শনিবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

উত্তপ্ত কুয়েট বন্ধ ঘোষণা, দুর্ভোগ নিয়ে হল ছাড়লেন শিক্ষার্থীরা

শিক্ষকের রহস্যজনক মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা

উত্তপ্ত কুয়েট বন্ধ ঘোষণা, দুর্ভোগ নিয়ে হল ছাড়লেন শিক্ষার্থীরা

হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়ার পর গতকাল দুর্ভোগ নিয়ে বাড়ি ফেরেন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ক্যাম্পাসে মোতায়েন করা হয় অতিরিক্ত পুলিশ -বাংলাদেশ প্রতিদিন

শিক্ষকের মৃত্যু কেন্দ্র করে ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল হওয়ার আশঙ্কায় ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট)। একই সঙ্গে হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হলে তৎক্ষণাৎ প্রায় আড়াই হাজার শিক্ষার্থী হল ছেড়ে চলে যান। গতকাল জরুরি সিন্ডিকেট সভায় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেন কর্তৃপক্ষ। কুয়েটের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. আনিছুর রহমান ভুঞা স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়- ‘অধ্যাপক ড. মো. সেলিম হোসেনের অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কায় ৩ থেকে ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে এবং বিকাল ৪টার মধ্যে ছাত্রদের হল ত্যাগের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

এর আগে গতকাল সকাল ১০টায় মুলতবি সিন্ডিকেট সভা ফের শুরু হয়। প্রায় দুই ঘণ্টা আলোচনার পর দুপুর ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়। কুয়েট বন্ধ ঘোষণার পর বিক্ষুব্ধ কিছু ছাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকসহ সব দ্বারে তালা লাগিয়ে দেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তবে বেলা দেড়টার দিকে তালা ভেঙে চলাচল স্বাভাবিক করেন পুলিশ সদস্যরা। বিকালে হলের ছাত্রদের বাড়ি ফিরতে দেখা যায়। এ ছাড়া যে কোনো উত্তপ্ত পরিস্থিতি এড়াতে ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। জানা যায়, মঙ্গলবার বিকাল ৩টার দিকে কুয়েটের লালন শাহ হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মো. সেলিম হোসেন হার্ট অ্যাটাকে মারা যান। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের অভিযোগ- মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা আগে অধ্যাপক সেলিম হোসেন কুয়েট ছাত্রলীগের বেশ কজন নেতা-কর্মীর মানসিক নিপীড়নের শিকার হয়েছিলেন। হলের ‘ডাইনিং ম্যানেজার’ নির্বাচন নিয়ে ড. সেলিম হোসেনকে কিছুদিন ধরে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ক্যাম্পাসে তার গতিরোধ করা হয়। পরে ওই শিক্ষককে তড়িৎ প্রকৌশল ভবনে তাঁর ব্যক্তিগত কক্ষে এনে আনুমানিক আধাঘণ্টা রুদ্ধদ্বার বৈঠক করা হয়। এরপর ড. সেলিম হোসেন দুপুরের খাবারের জন্য বাসায় গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁকে খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

জানা যায়, ‘ডাইনিং ম্যানেজার’ পদটি লাভজনক হওয়ায় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপ তা নিজেদের দখলে রাখতে ড. সেলিম হোসেনকে চাপ প্রয়োগ করত। তবে ওই শিক্ষককে এ বিষয়ে কোনো ধরনের চাপ প্রয়োগের কথা অস্বীকার করে সংবাদ সম্মেলন করেছে কুয়েট ছাত্রলীগ। তাদের দাবি, স্বাভাবিক মৃত্যুকে রাজনৈতিকভাবে ভিন্ন খাতে প্রভাবিত করে সাধারণ শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের ভাবমূর্তি ক্ষুণেœর ষড়যন্ত্র চলছে।

এদিকে এ ঘটনায় দোষী ছাত্রদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে শিক্ষক সমিতি এখনো অটল রয়েছে। শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রতীক চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ‘ড. সেলিম হোসেনকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করার মধ্য দিয়ে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধীদের বিচারের আওতায় এনে তাদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কার না করা পর্যন্ত শিক্ষকরা একাডেমিক কার্যক্রমের পাশাপাশি প্রশাসনিক কার্যক্রমও বয়কট করবেন।’

কুয়েট কর্তৃপক্ষের বিবৃতি : বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. কাজী সাজ্জাদ হোসেনসহ কয়েকজন শিক্ষক-কর্মকর্তার বিরুদ্ধে উদ্দেশমূলক তথ্য প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ ও সুস্পষ্ট উসকানি দেওয়া হয়েছে দাবি করে বিবৃতি দিয়েছেন কুয়েট কর্তৃপক্ষ। বিবৃতিতে কুয়েট কর্তৃপক্ষ জানান, ড. সেলিম হোসেন তাঁর নিজ বাসভবনে অসুস্থ হয়ে পড়ার খবর শোনার পর ভাইস চ্যান্সেলর কুয়েট মেডিকেল সেন্টারে ছুটে যান এবং তাঁকে তাঁর নিজ বাসভবন থেকে কুয়েট মেডিকেল সেন্টারে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য আনার ব্যবস্থা করেন। পরে মেডিকেল সেন্টারের চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে খুলনা হাসপাতালে প্রেরণের পরামর্শ দিলে তৎক্ষণাৎ ভাইস চ্যান্সেলের নির্দেশনায় খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজ ও পরে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করে ‘হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু হয়েছে’ মর্মে ডেথ সার্টিফিকেট প্রদান করেন।

ছাত্রলীগের সংবাদ সম্মেলন : বিশ্ববিদ্যালয় পরিস্থিতি নিয়ে খুলনা প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছে কুয়েট ছাত্রলীগ। স্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা অস্বাভাবিক দাবি করে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করা হচ্ছে দাবি করে কুয়েট ছাত্রলীগ শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদমান নাহিয়ান সেজান বলেন, ‘ওই হলের সার্বিক কর্মকান্ড সমন্বয়ে ফাইনাল ব্যাচের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য প্রভোস্ট ও শিক্ষক ড. মো. সেলিম হোসেনের কক্ষে আলোচনা করা হয়। সেখানে তিনি তাদের চা অফার করেন। কিন্তু ওই কক্ষে পর্যাপ্ত কাপ না থাকায় তাঁর টেবিলে থাকা মধুর বোতল থেকে তিনি জুনিয়র শিক্ষার্থীদের মধু খেতে দেন এবং হাসিমুখে বিদায় নেন। বাড়ি ফিরে তিনি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ করলেও একটি পক্ষ ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে ছাত্রলীগের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করছে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর