মঙ্গলবার, ৭ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

ভিতরে ভিতরে প্রস্তুতি বিএনপির তৈরি হচ্ছে ইশতেহার

মাহমুদ আজহার

ভিতরে ভিতরে প্রস্তুতি বিএনপির তৈরি হচ্ছে ইশতেহার

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘সহায়ক’ সরকারের দাবিতে থাকা বিএনপি নিবন্ধন বাতিলের ঝুঁকিতে পড়েছে। পরপর দুটি সংসদ নির্বাচন বর্জন করলে নিবন্ধন বাতিল হবে—নির্বাচনী এমন বিধি নিয়ে রাজনীতিতে এখন তুমুল ঝড় বইছে। এতে বিএনপিসহ সরকারবিরোধী অধিকাংশ দলেরই নিবন্ধন বাতিলের শঙ্কা রয়েছে। এ নিয়ে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের তির্যকবাণে বিদ্ধ বিএনপি। অবশ্য বিএনপি বিষয়টি পাত্তা না দিয়ে বলছে, এটা আওয়ামী লীগের একটি রাজনৈতিক অপকৌশল। এগুলো ধোপে টিকবে না। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ-আরপিও ৯০-এইচ (১) ধারার (ই) উপ-ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাতিল হবে, যদি কোনো রাজনৈতিক দল পরপর দুটি সংসদ নির্বাচনে অংশ না নেয়।’ বিএনপি মনে করে, সবার অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য সরকারের অধীনেই আগামী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার নিয়ে একটি রূপরেখাও দেবেন বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এ নিয়ে কাজও চলছে। মার্চের শেষ দিকে রূপরেখা দেওয়া হতে পারে। এদিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে দলের ভিতরে চলছে প্রস্তুতিও। দলের সম্ভাব্য প্রার্থী কারা হবেন তাও যাচাই-বাছাই হচ্ছে। বেগম জিয়াও সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলছেন। তৃণমূল পুনর্গঠনেও এসব বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নিবন্ধন বাতিলের কথা বলে সরকার ছলচাতুরীর মাধ্যমে বিএনপিকে নির্বাচনে নেওয়ার ষড়যন্ত্র করছে। একটি গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। ষড়যন্ত্রটা কী? বিএনপিকে নির্বাচনে আসতেই হবে। আইন মানুষের জন্য। আইনের জন্য মানুষ নয়। যে আইন মানুষের উপকারে আসবে না, মানুষের কল্যাণ করবে না, সেটা আইন হতে পারে না। মানুষের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে, প্রতারণা করে সরকার এখন গোল করতে চায়। কিন্তু এত সহজ নয়।’ জানা যায়, সংবিধানের ভিতর থেকেই বিএনপি সহায়ক সরকারের রূপরেখা দেবে। সবার অংশীদারিত্বে নির্বাচনের জন্য একটি পদ্ধতি তুলে ধরবেন বেগম জিয়া। সেক্ষেত্রে কয়েকটি বিকল্পও থাকবে। শর্তসাপেক্ষে প্রধানমন্ত্রীর অধীনেও নির্বাচনে যেতে পারে দলটি। এ নিয়ে বিএনপির থিঙ্কট্যাংকাররা একটি প্রস্তাবনা তৈরি করেছেন। এগুলো দলীয় ফোরামে আলোচনা হবে। এরপরই সংবাদ সম্মেলনে আসবেন বিএনপি প্রধান। মার্চের মধ্যে এ রূপরেখা তুলে ধরতে পারেন তিনি। দায়িত্বপ্রাপ্ত একাধিক নেতা জানান, বিএনপি থেকে সর্বোচ্চ সেক্রিফাইজ করে নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা দেওয়া হবে। সব দলের সমান সুযোগ সৃষ্টি করতেই এ রূপরেখা দেওয়া হবে। দলীয় সূত্রমতে, একাদশ সংসদ নির্বাচনের দেড় বছর বাকি থাকলেও সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকাও তৈরি করছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। দল পুনর্গঠনে প্রার্থীদের বিষয়টিও মাথায় রাখা হচ্ছে। এর আগেও অবশ্য বিএনপি একাধিকবার সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা তৈরি করে। ওই তালিকা ধরেই কাজ চলছে। বিগত আন্দোলনে কার কী ভূমিকা, মামলা, দলের প্রতি আনুগত্য, সাধারণ মানুষের মধ্যে জনপ্রিয়তা, ব্যক্তিগত ইমেজ— সব বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সাবেক মন্ত্রী-এমপিদের থেকে এবার প্রার্থী হওয়ার সংখ্যা অনেক কমে যাবে বলেও সংশ্লিষ্টরা জানান। এক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতৃত্বকে সামনে নিয়ে আসা হবে। এবার উল্লেখসংখ্যক নারীদেরও দলীয় প্রার্থীর বিবেচনায় নেবেন বিএনপি প্রধান। সূত্রমতে, বিএনপি প্রধানের বিভিন্ন সময়ের বক্ততা, বিষয়ভিত্তিক সংবাদ সম্মেলন, জনগণকে দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলোকে সামনে এনে ইশতেহার তৈরির কাজও চলছে। দল সমর্থিত কয়েকজন আমলা প্রাথমিকভাবে এ কাজে যুক্ত রয়েছেন। দলের সিনিয়র নেতারাও দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। একাদশ নির্বাচনে যাওয়ার সম্ভাব্য সব প্রস্তুতিই নিয়ে রাখছে বিএনপি। তবে সরকার দাবি মেনে না নিলে আন্দোলনে যাওয়ার বিকল্প পথও খোলা রাখা হচ্ছে। দল পুনর্গঠনের সঙ্গে যুক্ত বিএনপি নেতারা জানান, এ পর্যন্ত প্রায় ৩৩টি জেলা কমিটি দেওয়া হয়েছে। কয়েকটি অঙ্গ-সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটি দেওয়া হয়েছে। খুব শিগগির ঢাকা মহানগর কমিটিও ঘোষণা হবে। আগামী তিন মাসের মধ্যে বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের সব পর্যায়ে কমিটি দেওয়া হবে। বিএনপি নেতারা জানান, জনগুরুত্বপূর্ণ ইস্যু আর নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে চলতি মাসের শেষ দিকে বিভাগীয় শহরে সমাবেশ করার চিন্তাভাবনা করছেন বেগম জিয়া। সেখানে সরকারের বিরুদ্ধে দুঃশাসনের অভিযোগ তুলে ধরার পাশাপাশি গঠিত নির্বাচন কমিশন নিয়েও প্রশ্ন তুলে ধরবেন বেগম জিয়া। সবার আগে ঢাকায় একটি জনসভা করার চিন্তাভাবনা চলছে।  বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, নির্বাচনে না গেলে দলের নিবন্ধন থাকবে না— এ ধরনের জুজুর ভয় দেখিয়ে কোনো লাভ নেই। জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আন্দোলন-সংগ্রামের বিকল্প নেই।

সর্বশেষ খবর