্মসূচি ও অনুষ্ঠান। প্রভাতফেরি করে শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ ছাড়াও সব সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে গ্রহণ করা হয়েছে পৃথক কর্মসূচি।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয়সহ সারা দেশের কার্যালয়গুলোয় জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে। কালো ব্যাজ ধারণ করবেন নেতা-কর্মীরা। প্রভাতফেরি, আজিমপুর কবরস্থানে শহীদদের কবরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ছাড়াও আগামীকাল বিকাল ৩টায় রয়েছে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আলোচনা সভা। এতে সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিএনপির পক্ষে দলীয় নেতা-কর্মীরা সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করবেন। ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদসহ প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে নানা কর্মসূচি। বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনও নানা কর্মসূচি পালন করবে।

ধানমন্ডির রবীন্দ্রসরোবর মঞ্চে থাকবে একুশের বিশেষ আয়োজন। সকাল সাড়ে ১০টায় সেগুনবাগিচার নিজস্ব কার্যালয়ে একুশের অনুষ্ঠান আয়োজন করবে কেন্দ্রীয় কচি-কাঁচার মেলা। এ ছাড়া রাজধানীর আজিমপুর কবরস্থান ও অন্যান্য স্থানে ভাষাশহীদদের কবরে ফাতিহা পাঠ, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের কর্মসূচি রয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর