সোমবার, ২ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা
নতুন বছরে নতুন চ্যালেঞ্জ

বছরজুড়ে কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবে বিএনপি

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

বছরজুড়ে কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবে বিএনপি

জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করে সরকারের পদত্যাগ, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন, স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠন, ইভিএম পদ্ধতি বাতিলসহ নানা দাবিতে নতুন বছরজুড়ে রাজপথে থাকবে বিএনপি। এসব দাবি আদায়ে বিএনপি সমমনা দলগুলো নিয়ে ১১ জানুয়ারি থেকে মাঠে নামছে। নির্বাচন কমিশনের ঘোষণা অনুযায়ী ২০২৪ সালের প্রথম সপ্তাহে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে সংবিধানের বাইরে নির্বাচন করার কোনো সুযোগ নেই। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতোই বর্তমান সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ অবস্থায় নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায় করাই বিএনপির প্রধান চ্যালেঞ্জ।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, শুধু বিএনপি কেন, নতুন বছর দেশের জনগণের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। দেশের জন্য অনেক চ্যালেঞ্জের হবে। আমরা চাই এ বছর জনগণকে সঙ্গে নিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে। আমরা সেটা পারব। ১০ দফা দাবি আদায়ে আরও কঠোর হওয়ার          ইঙ্গিত দিয়ে এ নেতা বলেন, যত কঠিন পরিস্থিতি হোক, জনস্বার্থে আমরা যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত আছি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী সংসদ নির্বাচন আদায়ের জন্য আমাদের প্রধান মাধ্যম রাজপথ। আন্দোলনের মাধ্যমে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করেই বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে। বিএনপি নেতা-কর্মীরা বলছেন, যতই চ্যালেঞ্জ আসুক বিরোধী সব দলকে সঙ্গে নিয়ে চলমান আন্দোলনকে চূড়ান্ত সফলতায় নিয়ে যাওয়ার কোনো বিকল্প তাদের নেই। আন্দোলন দমাতে সরকার আরও কঠোর হবে- এটা ধরে নিয়েই তারা এগোতে চান। কারণ এবার ব্যর্থ হলে নেতা-কর্মীদের চরম মাসুল দিতে হতে পারে। রাজনীতির মাঠে টিকে থাকাই কঠিন হবে। জানা গেছে, সরকার পতনের ১০ দফা দাবি আদায়ে বছরের শুরুর দিকে শন্তিপূর্ণ কর্মসূচিতেই থাকবে বিএনপি। ১১ জানুয়ারি সব বিভাগীয় শহরে চার ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে। কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি না হলে কঠোর কর্মসূচিতে যাবে না দলটি। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার কয়েক মাস আগ থেকেই আন্দোলনের গতি বাড়ানো হবে। বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলকে বাদ দিয়ে সরকার একতরফা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিলেই চূড়ান্ত আন্দোলনে নামবে তারা। ১০ দফা তখন এক দফায় পরিণত হবে। বিএনপির সূত্র জানায়, নতুন বছরে দলটি সরকার পতনের আন্দোলনকে ধাপে ধাপে চূড়ান্ত রূপ দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে। সর্বাত্মক কর্মসূচি নিয়ে তারা মাঠে নামার আগে সবার মধ্যে ঐক্য আরও শক্তিশালী করতে চায়। সরকারের কোনো প্রলোভনে কেউ যাতে দলছুট না হয় সে জন্যও কর্মপরিকল্পনা করবে বিএনপি। প্রয়োজনে সমমনা অনেক ছোট দলের দাবি-দাওয়াতেও গুরুত্ব দেওয়ার চিন্তা আছে বিএনপিতে। আরও জানা গেছে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত আছে বিএনপির। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও বলা হচ্ছে, বর্তমান সরকারের অধীনেই হবে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ অবস্থায় দাবি আদায়ে রাজপথে সমাধান খুঁজছে বিএনপি। এ লক্ষ্যে নিজ দলের নেতা-কর্মীদের মনোবল দৃঢ় করাসহ সমমনা দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে সরকারবিরোধী বৃহত্তর ঐক্যে বছরজুড়ে মাঠে থাকবে বিএনপি। সব দলের সঙ্গে সংলাপ শেষে যেসব প্রস্তাব আসবে তার সমন্বয়ে তৈরি হবে রাজপথের আন্দোলনের রূপরেখা। বিএনপির দায়িত্বশীলরা বলছেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগ যেভাবে আগেভাগেই হামলা ও মামলার পথে হাঁটছে, তাতে মাঠপর্যায়ে শক্ত অবস্থান নেওয়া ছাড়া সমাধান হবে না। সব সমস্যার সমাধান হবে রাজপথের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। সেটা মাথায় রেখেই প্রস্তুতি নিচ্ছেন দলের নেতা-কর্মীরা। এ জন্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নেতা-কর্মীদের চাঙা করতে শক্ত অবস্থান নিয়েছে দলটি। রাজনীতির মাঠে কোণঠাসা বিএনপির নেতা-কর্মীরা ইতোমধ্যে সক্রিয় হতে শুরু করেছেন রাজপথে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান লন্ডন থেকে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলছেন। অঙ্গ সংগঠনগুলোকেও সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী করা হচ্ছে। দল ও অঙ্গ সংগঠনের সর্বস্তরের কমিটি গঠন-পুনর্গঠনের কাজ সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছেন দলীয় হাইকমান্ড। আন্তর্জাতিক পর্যায়েও যোগাযোগ ও তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার বিষয়ে তারা পরিষ্কার মত ব্যক্ত করেছেন।

এ ব্যাপারে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে আগামীতে কোনো নির্বাচন হতে দেবে না বিএনপি। আগামী নির্বাচন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনেই হতে হবে। আর এসব হামলা-নির্যাতন করে আন্দোলন দমানো যাবে না।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর