শিরোনাম
মঙ্গলবার, ২১ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

অনুমতি ছাড়াই জরায়ু ক্যান্সার ভ্যাকসিন বুথ!

নিজস্ব প্রতিবেদক

জরায়ুর ক্যান্সারের টিকা নিয়ে প্রতারণার মূল হোতা হিমেল সিদ্দিক ওরফে আবুবক্কর সিদ্দিক হিমেলকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। রবিবার রাতে ঢাকার কেরানীগঞ্জে শুভাঢ্যা থেকে তাকে গ্রেফতার করেন ডিবির তেজগাঁও বিভাগের মোহাম্মদপুর জোনাল টিমের সদস্যরা। পরে আদালতের নির্দেশে দুই দিনের রিমান্ডে নেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। অন্যদিকে, পূর্বানুমতি ছাড়া ভ্যাকসিনেশন প্রোগ্রাম স্কুল-কলেজে না করার জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরকে চিঠি দিয়েছে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর। চিঠিতে রাজধানীর দারুস সালাম ও মিরপুর এলাকায় স্কুলের ছাত্রীদের জব্দ করা ভ্যাকসিন দিয়ে এ আর খান ফাউন্ডেশন ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রমের প্রমাণ পাওয়া গেছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। জানা গেছে, গতকাল মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক কমল বরাল গ্রেফতার হিমেলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শাকিল আহমেদ দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। অন্যদিকে, গ্রেফতার হিমেলের ঘনিষ্ঠ সহযোগী সাইফুল ইসলাম শিপন আদালতে নকল ভ্যাকসিনের ব্যাপারে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমি বিষয়টি অবগত নই। তবে আরও একজনের কাছে শুনেছি। এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে মন্তব্য করা যাবে। চাঞ্চল্যকর এ অপারেশনে নেতৃত্ব দেওয়া ডিবির তেজগাঁও বিভাগের মোহাম্মদপুর জোনাল টিমের অতিরিক্ত উপকমিশনার আনিচ উদ্দীন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ভয়ংকর প্রতারণা চলছিল কোমলমতি ছাত্রীসহ সাধারণ মানুষের সঙ্গে। ইতোমধেই আমরা অনেক তথ্য পেয়েছি। যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে। তবে আমরা নিশ্চিত যে, সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগের অনুমোদন ছাড়াই ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল চক্রটি। তিনি আরও বলেন, মূলহোতা হিমেল শুভাঢ্যা এলাকাতেই তার এক ফুপুর বাসায় আত্মগোপনে ছিলেন। তাকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। আশা করছি তার কাছ থেকে অনেক তথ্যই আদায় করা সম্ভব হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, এম আর খান ফাউন্ডেশনের এমডি আবু জাফরের এ প্রতারণায় জড়িত থাকার বিষয়ে তাদের কাছে অনেক তথ্য আসছে। তবে ভ্যাকসিন নকলের জন্য আরও কারা সম্পৃক্ত ছিল সে বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। দেশে আমদানির অনুমতি না থাকার পরও সারভারিক্স কীভাবে কাদের সহায়তায় নিয়ে আসত এ চক্রটি, তাও অনেক প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। স্পর্শকাতর এ কার্যক্রমে তদারকি প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকার বিষয়টি ভাবা হচ্ছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক কমল বরাল এ প্রতিবেদককে বলেন, আমরা অনেক তথ্যই পাচ্ছি। তবে নিশ্চিত না হয়ে এখনই কোনো মন্তব্য করতে চাচ্ছি না।

মাউশিকে চিঠি : মাউশি অধিদফতরের মহাপরিচালক বরাবর দেওয়া চিঠিতে (স্মারক নম্বর-ডিজিডিএ/প্রশা/৪০-১/০৮ (অংশ-১)/২৭৩) উল্লেখ করা হয়েছে, সারভারিক্স ভ্যাকসিন (Human Papillomavirus Vaccine) নকল পাওয়া গেছে। আনরেজিস্টার্ড Gene Vac-B ভ্যাকসিন (ঐধঢ়ধঃরঃরং ই ঠধপপরহব) ভায়াল হতে খালি ডায়ালে আংশিক ভরে Cerverix ভ্যাকসিনের নকল লেবেল লাগিয়ে একটি নকলবাজ চক্র নকল করেছে, যা গত ১৬ মার্চ আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কর্তৃক জব্দ করা হয়েছে। গত ১৮ মার্চ ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের কর্মকর্তারা এ আর খান ফাউন্ডেশন, দারুস সালাম, মিরপুর, ঢাকায় এ ভ্যাকসিনটি দিয়ে মেয়েদের ভ্যাকসিনেশন করা হতো তার আলামত পেয়েছে। উল্লেখ্য, গাজীপুর জেলায় বিভিন্ন স্কুল, কলেজে নকল ভ্যাকসিনের প্রচারণা করা হয়েছে বলে জানা গেছে। ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ ইউসুফ স্বাক্ষরিত এ চিঠিতে বলা হয়েছে, স্কুল, কলেজে বেসরকারি পর্যায়ে কোনো ধরনের ভ্যাকসিনেশন করার জন্য বলা হলে, এ বিষয়ে ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর/স্বাস্থ্য অধিদফতরের পূর্বানুমোদন থাকা আবশ্যক।

ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর/স্বাস্থ্য অধিদফতরের পূর্বানুমতি ছাড়া এ ধরনের ভ্যাকসিনেশন প্রোগ্রাম স্কুল-কলেজে না করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়।

সর্বশেষ খবর