সোমবার, ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

রমজানে ভোগ্যপণ্যের বাজারে স্বস্তির পাশে আছে শঙ্কাও

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

দেশের ভোগ্যপণ্যের অন্যতম পাইকার বাজার চাক্তাই খাতুনগঞ্জ। রমজানের কয়েক মাস আগেই অতি প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের পাইকারদের আনাগোনায় মাত্রাতিরিক্ত কর্মচঞ্চল থাকে এ বাজার। কিন্তু এবার রমজানের দুই মাসের চেয়ে কম সময় বাকি থাকলেও এখনো শুরু হয়নি রমজানকেন্দ্রিক পণ্যকে ঘিরে ব্যস্ততা। ব্যবসায়ীদের দাবি দ্রুত কর্মচঞ্চল হয়ে উঠবে এ বাজার। কিন্তু শঙ্কা করা হচ্ছে বিশ্বে খাদ্য সরবরাহ চেইন বিঘ্ন হওয়ার অজুহাতে ফের সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে কারসাজি চক্র। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, রমজানের অতি প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের পর্যাপ্ত এলসি খোলা হয়েছে। তাই রমজানে ঘাটতির অজুহাতে বাজার কারসাজির সুযোগ নেই।

চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ‘রমজানের অতি প্রয়োজনীয় পণ্যের পর্যাপ্ত এলসি খোলা হয়েছে। রমজানে কোনো পণ্যের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাবে না। তাই রমজানে প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের ঘাটতি হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই।’

চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, ‘রমজানকে সামনে রেখে করা এলসির পণ্য এখনো পুরোপুরিভাবে বাজারে আসেনি। আশা করছি কয়েকদিনের মধ্যেই তা পৌঁছবে। তখন পুরোদমে শুরু হবে রমজানের প্রয়োজনীয় পণ্যের বিক্রি।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘রমজানের জন্য প্রয়োজনীয় সব পণ্যের এলসি খোলা হয়েছে। রমজানে কোনো পণ্যের ঘাটতি থাকবে না। তাই বাজার কারসাজি হওয়ার সম্ভাবনাও নেই।’ প্রসঙ্গত, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং করোনা প্রাদুর্ভাব সময়ের পর থেকে বিশ্বের প্রধান খাদ্য উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে ‘ফুড ন্যাশনালিজম’ বেড়েছে ব্যাপক হারে। চীন, তুরস্ক, ইরান, ইউক্রেন, পাকিস্তান, লেবানন, আলজেরিয়ার মতো খাদ্য উৎপাদনকারী দেশগুলো পণ্য রপ্তানি কমিয়ে দিয়েছে। আবার অনেক দেশ রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে গত কয়েক মাস ধরে ঊর্ধŸমুখী ভোজ্য তেল, চিনি, পিঁয়াজ, ছোলা এবং খেজুরসহ নানা পণ্যের দাম। বিশ্বে খাদ্য সরবরাহের চেইন বিঘ্ন হওয়ার প্রভাব পড়েছে দেশের অন্যতম পাইকার বাজার খাতুনগঞ্জ, চাক্তাই এবং আসাদগঞ্জের স্বাভাবিক চিত্রে। বিগত সময়ে রমজানের আগেই দেশের ব্যস্ততম এ পাইকার বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতাদের কর্ম ব্যস্ততা থাকলেও এবারের চিত্র একেবারে ভিন্ন। আর দেড় মাস পরই আসছে রমজান। দেশের বাজার সংস্কৃতিতে রমজানের আগেই বাজার কারসাজির অভিযোগ দিনের রেওয়াজে। তাই বিশ্বে খাদ্য সরবরাহ চেইন বিঘ্ন হওয়ার অজুহাতে রমজানে ভোজ্যতেল, পিঁয়াজ, চিনি, ছোলা, খেজুরসহ অতি প্রয়োজনীয় পণ্যের কারসাজির শঙ্কা করা হচ্ছে। তবে রমজানকে নিয়ে স্বস্তির খবর দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, রমজানকে সামনে রেখে দেশে পাঁচটি ভোগ্যপণ্যের ঋণপত্র (এলসি) স্বাভাবিক রাখা হয়েছে। পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে ভোজ্য তেল, পিঁয়াজ, চিনি, ছোলা এবং খেজুর। সম্প্রতি বৃদ্ধি পেয়েছে এসব পণ্যের এলসির পরিমাণও। গত জানুয়ারিতে চিনির এলসি খোলা হয়েছে ৫ লাখ ৬৫ হাজার ৯৪১ মে. টন। গত জানুয়ারিতে যা ছিল ৫ লাখ ১১ হাজার ৪৯২ মে. টন। একই সময়ে ভোজ্য তেলের এলসি খোলা হয় ৩ লাখ ৬৫ হাজার ৯৪১ মে. টন। গত জানুয়ারিতে যা ছিল ৩ লাখ ৫২ হাজার ৯৫৯ মে. টন। ২ লাখ ৬৫ হাজার ৫৬৬ মে. টন ছোলার এলসির বিপরীত গত বছর জানুয়ারিতে এলসি খোলা হয় ২ লাখ ২৪ হাজার ৫৬৬ মে. টন। এ বছর জানুয়ারিতে পিঁয়াজ এলসি হয় ৪২ হাজার ৫৬২ মে. টন এবং খেজুর এলসি হয় ২৯ হাজার ৪৮১ মে. টন।

সর্বশেষ খবর