বৃহস্পতিবার, ১৯ মে, ২০২২ ০০:০০ টা
বাজেট ২০২২-২৩ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী

বৈদেশিক ঋণে রক্ষণশীল নীতি গ্রহণের নির্দেশ

আমাদের রিজার্ভ এখনো বেশি শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। এখনো পাঁচ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো রিজার্ভ আমাদের রয়েছে। কিন্তু এ বিষয়ে নজর রাখতে হবে। সতর্ক থাকতে হবে। -প্রধানমন্ত্রী

মানিক মুনতাসির

করোনা-উত্তর বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট মাথায় রেখে এবারের বাজেট প্রণয়ন করছে সরকার। বিলাসী ও খাদ্যপণ্য আমদানি নিরুসাহিত করা হচ্ছে ডলার খরচ কমাতে। অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়িয়ে খাদ্য চাহিদা মেটাতে কৃষি খাতে বিনিয়োগ ও বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে। ইতোমধ্যে সরকারের চলতি হিসাবে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের চাপও বেড়েছে। মেগা প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বিপুল পরিমাণ মূলধনী যন্ত্রপাতিসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আমদানি করতে হচ্ছে।

একইভাবে মেগা প্রকল্পগুলোয় কর্মরত বিদেশি প্রযুক্তিবিদ, প্রকৌশলী ও অন্য কর্মীদের বেতন-ভাতা পরিশোধেও বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা বিদেশে চলে যাচ্ছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও কমতে শুরু করেছে। ডলারের বিপরীতে টাকার মান ক্রমাগতভাবে কমছে। ফলে সরকারের বৈদেশিক বাণিজ্যেও ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এমতাবস্থায় আসন্ন ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে বৈদেশিক ঋণের ক্ষেত্রে রক্ষণশীল নীতি গ্রহণের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশেষ করে দ্বিপক্ষীয় ঋণ কীভাবে কমিয়ে আনা যায় সে বিষয়ে অর্থ বিভাগ ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

অর্থ বিভাগের একটি সূত্র জানায়, বাজেট প্রণয়নের প্রস্তুতিকে সামনে রেখে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের রিজার্ভ এখনো বেশি শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। এখনো পাঁচ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর মতো রিজার্ভ আমাদের রয়েছে। কিন্তু এ বিষয়ে নজর রাখতে হবে। সতর্ক থাকতে হবে। বৈদেশিক ঋণের ব্যাপারে সুদৃঢ় নীতি গ্রহণ করতে হবে। ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমছে। এটাও শক্তভাবে খেয়াল রাখতে হবে। টাকার অবমূল্যায়ন ভয়াবহ বিপদও ডেকে আনতে পারে। এটা ঠেকাতে হবে। এ জন্য আসছে বাজেটে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

পাশাপাশি বিশ্বব্যাংক, এডিবি, আইএমএফের মতো সংস্থাগুলোর কাছ থেকে নমনীয় সুদ হারের ঋণ পাওয়া যায় সেদিকে নজর রাখতে হবে। উচ্চ সুদের ঋণ এড়িয়ে চলতে হবে। দ্বিপক্ষীয় যেসব ঋণ রয়েছে সেগুলো যত কম নেওয়া যায় এমন নীতি গ্রহণ করতে হবে আসন্ন বাজেটে। সূত্র জানায়, শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি দেউলিয়া হওয়ার পর বাংলাদেশের বাজেটে ঋণ ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়েছে। পাশাপাশি ‘বিদেশি ঋণ’ ঝুঁকি সীমার নিচে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যদিও শ্রীলঙ্কার এ সংকটকে বাংলাদেশের জন্য প্রযোজ্য নয় বলে নানা ধরনের ব্যাখ্যা দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। ফলে বৈদেশিক ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রাও কিছুটা কমিয়ে আনা হয়েছে। তবে এতে বাজেট ঘাটতি আরও বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এদিকে চলতি অর্থবছরে (২০২১-২২) বাজেট ঘাটতি হলো ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৮২ কোটি টাকা, যা পূরণে বৈদেশিক ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয় ১ লাখ ১ হাজার ২২৮ কোটি টাকা। একই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ খাত থেকে ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয় বাজেটে।

এ ছাড়া চলতি অর্থবছর বৈদেশিক ঋণ ও সুদ হিসাবে ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবে। যদিও বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণ নেওয়ার হার জিডিপির তুলনায় ১১ দশমিক ৯ শতাংশ। অথচ শ্রীলঙ্কায় ক্ষেত্রে এই হার ৪১ শতাংশ ও পাকিস্তানের বেলায় ৩৯ শতাংশ।

এ বছর ঋণ পরিশোধে বড় ধরনের চাপের মুখে পড়েছে অর্থ বিভাগ। কারণ অভ্যন্তরীণ খাত হিসেবে চিহ্নিত সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে গত কয়েক বছরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ঋণ নিয়েছে সরকার। ফলে ওই ঋণের সুদ পরিশোধের চাপ চলতি বাজেটে সৃষ্টি হয়েছে। সুদ পরিশোধ খাতে বরাদ্দের অতিরিক্ত ২ হাজার ৬৫৫ কোটি টাকা বেশি ব্যয় হবে। বছরের শুরুতে সুদ পরিশোধ বাবদ বরাদ্দ রাখা ছিল ৬৮ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা। এখন ৮০ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা গুনতে হবে। পাশাপাশি বৈদেশিক ঋণের সুদ পরিশোধের চাপও সামগ্রিকভাবে বেড়েছে।

সরকারের এমন সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক বলে স্বাগত জানিয়েছেন বিশ্বব্যাংকের (ঢাকা কার্যালয়) সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন। তিনি বলেছেন, বৈদেশিক ঋণ কমাতে সরকার যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে সেগুলো কার্যকর করতে পারলে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।  তবে সেটাই তাৎক্ষণিকভাবে পাওয়া যাবে না। এর জন্য কিছুটা সময়ের প্রয়োজন হবে বলে তিনি মনে করেন।

সর্বশেষ খবর