সোমবার, ১০ এপ্রিল, ২০২৩ ০০:০০ টা
সংসদে এমপিরা

সংসদীয় রীতিনীতি ধ্বংস করে দিয়েছে সামরিক সরকার

নিজস্ব প্রতিবেদক

সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে সংসদের বিশেষ অধিবেশনে সরকারদলীয় সংসদ সদস্যরা বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের শুধু স্বাধীনতা দেননি। একটি সংবিধান দিয়েছিলেন। তিনি জাতীয় সংসদকে গণতন্ত্র ও উন্নয়নের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে সংসদের রীতিনীতি অনুশীলন এবং সংসদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করে দিয়ে গেছেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর আমরা দেখেছি, সংসদকে অকার্যকর করার জন্য সামরিক ও স্বৈরাচারী সরকার যত রকম পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন, তা-ই নিয়েছে। তারা সংসদীয় রীতিনীতি ধ্বংস করে দিয়েছে। তারা নির্বাচনকে বিতর্কিত করেছে। এই সংসদেই বঙ্গবন্ধু হত্যার ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ পাস হয়েছে। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সংসদের নতুন যাত্রা শুরু হয়। তারই নেতৃত্বে এই সংসদেই সেই ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল হয়েছে। জাতীয় সংসদের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে সংসদের বিশেষ অধিবেশনে গতকালের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উত্থাপিত প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তারা এসব কথা বলেন। বৈঠকে ধারবাহিকক্রম সভাপতিত্ব করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু।

আলোচনায় অংশ নেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক, প্রথম সংসদ ও চলতি সংসদের সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, বেসামরিক বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য, হুইপ ইকবালুর রহিম, সাবেক মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান, আওয়ামী লীগের প্রবীণ সদস্য শামীম ওসমান, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ, সরকারি দলের কাজী কেরামত আলী, সেলিম আলতাফ জর্জ, সাইমুম সারওয়ার কমল, ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল, গাজী মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ, আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরী, জাকিয়া তাবাসসুম, খান আহমেদ শুভ, শাহদাব আকবর, কাজী কানিজ ফাতেমা, বি এম কবিরুল হক, বেগম জাকিয়া পারভিন খানম, বেগম ফেরদৌসী ইসলাম, বেগম মনিরা সুলতানা প্রমুখ। আলোচনায় অংশ নিয়ে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদীয় গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছেন। শেখ হাসিনার আন্দোলনের মধ্য দিয়েই দেশে আবার সংসদীয় গণতন্ত্র ফিরে এসেছে। তিনিই সংসদীয় স্থায়ী কমিটিগুলোতে মন্ত্রীদের পরিবর্তে সংসদ সদস্যদের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছেন। ফলে সংসদের কাছে সরকারের জবাবদিহি বৃদ্ধি পেয়েছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথ অনুসরণ করছেন বলেই দেশে আজ যুগান্তকারী পরিবর্তন সম্ভব হয়েছে। শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, একসময় যারা বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলে আখ্যায়িত করেছিল, তারাই আজ বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বিশ্বদরবারে তুলে ধরছে। অথচ স্বাধীনতাবিরোধী চক্র বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর থেকে ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

সাবেক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, ‘আমাদের ভাবতে অবাক লাগে, স্বাধীনতা দিবসে স্বাধীনতাকে কটাক্ষ করে একটি ছোট শিশুকে ১০ টাকা দিয়ে মিথ্যা তথ্য দিতে দ্বিধা করেনি। শিশুশ্রম সবার দৃষ্টিগোচর হয়েছে।’ তিনি বলেন, আজকে বাংলাদেশ যে পর্যায়ে চলে গেছে, জনগণের কাছে ভোট চাওয়ার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। এর পরও কেন চাইতে হয়? চাইতে হয় সেই কারণে, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর একটা বিরাট প্রজন্ম ভুল তথ্য নিয়ে এই বাংলাদেশে বেড়ে উঠেছিল। তারা বঙ্গবন্ধুর ইতিহাস জানত না, এই দেশের কোনো ইতিহাসই সঠিকভাবে জানত না। যার কারণে এ প্রজন্ম আরও সমস্যার সৃষ্টি করছে।

ওসমানী মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি করেছেন : প্রথম ও চলতি সংসদের সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত হয়েছে। এই ইতিহাস বিকৃত করেছেন জেনারেল ওসমানী (জেনারেল এম এ জি ওসমানী) আমি এটা বলতে চাই। এই জেনারেল ওসমানীকে বঙ্গবন্ধু ভালোবাসতেন। তাকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন বীরউত্তম, বীরপ্রতীক খেতাব দেওয়ার। তিনি যাকে পেয়েছেন তাকে দিয়েছেন। আমাকে টেলিফোন করে বলেন, ‘আমি জনতা লীগ করেছি, আপনি আমার দলে থাকবেন।’ আমি বললাম, ‘আপনি কী বললেন? আমি তো দল করি।’ বলেন, ‘কোন দল করেন?’ আমি বললাম, ‘আমি তো আওয়ামী লীগ করি।’ বলেন, ‘আপনি আওয়ামী লীগ করেন, আওয়ামী লীগ কি আছে? এই জেনারেল ওসমানী আমাকে বলেন। ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হলো। কোনো প্রতিরোধ নেই, কিছু নেই। অনেকে জড়িত ছিল, জিয়াউর রহমান সরাসরি জড়িত ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া সামরিক বাহিনীর যারা সদস্য, কেউ প্রতিবাদ করেননি। বিশাল ষড়ন্ত্রের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়। তিনি বলেন, ‘৭৩-এর নির্বাচনে এক দিকে আওয়ামী লীগ আর সব অন্য দিকে। জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী দলগুলো, জাসদ, বাসদ মানে যারা বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র, সবাই মিলে সেদিন বিরুদ্ধে ছিল। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরে কোনো প্রতিবাদ হয়নি, আমরা অঝোরে কেঁদেছি। আমাদের হাতে কিছু ছিল না। কিছু করতে পারিনি। আমরা মুক্তিযোদ্ধা, আমাদের হাতিয়ার ছিল না। তাই আমরা বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর এই সংগঠনকে শক্তিশালী করেছি।’ কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে আজ অভূতপূর্ব উন্নয়ন ঘটেছে। আর গ্রাম শহর হয়ে গেছে। কেউ আর এ দেশে না খেয়ে থাকে না। দেশ আজ বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলায় রূপান্তরিত হতে চলেছে। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী বলেন, জাতির পিতা এ দেশের মানুষের আশা-আকাক্সক্ষা ও স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি স্বল্পতম সময়ের মধ্যে জাতিকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম সংবিধান উপহার দিয়েছিলেন। সাবেক মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বঙ্গবন্ধু দেশ স্বাধীন করে দেশের মানুষকে নিয়ে যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, আজকে তাঁর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের দেশ গঠনে কাজ করছেন। বাংলাদেশকে তিনি এমন এক জায়গায় নিয়ে গেছেন যে এই দেশকে এখন বিশ্বের অনেক দেশ অনুকরণ করে।

শামীম ওসমান বলেন, এবারের জাতীয় নির্বাচন নিয়ে নানা ধরনের চক্রান্ত হচ্ছে। হত্যার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। নানা ধরনের হুমকি দেওয়া হচ্ছে অভিযোগ করে সংসদ সদস্য শামীম ওসমান বলেন, এ দেশে আর ’৭৫ সাল হবে না। পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, সে কারণে এবারে হয়তো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথা শুনতে পারব না। প্রয়োজনে মৃত্যুর সঙ্গে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়ে রাস্তায় নামব। আমরা প্রয়োজনে ডাইরেক্ট অ্যাকশনে যেতে বাধ্য হব। এ সময় তিনি ১৯৭৫-পরবর্তী ঘটনার মর্মস্পর্শী আবেগময় বিবরণ দেন। পরে দেশে ফেরা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার দুরবস্থার কথা তুলে ধরেন। শামীম ওসমান বলেন, ৭৫-এর পর এক সময় আমরা এক বেলা খেয়ে থেকেছি, আমার মায়ের হুংকারে বঙ্গবন্ধুর খুনিরা নড়ে গেছিল। আমরা শেখ হাসিনার চোখের জলের কথা ভুলে যাইনি।’

সর্বশেষ খবর