সোমবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা
সংসদে শোক প্রস্তাব গৃহীত

এরশাদ কিছু ভালো কাজ করেছেন, এটা সত্য : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

জাতীয় সংসদে গতকাল সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টি  চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে ‘সফল রাষ্ট্রনায়ক’ হিসেবে উল্লেখ করে শোক প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। এর আগে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে একাদশ জাতীয় সংসদের চতুর্থ অধিবেশনে শোক প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়। পরে এরশাদের কর্মময় জীবন নিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ, বিরোধী দল জাতীয় পার্টি এবং বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্যরা আলোচনা করেন।

শোক প্রস্তাবে বলা হয়, ‘হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুতে দেশ একজন প্রবীণ রাজনীতিবিদ,  সফল রাষ্ট্রনায়ক এবং নিবেদিতপ্রাণ সমাজসেবককে হারাল। এ সংসদ তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ, বিদেহী রুহের মাগফিরাত কামনা এবং  শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি আন্তরিক সহমর্মিতা প্রকাশ করছে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলোচনায় অংশ নিয়ে বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করে মার্শাল ল জারির মাধ্যমে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেন জেনারেল জিয়াউর রহমান। তেমনিভাবে জোর করে ক্ষমতা দখল করেন জেনারেল এরশাদও। হাই কোর্টের রায়ে তাদের সেই ক্ষমতা দখলকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। এরপর তাদের আর রাষ্ট্রপতি বলা যায় না। তিনি বলেন, এরশাদ কিছু ভালো কাজ করেছেন, এটা সত্য। তার সময়ে বার বার আমাদের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করা হয়। নির্বাচনের নামে প্রহসন করে তিনি আরও বেশি বিতর্কিত হন। তার বিরুদ্ধে জনরোষ তৈরি হয়। এসব কারণে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় আমরা তার বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলি এবং তিনি ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৮১ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন বিচারপতি সাত্তার। তাকে প্রার্থী করার কথা এরশাদ নিজেই বিদেশি পত্রিকায় বলেছেন। আমরা ওই সময় প্রতিবাদ করেছি। এরশাদ ’৮২ সালে যে ক্ষমতা দখল করেছিলেন, সেটির সুযোগ দেন কিন্তু খালেদা জিয়া। তিনি শুধু দুটি বাড়িই নয়, ১০ লাখ টাকাও পেয়েছিলেন। খালেদা জিয়ার স্বামী জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর তার কোনো ডায়েরি হয়নি, তদন্তই হয়নি এখন পর্যন্ত। খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন জিয়া হত্যার জন্য এরশাদকে দায়ী পর্যন্ত করেননি। আমরাই প্রতিবাদ করি। কারণ এক স্বৈরাচারের পর আরেক স্বৈরাচার আমরা চাইনি।

শেখ হাসিনা আরও বলেন, শক্তিশালী বিরোধী দল ছাড়া গণতান্ত্রিক ধারা শক্তিশালী হয় না। গত টার্মে এবং এবারও জাতীয় পার্টি শক্তিশালী বিরোধী দল হিসেবে ভূমিকা রেখে চলেছে। এজন্য এবারের সংসদ কার্যকর ভূমিকা রাখছে। সংসদের প্রতি জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস ফিরে এসেছে। তিনি বলেন, বিএনপি যখন বিরোধী দলে ছিল, তখন যে ধরনের আচরণ করা হতো, মোমবাতি হাতে নিয়ে পার্লামেন্টে ঢোকা, স্পিকারকে মারার চেষ্টা, চেয়ার ছোড়াÑ সবই করেছে। তিনি বলেন, বর্তমানে সংসদে অনেক ভালো আচরণ করছে বিরোধী দল। আজকের পার্লামেন্টে আমরা বিএনপিকে অনেক উদারতা দেখাচ্ছি। জাপা বিলসহ সব ব্যাপারে গঠনমূলক সমালোচনা করে, তাতে জনগণের আস্থা ফিরে এসেছে গণতন্ত্রের ওপর। গণতন্ত্রের স্বার্থে, দেশের স্বার্থে জনগণের স্বার্থে আমরা কাজ করে যাচ্ছি, যাতে উন্নয়নের ফসল জনগণের ঘরে ঘরে পৌঁছায়। সেদিকে লক্ষ্য রেখে কাজ করে যাচ্ছি। রওশন এরশাদ বলেন, তিনি অনেক জনদরদি নেতা ছিলেন। উনি দেশ ও জনগণের জন্য উন্নয়নে অনেক কাজ করেছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় যে কাজ অসমাপ্ত  রেখে গিয়েছিলেন, তার অকাল ও মর্মান্তিক মৃত্যুতে তিনি যা শেষ করে যেতে পারেননি, এইচ এম এরশাদ তা সম্পন্ন করার চেষ্টা করেন। তিনি অনেক জনপ্রিয় ছিলেন তা তার মৃত্যুর পরেও বোঝা গেছে। তার চার-চারটি জানাজা করতে হয়েছে। এ সময় রওশন এরশাদ আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেন, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ গণতন্ত্র রক্ষা ও গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করেছেন। তিনি একটি রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেন। তিনি পল্লী উন্নয়নসহ দেশের উন্নয়নে কাজ করে গেছেন। তিনি প্রশাসনকে বিকেন্দ্রীকরণ করেন, উপজেলা পদ্ধতির প্রবর্তন করেন। আমির হোসেন আমু বলেন, আমি তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করি। দোষে-গুণে মানুষ। সেগুলো আজ আলোচনা না করাই ভালো। তোফায়েল আহমেদ বলেন, যখন তিনি  প্রেসিডেন্ট হন, তার সঙ্গে আমাদের মতানৈক্য তৈরি হয়। তবে উনি বিনয়ী ছিলেন। তিনি অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। মোহাম্মদ নাসিম বলেন, এরশাদ জাতির জনককে শ্রদ্ধা করতেন। বিরোধীদলীয় নেতা থাকা অবস্থায় বারবার বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে বক্তব্য রাখতেন। তবে সবচেয়ে দুঃখজনক হলো এরশাদ ক্ষমতায় থাকতে জিয়াউর রহমানের পথ অনুসরণ করে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের আশ্রয় দিয়েছেন, প্রশ্রয় দিয়েছেন। এমনকি তিনি তথাকথিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কর্নেল ফারুকের মতো ঘৃণিত খুনিকে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী করেছিলেন। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক দুর্ভাগ্যজনক। এটা আমি ভুলে যেতে চাই। আজকের দিনে স্মরণ করতে চাই না। কিন্তু এ কথাগুলো বলছি এ কারণে যে, রেকর্ডে থাকবে।

শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় আরও অংশ নেন শাজাহান খান, জাতীয় পার্টির মহাসচিব ও বিরোধীদলীয় হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গা, আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কাজী ফিরোজ রশীদ, ফখরুল ইমাম, মুজিবুল হক চুন্নু, পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ, ব্যারিস্টার শামীম হায়দার, বিএনপির হারুনুর রশিদ প্রমুখ।

সর্বশেষ খবর