রবিবার, ২৮ মে, ২০১৭ ০০:০০ টা

মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় চ্যালেঞ্জসমূহ

মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় চ্যালেঞ্জসমূহ

গোলটেবিল বৈঠকে সমাজের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। এতে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম

ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের (ইডব্লিউএমজি) কনফারেন্স রুমে ঋতু প্রকল্পের আওতাধীন মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা প্লাটফরম ও বাংলাদেশ প্রতিদিনের উদ্যোগে এবং সিমাভি, রেড অরেঞ্জ, টিএনও, বিএনপিএস ও ডরপের সহযোগিতায় এবং নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের সহায়তায় আয়োজিত হয় ‘ঋতুকালীন স্বাস্থ্য নিশ্চিতে বাধা ও এর ভবিষ্যৎ : সরকারি-বেসরকারি-ব্যক্তিমালিকানাধীন খাতের ভূমিকা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক। বৈঠকের চুম্বকাংশ তুলে ধরেছেন তানিয়া তুষ্টি, আবদুল কাদের ও সাইফ ইমন।  ছবি তুলেছেন রোহেত রাজীব।

 

মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব তুলে ধরতে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে

ড. জাহাঙ্গীর হোসেন

পরিচালক : মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতর

জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ঋতু বিষয়টি সম্পৃক্ত। বেশি গুরুত্বপূর্ণ যখন কোনো মেয়ে ভ্রমণে থাকে। তাই এর গুরুত্ব জনসাধারণের কাছে তুলে ধরে সচেতনতা বাড়াতে হবে। এ লক্ষ্যে প্রতি বছর ২৮ মে ‘মাসিক দিবস’ পালিত হয়ে আসছে। ‘জেনারেটিং জেনারেশন ব্রেক থ্রো’ নামের একটি প্রকল্প আমরা শুরু করেছি; যার প্রজাপতির মতো দুটি পাখা রয়েছে। একটি পাখা কাজ করছে সেক্সুয়াল অ্যান্ড রিপ্রোডাকটিভ স্বাস্থ্য নিয়ে। এর আওতায় স্কুলগুলোয় ছেলেমেয়েদের আলাদা কমনরুম ও হোস্টেল সুবিধা নিশ্চিত করা এবং মেয়েদের জন্য স্পেশাল ইনসেপটিভ ইত্যাদি রয়েছে। এ ছাড়া কাউন্সিলর নিয়োগ সরকারের বিবেচনাধীন আছে। আশা করছি শিগগিরই ঢাকা শহরের আশপাশে ১০টি স্কুুলের জন্য কাউন্সিলর নিয়োগ দেওয়া যাবে।

 

 

 

মেনস্ট্রুয়াল হাইজিন বিষয়টি মেনস্ট্রুয়াল হেলথেরই একটি অংশ

ড. খায়রুল ইসলাম

কান্ট্রি ডিরেক্টর : ওয়াটার এইড

সচরাচর মাসিক নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করি না। কিন্তু কয়েক বছর ধরেই মেয়েদের স্বাস্থ্য সচেতনতায় আমরা মে মাসের ২৮ তারিখ ‘মাসিক দিবস’ পালন করে আসছি। প্রতি বছর থাকছে ভিন্ন ভিন্ন স্লোগান। এ ক্ষেত্রে নারী ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে অন্যান্য সরকারি প্রতিষ্ঠান ভূমিকা রাখতে পারে। মেনস্ট্রুয়াল হাইজিন বিষয়টি কিন্তু মেনস্ট্রুয়াল হেলথেরই একটি অংশ। তাই হাইজিন বা স্বাস্থ্যসম্মত হওয়ার বিষয়টি যেন পরিচ্ছন্নতার মাধ্যমেই হয়। সেটা কাপড় কিংবা প্যাড যে কোনোটি দিয়ে হতে পারে। যে মেয়েটি ঋতুকালে কাপড় ব্যবহার করছে তা পরিচ্ছন্নভাবে শুকানো, এর সঠিক ব্যবহার, প্যাড ব্যবহার করলে তা সাশ্রয়ী কিনা, কত সময় ধরে ব্যবহার করছে ইত্যাদি বিষয়কে প্রাধান্য দেওয়া উচিত।

 

 

 

নানা কুসংস্কারে ৮৬ ভাগ মেয়ে স্কুল বা বাইরে থাকলে প্যাড পরিবর্তন করে না

অলোক কুমার মজুমদার

কান্ট্রি কো-অর্ডিনেটর : ওয়াস অ্যালায়েন্স বাংলাদেশ

মাসিক কোনো রোগ নয়। এটি একটি প্রকৃতি-প্রদত্ত স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। যদি ঋতু না থাকত আমরা পৃথিবীতে আসতাম না। এ ক্ষেত্রে অনেকেই কাপড় ব্যবহার করে। আবার সেটি ঠিকভাবে শুকাতে পারে না। জীবাণুর সংক্রমণ থেকে যায়। এতে রিপ্রোডাকটিভ সিস্টেম ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে। তাই মূল বিষয় হলো পরিচ্ছন্নতা। যেমন একটা প্যাড ছয় ঘণ্টা পর পরিবর্তন করতে হয়। নানা কুসংস্কারে থেকে ৮৬ ভাগ মেয়ে স্কুল বা বাইরে থাকলে প্যাড পরিবর্তন করে না। তাকে মাসিকের সময় বিভিন্ন খাবারে নিষেধাজ্ঞা মানতে হয়। আবার এ সময় তাকে বাসার বাইরে বের হতে দেওয়া হয় না। পুকুরে গোসল করতে দেওয়া হয় না। এমন সব ভ্রান্ত ধারণা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।

 

 

 

মাসিকের মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার উপেক্ষিত রয়ে গেছে

কাজী সুরাইয়া সুলতানা

নির্বাহী পরিচালক : আরএইচ স্টেপ

একটি মেয়ের জন্মগ্রহণের পর থেকে ‘মাসিক’ অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। মাসিকের মাধ্যমে পৃথিবী গতি পেয়েছে। অথচ তা উপেক্ষিতই রয়ে গেছে। তবে বিষয়টি যে আমরা বুঝতে পেরেছি এটা অনেক বড় ব্যাপার। পৃথিবীতে বিভিন্ন দিবস পালন করা হয়। কিন্তু মাসিক নিয়ে কোনো কার্যক্রম তেমন চোখে পড়ে না। সুতরাং অতিগুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়টির প্রতি বিশেষ দৃষ্টিপাত করতে আমরা ২৮ মে ‘মাসিক দিবস’ পালন করি। তবে মনে রাখতে হবে, সমাজে সুস্থ নারীর পাশাপাশি অনেক ডিজঅ্যাবল নারীও রয়েছে। আমাদের সবাইকে নিয়েই কাজ করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন একটা প্লাটফরম; যার মাধ্যমে আমাদের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাব। মাসিকবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে সক্ষম হব।

 

 

 

মাসিকের অব্যবস্থাপনার কারণে নারীর প্রজননক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়

ইরেন বার্টেডলস

কমিউনিকেশন অ্যাডভাইজার : রেড অরেঞ্জ

মাসিক কোনো রোগ নয় বরং রিপ্রোডাকটিভ সিস্টেম বা জন্মধারা পদ্ধতির একটি প্রক্রিয়া। এই স্বাভাবিক প্রক্রিয়াটি সমাজে ট্যাবুতে পরিণত হয়েছে। ট্যাবু মানে হলো তথ্যের অভাব। যখন কোনো প্রচলিত নিয়ম বা সংস্কার ট্যাবুতে পরিণত হয় তার সঙ্গে কোনো না কোনো ভুল তথ্য জড়িয়ে যায়। নির্দিষ্ট কোনো সূত্র না থাকলে আমরা কখনই নিশ্চিতভাবে বলতে পারব না যে, কোনো একটি তথ্য সম্পূর্ণ ভুল। মাসিককে জনস্বাস্থ্যের অন্তর্গত একটি বিষয় হিসেবে আমাদের আলোচনা করতে হবে। মাসিকের অব্যবস্থাপনার জন্য নারীদের প্রজননক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নারীরা নানা রোগে আক্রান্ত হন। তাই মাসিককে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বা কর্মক্ষেত্রসহ সব জায়গায়  স্বাভাবিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।

 

 

 

ঋতুকে মেয়েলি বিষয়ে না রেখে প্রয়োজনীয় বিষয় হিসেবেই ভাবতে শিখি

শাহনাজ সুমী

উপপরিচালক : বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ

অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমি শুধু একটি বিষয় বলতে চাই। কয়েক দিন আগে রাজারবাগ পুলিশ লাইনস স্কুুল অ্যান্ড কলেজে গিয়ে দেখা গেল, এখনো মেয়েদের জন্য আলাদা স্যানিটেশন নেই। শিক্ষকদের ব্যবহারের বাথরুম মেয়েরাও ব্যবহার করছে। প্রায় ৫০ ভাগ মেয়ে শিক্ষার্থীর স্কুলে এমন বৈষম্য মানাটা সত্যিই কঠিন। আমার মূল কথা হলো, এই ঋতুস্রাব ইস্যুটি শুধু স্বাস্থসেবা, ন্যাপকিন প্যাড কিংবা স্যানিটেশনের সঙ্গেই জড়িত নয়; এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে একেকজন মেয়ের জীবন, যা জাতির জীবনে চরমভাবে প্রভাব ফেলে। সাংসারিক বাজেটে অনেক কিছুর সঙ্গে প্যাডের বাজেট থাকাও জরুরি। এ বিষয়টিকে শুধু মেয়েলি বিষয়ে না রেখে প্রয়োজনীয় বিষয় হিসেবেই ভাবতে শিখি।

 

 

 

গ্রামের মেয়েদের পক্ষে প্রতি মাসে প্যাড কেনার ব্যয় বহন করা কঠিন

মোহাম্মদ যোবায়ের হাসান

পরিচালক (গবেষণা ও পরিকল্পনা) : ডরপ

মাসিক নিয়ে কাজ করার সময় অনেককে বিষয়টি সম্পর্কে জানাতে পেরেছি। এছাড়া প্রত্যন্ত অঞ্চলেও এ বার্তা পৌঁছে যাচ্ছে। কাজ করতে গিয়ে দেখেছি গ্রামের মেয়েদের পক্ষে প্রতি মাসে প্যাড কেনার ব্যয় বহন কতটা কঠিন। তা ছাড়া বিক্রয় কেন্দ্র থেকে যাচাই করে আনাটাও তাদের জন্য কিছুটা লজ্জার। দেখা যায়, মেয়েদের যদি ন্যূনতম কিছু আয়ের ব্যবস্থা না থাকে তবে প্রতি মাসেই ন্যাপকিন কেনা আর হয়ে ওঠে না। সে জন্য তাদের আয়ের বিষয়টি কীভাবে নিশ্চিত করা যায় সরকারি ও বেসরকারিভাবে তা চিন্তা করতে হবে। তবেই আমার মনে হয় স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নিজেদের জন্য এই ব্যয় বহন করা তাদের জন্য কষ্টের হবে না। তারাও সচেতনতা অবলম্বন করতে পিছপা হবে না।

 

 

 

ন্যাপকিনের দাম সাধ্যের মধ্যে আনতে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে

মিজানুর রহমান

বিপণন ব্যবস্থাপক : এসএমসি

অনেকেই প্যাডের দামের ব্যাপারে ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকার কথা বলছেন। কিন্তু এর দামটা  নির্ভর করছে বেশ কিছু বিষয়ের ওপর। যেমন উন্নতমানের ন্যাপকিন তৈরিতে ১২ থেকে ১৫টি কাঁচামাল দেশের বাইরে থেকে আসে। সেই কাঁচামাল কারখানা পর্যন্ত পৌঁছতে ৭০% শুধু ভ্যাট ও ট্যাক্স হিসেবে জমা দিতে হয়। তারপর এর প্রস্তুতকরণ, বাজারজাতকরণ ইত্যাদি বিষয় অতিক্রম করে ক্রেতার হাত পর্যন্ত পৌঁছে। এ কারণে ন্যাপকিনের দাম সবার সাধ্যের মধ্যে আনতে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। সবার সমন্বয়ে বাংলাদেশের মানুষের মাঝে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। একই সঙ্গে স্বাস্থ্য সুরক্ষা শুধু প্যাডেই নয়, কাপড় ব্যবহার করেও সম্ভব। তবে তা স্বাস্থ্যসম্মত কিনা নিশ্চিত করতে হবে।

 

 

 

আগে মানুষ বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চাইলেও এখন অবস্থার পরিবর্তন ঘটছে

মো. কামরুল হাসান

বিজনেস ডিরেক্টর : এসিআই

অনেকেই বলছেন ন্যাপকিনের দাম যেন সবার সাধ্যের মধ্যে হয়। অনেকে দাবি করছেন প্রতিষ্ঠানগুলো শুধু প্রফিটের দিকটাই দেখে। তাই সবাইকে জানাতে চাচ্ছি, কোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান প্রফিটের জন্য বিজনেস করলেও প্রথম চার-পাঁচ বছর ভর্তুকি দেয়। এ ক্ষেত্রে আমরা আট বছর অতিক্রম করেছি। আমরা এক হাজার স্কুলে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করেছি। একটা সময় মানুষ বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চাইলেও এখন অবস্থার পরিবর্তন ঘটছে। সবাই কথা বলছে, উঠান বৈঠক হচ্ছে। আমরা গ্রামীণ সমাজে এ বিষয়ে আলোচনার চেষ্টা করি। এখন মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ছে। আর স্বাস্থ্য নিয়ে এখন কুসংস্কারও কমে যাচ্ছে দিন দিন। তাই প্রফিট থাকলেও সচেতনতা মুখ্য।

 

 

 

মেয়েরা বাধ্য হয়ে অনেক সময় অপরিষ্কার কাপড় ব্যবহার করে

ফারহানা সুলতানা

রিসার্চ ইনভেস্টিগেটর : আইসিডিডিআরবি

আমরা ছেলেমেয়ে উভয়কে নিয়েই একটি ফরমেটিভ রিসার্চ করছি। সেখানে ছেলেরা বলেছিল, তাদের যখন দাড়ি কিংবা গোঁফ ওঠে তখন সবার থেকে আলাদা করে দেওয়া হয়। তাদের নানি, দাদি কিংবা বোনেরা খুব একটা কথা বলতে চায় না। তেমনি মেয়েদের নিয়েও রিসার্চ করেছি। মেয়েদের নিয়ে করেছি লাইভ স্কিলস। সেখানে একটি মেয়ে যেন তার পছন্দ-অপছন্দ বলতে পারে। সেখানে এসএমসি আমাদের অনেক সহযোগিতা করেছে। মেয়েরা আমাদের কাছে স্যানিটারি প্যাড চেয়েছিল। এটি বাজার থেকে কেনা বা বাড়ির কাউকে দিয়ে কিনে আনা তাদের পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না। একটা আড়ষ্টতা কাজ করে। তাই বাধ্য হয়ে অনেক সময় অপরিষ্কার কাপড় ব্যবহার করে।

 

 

 

সচেতনতা বাড়াতে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে

ফারথিবা রাহাত খান

এসএনভি বাংলাদেশ

নারী স্বাস্থ্য সচেতনতায় ঋতুকালীন বিষয় সামনে রেখে অনেক এনজিও ও প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান নানা রকম উদ্যোগী ভূমিকা নিয়েছে। তারা মাঠ পর্যায়ে মেয়েদের সচেতন করার পাশাপাশি প্যাড সরবরাহের কাজও করছে। কিন্তু সবচেয়ে ভালো হয় সবাই মিলে যদি একসঙ্গে কাজ করা যায়। যদিও একসঙ্গে চলার সিদ্ধান্তে আসা যথেষ্ট কষ্টের। এর পাশাপাশি বলব, স্কয়ার কোম্পানি বাজারে এমন কিছু প্যাড এনেছে যা টয়লেটে ফেলা যায়। ব্যবহারের সময় লিক হয় না। কিন্তু সমস্যা দেখা দেয় অন্যখানে। অনেকের দাবি আমাদের দেশে যে প্যাড কিনতে পাওয়া যায় তা তুলনামূলক দামি। সে ক্ষেত্রে যদি আমরা একটু সচেতন হই এর দাম হয়তো আরও কমানো সম্ভব হবে।

 

 

 

প্যাডের জন্য পরিবারের আলাদা বাজেট থাকতে হবে

ডা. কল্লোল চৌধুরী

যুগ্ম-পরিচালক : দুস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্র

আমার কাছে সত্যিই অস্বস্তি লাগে যখন দেখি ৪০ মিলিয়ন মানুষের জন্য একটি সাশ্রয়ী ন্যাপকিন খুঁজে বের করব, আমার বাবা-মা তার জন্য মাসের পর মাস বাজেট রাখবেন, দরকারটি অনেকটা মেয়েলি এবং মেয়েরা উপার্জন করে না। সত্যিই অবাক করার মতো বিষয়, এভাবে আসলে কতদূর পর্যন্ত এগোতে থাকবে? ইউনাইটেড বডি রাইটসের অভিজ্ঞতার আলোকে বলতে চাই, মানুষের আচরণ তখনই বদলায় যখন সে এটা নিজের মধ্যে নেয়। আর নেওয়াটা তার জ্ঞানের মধ্যে আসে শুধু দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের মাধ্যমে। যখন পরিবারে এর জন্য আলাদা বাজেট থাকবে তখন আর সমস্যা হবে না। অনেক স্কুল-কলেজে স্যানিটারি ব্যবস্থা থাকলেও তা ব্যবহারের অনুপযুক্ত। তাই সেদিকেও নজর দিতে হবে।

 

 

 

প্রতিবন্ধীদের সচেতনতা বাড়াতে শিক্ষকদের ভূমিকা রাখতে হবে

সালমা মাহবুব

সাধারণ সম্পাদক : বি স্ক্যান

মাসিকের সময় শুধু সক্ষম মেয়েদের নিয়ে কাজ করলে হবে না, প্রতিবন্ধী মেয়েদের নিয়েও করতে হবে। প্রতিবন্ধীরা নানা ধরনের হয়ে থাকে। তাই তাদের চাহিদাও নানা রকমের। কিন্তু বাস্তবতা খুবই ভয়াবহ। নানাভাবে তারা অবহেলিত। স্কুলগুলোয় প্রতিবন্ধীদের জন্য উপযোগী কোনো টয়লেটের ব্যবস্থা নেই। অনেক মা ঠিকমতো জানেন না কীভাবে এসব সন্তানকে শিক্ষা দেবেন। তাই শিক্ষকদের সচেতন হতে হবে। প্রতিবন্ধীদের কীভাবে সচেতন করতে হবে তা শিক্ষকদেরই হ্যান্ডেল করতে হবে। এ ছাড়া প্রতিবন্ধীদের আর্থিক সমস্যা থাকে। তাদের জন্য কোনো রকম প্রণোদনার ব্যবস্থা করা যায় কিনা তা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। প্রতিবন্ধীদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে।

 

 

 

শুধু পরিবেশবান্ধব নয়, প্যাড পাওয়া যাবে সবার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে

মাহবুবা হক কুমকুম

প্রোগ্রাম ম্যানেজার : সিমাভি

পরিবেশের কথা মাথায় রেখে ঋতু প্রকল্পের অংশীদার নেদারল্যান্ডস-ভিত্তিক সংগঠন টিএনও পরিবেশবান্ধব স্যানিটারি প্যাডের টেকনোলজি উদ্ভাবন করেছে। এ প্রকল্পটি বাংলাদেশে নিয়ে আসার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। বাংলাদেশে এই পরিবেশবান্ধব (বায়োডিগ্রেডেবল) স্যানিটারি প্যাড প্রডাকশন করবে সোশ্যাল মার্কেটিং কোম্পানি (এসএমসি)। আগামী বছরের মাঝামাঝি থেকে এটি বাজারে পাওয়া যাবে বলে আশা করছি। শুধু পরিবেশের কথা নয়, একই সঙ্গে মেয়েদের ক্রয়ক্ষমতাকেও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে যেন এই প্যাডের মূল্য নির্ধারণ করা যায় সে বিষয়ে এসএমসির সঙ্গে আমাদের আলোচনা চলছে। এতে প্রতিটি নারী সচেতনতা অবলম্বনে সমর্থ হবে।

 

 

 

গার্মেন্ট সেক্টরের নারীদের মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় সচেতন করতে হবে

আকলিমা খাতুন

হাইজেনিক স্পেশালিস্ট : ডব্লিউএসইউপি বাংলাদেশ

মেয়েদের মাসিক সচেতনতাবিষয়ক কাজ করতে এসে দেখলাম গার্মেন্ট সেক্টরকে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। যেখানে ৮০% কর্মরত নারী আছেন এই পিরিয়ড অতিবাহিত করেন। তাই আমার মনে হয় তাদের সচেতনতার জন্য কীভাবে কাজ করা যায় সেই বিষয়টিতে গুরুত্ব দিতে হবে। আর একটি বিষয় আছে। সেটা হলো মেয়েদের পিরিয়ড বা মাসিকের সময়কে শরীর খারাপ বলে উপস্থাপন করা হয়। অথচ এটি সুস্থতার একটি চলমান অংশ। একে অসুস্থতা না বলে সঠিক নামে পরিচিত করা উচিত। তাই কেউ এ সময় নিজেকে অসুস্থ না বলে পিরিয়ড বা মাসিক চলছে বলতে পারে। অনেক সময় পিরিয়ডের উপসর্গকেও সমস্যা বলা হয়, একে কোনোভাবেই সমস্যা না বলে উপসর্গ বলার পক্ষে।

 

 

 

চরাঞ্চলের মেয়েরা ঋতুস্রাব সম্পর্কে সচেতনতা ও অভ্যাস দুটি বিষয়েই অজ্ঞ

শেখ মো. জুনায়েদ আলী

নির্বাহী পরিচালক : স্লপবি

আমরা মূলত চরাঞ্চলের মানুষ নিয়ে কাজ করি। এখানকার মেয়েরা ঋতুস্রাব সম্পর্কে সচেতনতা ও অভ্যাস দুটি বিষয়েই অজ্ঞ। তারা আধুনিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত। যতক্ষণ পর্যন্ত ঋতুস্রাব সম্পর্কে সঠিক নির্দেশনা এবং আধুনিক সুবিধাগুলো নিশ্চিত করা না যাচ্ছে তত দিন পর্যন্ত আসলে তাদের মাঝে অভ্যাসটাও গড়ে তোলা সম্ভব হবে না। তাই আমরা সেখানে একটি ‘ওমেন বাথিং চেম্বার’ খুলেছিলাম। সেখানে মেয়েরা নিজেদের সঠিকভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে গোসল করতে পারত। এটি ছিল তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য বিরাট সুবিধা। তা ছাড়া পরিচ্ছন্নতার প্রথম ধাপও এটি। মেয়েরা শুধু গোসলই নয়, নানাবিধ শারীরিক সমস্যা, ঋতুস্রাব সম্পর্কে সচেতনতা এবং নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সম্পর্কে শিক্ষা পেত।

 

 

 

সচেতনতা তৈরিতে একসঙ্গে কাজ করলে উদ্যোগ ফলপ্রসূ হবে

ডা. আয়েশা সিদ্দিকা

টিম লিডার : ইউনাইটেড ফর বডি রাইটস অ্যালায়েন্স বাংলাদেশ

ঋতু বিষয়ে সচেতনতা আমাদের সমাজের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের মাঝে এই বিষয়টির গুরুত্ব বোঝাতে হবে। আমরা ইউনাইটেড ফর বডি রাইটস অ্যালায়েন্স বাংলাদেশ বেশ কিছু ইস্যুর প্রতি জোর দিচ্ছি। আমরা ‘মি অ্যান্ড মাই ওয়ার্ল্ড’ নামে একটি প্রকল্প শুরু করছি। এর মাধ্যমে ‘সেক্সুয়াল এডুকেশন’ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। এ বছর ১২টি স্কুলে কাজ করছি। তবে আমার মনে হয় সবাই যে যার মতো কাজ করে যাওয়ার চেয়ে একসঙ্গে মিলে যদি কাজ করা যায় তাহলে উদ্দেশ্যটি বেশি ফলপ্রসূ হবে। আমি বলতে চাচ্ছি ঋতু, এসএমসি, আইসিডিডিআরবি এবং আরও যারা আছে সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করলে আরও ভালো হবে।

 

 

 

গণ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়টি তুলে ধরতে হবে

নাকিব রাজীব আহমেদ

হেড অব প্রোগ্রামস : রেড অরেঞ্জ মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশন

ঋতু প্রকল্পের অন্যতম প্রধান বিষয় জাতীয় পর্যায়ে গণ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যেমন টিভি, রেডিও, সংবাদপত্র, ইন্টারনেট ও ফেসবুক ব্যবহার করে মাসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার বিষয়টি তুলে ধরা। যাতে সবাই বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করে এবং কথা বলে। এ ছাড়া সবার মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির কারণে যাতে এ বিষয়টির গুরুত্ব সুস্পষ্ট হয়। রেড অরেঞ্জ মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেসন্স ঋতু প্রকল্পের যোগাযোগ ও কৌশলগত সহযোগী হিসেবে প্রকল্পের প্রাথমিক ও সব স্টেকহোল্ডারের জন্য উপযোগী মেসেজ সবার কাছে পৌঁছানোর জন্য বিভিন্ন মাধ্যম ব্যবহার করছে। এ ক্ষেত্রে মা-বাবা কিংবা শিক্ষক সবার জন্য মাসিক ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের জন্য জরুরি প্রকল্প নিশ্চিত করবে।

সর্বশেষ খবর